সচিবের আশ্বাসে অনশন ভঙ্গ করলেন ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন ফল প্রত্যাশীরা
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ফলাফলে বৈষম্যের প্রতিবাদ ও সনদ প্রদানের দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। ছবি: যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
শিক্ষা সচিব রেহানা পারভীনের আশ্বাসে অনশন কর্মসূচি ভঙ্গ করেছেন ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় ফল প্রত্যাশী প্রার্থীরা।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংগঠনের আহ্বায়ক আপেল মাহমুদ অসুস্থ অনশনকারীদের পানি খাইয়ে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
এর আগে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চাকরিপ্রত্যাশী প্রার্থীদের পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল শিক্ষা সচিবের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে সচিবের মৌখিক আশ্বাসের ভিত্তিতে তারা অনশন ভঙ্গ করেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন লিপিয়ারা খাতুন, মোরশেদা আক্তার, তাসনিম ও আব্দুল্লাহ আল মামুন।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ফলাফলে বৈষম্যের প্রতিবাদ ও সনদ প্রদানের দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। রোববার পর্যন্ত অন্তত পাঁচজন অনশনকারী অসুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তবে তারা জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
আন্দোলনকারীরা জানান, ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নেন ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৯৮১ জন প্রার্থী। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হন ৮৩ হাজার ৮৬৫ জন। মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন ৮১ হাজার ২০৯ জন, কিন্তু চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হন মাত্র ৬০ হাজার ৬৩৪ জন। অর্থাৎ, লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও প্রায় ২০ হাজার ৫৭৫ জন যোগ্য প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় বাদ পড়েছেন। তাদের অভিযোগ, এই বাদ দেওয়া হয়েছে বৈষম্যের মাধ্যমে, যা একদিকে মেধার অবমূল্যায়ন এবং অন্যদিকে দেশের শিক্ষক সংকটকে আরও তীব্র করছে।
তাদের দাবি, এনটিআরসিএ-এর বিধি অনুযায়ী লিখিত ও মৌখিক উভয় পরীক্ষায় ন্যূনতম ৪০ শতাংশ নম্বর অর্জনকারীদের উত্তীর্ণ বিবেচনা করার কথা। ২০১৫ সালের গেজেটেও এ নিয়ম স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকলেও ১৮তম পরীক্ষায় তা মানা হয়নি। ফলে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অনেক প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অন্যায়ভাবে বাদ পড়েছেন।
ফল প্রত্যাশীদের অভিযোগ, ই-সনদে মৌখিক পরীক্ষার নম্বর উল্লেখ করা হয়নি, যা ফলাফলের স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। পূর্ববর্তী নিবন্ধন পরীক্ষাগুলোতে (১ম থেকে ১২তম) মৌখিক পরীক্ষা ছিল না। ১৩তম থেকে ১৭তম পরীক্ষায় মৌখিক নম্বর যুক্ত হলেও তা মেধাতালিকায় প্রভাব ফেলেনি। অথচ এবার তা সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া হয়েছে। একই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন বোর্ডে ফলাফলের চরম বৈষম্যও দেখা গেছে—কোথাও প্রায় সবাই পাস করেছেন, আবার কোথাও প্রায় সবাই ফেল করেছেন।
তারা অভিযোগ করেন, কোনো কোনো বোর্ডে শুধু নাম-ঠিকানা জিজ্ঞেস করেই প্রার্থীকে পাস করানো হয়েছে, আবার অন্য বোর্ডে সঠিক উত্তর দেওয়ার পরও ন্যূনতম নম্বর না দিয়ে ফেল করানো হয়েছে। এতে মৌখিক পরীক্ষা মেধা যাচাইয়ের পরিবর্তে ভাগ্যের খেলায় পরিণত হয়েছে বলে তারা মন্তব্য করেন।
ফল প্রত্যাশীরা সরকারের কাছে তিন দফা দাবি জানান:
১. মৌখিক পরীক্ষার বৈষম্য নিরসন করে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সকল প্রার্থীকে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ ঘোষণা করা।
২. দ্রুততম সময়ে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের সনদ প্রদান।
৩. পরবর্তী বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তিতে সকল উত্তীর্ণ প্রার্থীর আবেদনের সুযোগ নিশ্চিত করা।
অন্যথায়, তারা আন্দোলন ও অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন ফল প্রত্যাশী মো. সাজেদুর রহমান, শেখর চন্দ্র মণ্ডল, মোছা. লিপিয়ারা খাতুন, পঙ্কজ চন্দ্র সরদার, নাজমুল ইসলাম, রুমা, অপূর্ব বিশ্বাস প্রমুখ।
