জাদুকাটা নদীর বুকে হাসির গল্প
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার জাদুকাটা নদীর পাড়ে বালুর বিস্তীর্ণ চরে দাঁড়িয়ে আছে এক অন্যরকম শৈশব। ছবি— শিহাব সরোয়ার শিপু, ফটোসাংবাদিক, দৈনিক যুগান্তর
শিহাব সরোয়ার শিপু, ফটোসাংবাদিক, দৈনিক যুগান্তর
প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:২১ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার জাদুকাটা নদীর পাড়ে বালুর বিস্তীর্ণ চরে দাঁড়িয়ে আছে এক অন্যরকম শৈশব। চারপাশে পাহাড়ের ছায়া, দূরে নদীর নীলচে পানি, আর তার মাঝেই বালুর ওপর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে কিছু শিশু—হাতভর্তি লাঠি, কাঁধে ভার, তবু মুখভর্তি হাসি।
এই শিশুরা কেউ লম্বা ডাল কাঁধে তুলে নিয়েছে খেলাচ্ছলে, কেউ মাটিতে বসে কাঠকুটো কুড়িয়ে রাখছে বস্তায়। কারও হাতে বাঁশের লাঠি, কারও সামনে ছোট্ট ঝুড়ি—সব মিলিয়ে যেন কাজ আর খেলার মাঝামাঝি এক জীবন। ভারি ডাল কাঁধে নিয়েও যে শিশুটি দাঁড়িয়ে আছে, তার চোখেমুখে ক্লান্তির চেয়ে বেশি ফুটে উঠেছে আনন্দ। মনে হয়, এই ভার তার কাছে বোঝা নয়, বরং দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক অংশ।
আরেক পাশে দেখা যায়, কয়েকজন শিশু বালুর ওপর গোল হয়ে বসে আছে। কেউ কাঠ ভাঙছে, কেউ ঝুড়িতে গুছিয়ে রাখছে। পাশেই একটি ছোট মেয়ে, গায়ে ওড়না জড়িয়ে, বসে বসে তাকিয়ে আছে—চোখে একরাশ কৌতূহল আর মুখে লাজুক হাসি। এই হাসির মধ্যেই লুকিয়ে আছে তাদের নির্ভার শৈশব, যেখানে অভাব আছে, কিন্তু আনন্দের ঘাটতি নেই।
ছবিগুলোর সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হলো—এই শিশুগুলোর মন খুলে হাসা। কাজের ফাঁকেই তারা হাসছে, একে অন্যের দিকে তাকিয়ে হাসছে, কখনো ক্যামেরার দিকে তাকিয়েও যেন বলছে—আমরাও আছি, আমাদেরও গল্প আছে। দারিদ্র্য, কঠিন বাস্তবতা কিংবা শ্রম—সবকিছুর মাঝেও তারা হারিয়ে ফেলেনি শৈশবের স্বাভাবিক উচ্ছ্বাস।
জাদুকাটা নদীর এই বালুচরে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়—শৈশব শুধু খেলনা বা বইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। কখনো কখনো শৈশব বয়ে চলে কাঁধের ওপর রাখা একটি ডালের সঙ্গে, বালুর ওপর খালি পায়ে হাঁটার সঙ্গে, কিংবা সহপাঠীর সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া একফোঁটা হাসির মধ্য দিয়ে।
এই ছবিগুলো কেবল কিছু মুহূর্ত নয়, এগুলো একেকটি জীবনের কথা বলে—যেখানে সংগ্রাম আছে, কিন্তু আছে প্রাণ খুলে বেঁচে থাকার সাহসও। জাদুকাটা নদীর পাড়ে তাই শুধু বালু আর জল নয়, ছড়িয়ে আছে শৈশবের অদম্য হাসি।
