বিএনপি মহাসচিবের যে সাক্ষাৎকার ঘিরে বিতর্ক, জামায়াত-এসসিপিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৫৪ পিএম
কলকাতার পত্রিকা এই সময়-এ প্রকাশিত সাক্ষাৎকারের একাংশের স্ক্রিনশট।
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ভারতের দৈনিক পত্রিকা ‘এই সময় অনলাইন’ প্রকাশিত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি সাক্ষাৎকার নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
ওই সাক্ষাৎকারের কিছু বক্তব্য নিয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এনসিপি নেতারাও। তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাক্ষাৎকার ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি।
সোমবার প্রকাশিত সাক্ষাৎকারটিতে লেখা হয়, মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘জামায়াতে ইসলামী আমাদের কাছে ৩০টা আসন চেয়েছে। আমরা উৎসাহ দেখাইনি। অনেক কম একটা সংখ্যার কথা বলেছি, যা তাদের মনঃপুত হয়নি।’
প্রতিবেদন অনুসারে এনসিপি সম্পর্কেও ওই সাক্ষাৎকারে ফখরুল বলেন, এনসিপির এখন একমাত্র লক্ষ্য বিএনপিকে সরকার গঠন করতে না দেওয়া।
জামায়াত যে বলছে পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি ছাড়া ভোট হবে না, এনসিপি প্রচলিত সংবিধান বাতিল করে আগে গণপরিষদের নির্বাচন চাইছে। না হলে ভোট হতে দেবে না বলছে—এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুলের যে বক্তব্য ছাপা হয়েছে, তাতে বলা হয়, ‘জামায়াত ভোটে আসবে। পিআর-টিআর নয়, মানুষ যে পদ্ধতিতে ভোট বোঝেন, সেই প্রচলিত পদ্ধতিতেই হবে বাংলাদেশের ভোট। জামায়াতও দেখবেন অংশ নেবে। আর এনসিপিকে আমরা কোনো শক্তি বলেই আর মনে করি না। এটা ঠিক, এই ছাত্ররাই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের বারুদে আগুনটা দিয়েছিল। এখন আর তাদের কিছু নেই। ডাকলে লোকও আসে না।’
আরও পড়ুন
সাক্ষাৎকারের এক প্রশ্নে মির্জা ফখরুলের জবাব হিসেবে লেখা হয়েছে, আগামী নির্বাচনে জামায়াত বিএনপির কাছে ৩০টা আসন চেয়েছে। বিএনপি উৎসাহ দেখায়নি।
এই প্রশ্নের জবাবে আরও লেখা হয়েছে, ‘আপনাকে আশ্বাস দিচ্ছি, জামায়াতকে আর আমরা মাথায় উঠতে দেব না। তারা যত বড় না শক্তি, আমরা অকারণে তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। পিআর-টিআর সবই বিএনপির ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল। জামায়াত কিন্তু নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করছে। আসলে দেশে প্রবলভাবেই মানুষ নির্বাচন চাইছেন। সেনাবাহিনী চাইছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসও চাইছেন।’
২৫ বছর ধরে বিএনপির সঙ্গে জামায়াত একসঙ্গে ছিল, সে জন্য দল দুটির নাম একসঙ্গে উচ্চারিত হয় কি না।
এমন প্রশ্নের জবাবে বলা হয়, ‘ভুল। আওয়ামী লীগ এই অপপ্রচার ভারতকে বিশ্বাস করিয়েছে। তারা শুধুই নির্বাচনি শরিক। তারা ধর্মীয় রাজনীতি করে, আমরা করি না। আসলে আওয়ামী চশমা দিয়ে ভারত বাংলাদেশকে দেখেই ভুলটা করেছে। বাকিদের সঙ্গে যোগাযোগই রাখেনি। আজ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ক্ষোভের পাহাড় তীব্র ভারত-বিরোধিতায় পর্যবসিত হয়েছে।’
এদিকে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে দেওয়া বক্তব্য ও মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
তিনি বলেন, বিএনপির মহাসচিব জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি এবং সংগঠনের মর্যাদা সম্পর্কে তাচ্ছিল্যের ভাষায় কথা বলেছেন। এ ধরনের সম্পূর্ণ অসত্য, অমর্যাদাকর ও প্রতিহিংসাপরায়ণ বক্তব্য। এই বক্তব্যের সঙ্গে সত্য ও শিষ্টাচারের কোনো মিল নেই।
বিবৃতিতে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘এ বক্তব্য তার (মির্জা ফখরুল) হয়ে থাকে, তবে বাধ্য হয়ে আমরা তার প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করছি। পাশাপাশি এই বক্তব্য যদি তার হয়ে থাকে তাহলে জামায়াতে ইসলামী কার কাছে এই আসনগুলো দাবি করেছে, তার প্রমাণ জাতির কাছে উপস্থাপন করার জন্য দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে আহ্বান জানাচ্ছি।’
এদিকে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম তার দলের বিষয়ে সাক্ষাৎকারে দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে বলেছেন, এনসিপি কোনো শক্তি কি শক্তি নয়, এটা রাজপথে, ভোটের মাঠে জনগণই রায় দেবে।
নিউইয়র্কের বিমানবন্দরে আখতার হোসেনকে হেনস্তা করার ঘটনায় মঙ্গলবার বিকালে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুলের সাক্ষাৎকার ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে: বিএনপি
মঙ্গলবার গণমাধ্যমে বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খানের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিএনপি মহাসচিবকে নিয়ে ‘এই সময় অনলাইন’ সাক্ষাৎকারটি ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, ভারতের দৈনিক পত্রিকা ‘এই সময়’-এ প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে তিনি এ ধরনের কোনো বক্তব্য দেননি। সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলেও, এটি ভুল ও বিভ্রান্তিকর।
এতে আরও বলা হয়েছে, তিনি (মির্জা ফখরুল) এ ধরনের সংবাদ প্রকাশের নিন্দা জানান এবং জনগণকে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, এই বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য।
