নূরুল ইসলাম বুলবুল
ক্ষমতায় গেলে ভিন্নধর্মাবলম্বীসহ প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তা-অধিকার নিশ্চিত করবে জামায়াত
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৪৫ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, অতীতে যারা সরকারে ছিল তারা ভিন্নধর্মাবলম্বীদের অধিকার লুণ্ঠন করেছে। ভিন্নধর্মাবলম্বীদের সংখ্যালঘু বানিয়ে রেখেছিল। জামায়াতে ইসলামী সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগরিষ্ট নীতিতে বিশ্বাসী নয়। জামায়াতে ইসলামী মনে করে, রাষ্ট্রের কাছে প্রতিটি নাগরিক সমান। ইসলামী রাষ্ট্রের মূল শিক্ষা হচ্ছে কারো অধিকার নষ্ট না করা।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও এদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত হয়নি। এখনো তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করতে হলে ধর্মীয় উপাসনালয় পাহারা দিতে হয়। মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিতে হয়। কারণ মানুষের তৈরি মতবাদে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয় না।
তার ভাষায়, ‘জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠিত করে প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তা ও অধিকার সমানভাবে নিশ্চিত করা হবে। ইসলামী রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা। জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের (ঢাকা-৬ আসনের) উদ্যোগে মন্দির ও পূজা কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বী নেতাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন তাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা পাহারাদারের ভূমিকা পালন করবেন। পরবর্তীতে সারাদেশে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীসহ এদেশের আলেম-ওলামা হিন্দুদের বাড়িঘর পাহারা দিয়েছেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা ইতোমধ্যে স্বীকার করেছেন জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতাকর্মী কিংবা এদেশের মাদ্রাসার কোনো ছাত্র-শিক্ষক হিন্দুদের সম্পদ লুট করেনি, ভাঙচুর করেনি। বরং যারা নিজেদেরকে হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষের লোক দাবি করেছে, তারাই হিন্দুদের বাড়িঘর লুট করেছে, সম্পদ দখল করেছে।
ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠিত হলে প্রত্যেক ধর্মের মানুষ নিজ-নিজ ধর্ম পালনে স্বাধীনতা লাভ করবে উল্লেখ করে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে সূরা বাকারার ২৫৬নং আয়াতে বলেছেন, ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ির সুযোগ নেই। সূরা নিসার ২৯নং আয়াতে নির্দেশ দিয়েছেন, একে-অপরের সম্পদ গ্রাস করিও না। এই দুটি আয়াতের দিকে তাকালেই বুঝা যায়, ইসলাম ভিন্নধর্মাবলম্বীদের অধিকারের ব্যাপারে কতটা সুনির্দিষ্ট করে নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু যারা ভিন্নধর্মাবলম্বীদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে তারা ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের মাঝে ভয়ভীতি সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর জামায়াতে ইসলামী যখন দলীয় কার্যক্রম স্বাধীনভাবে পরিচালনার পরিবেশ পেয়েছে তখন দেশে-বিদেশে সব ধর্মের মানুষ বুঝতে পেরেছে জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের অধিকার লুণ্ঠন হবে না। বরং অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। তাই দলমত, ধর্মবর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে মানুষ জামায়াতে ইসলামীর প্রতি আস্থা ও সমর্থন বাড়াতে থাকে। এতে করে একটি দলের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। যার কারণে ওই দল জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তবে কোনো অপপ্রচারে জামায়াতে ইসলামীর অগ্রযাত্রা থেমে যাবে না। কারণ জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি হচ্ছে ইসলামী সমাজ বির্নিমাণের মাধ্যমে এদেশের প্রতিটি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। তিনি নির্ভয়ে সব ধর্মের মানুষকে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে নতুন বাংলাদেশ গড়তে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা-৬ সংসদীয় আসন কমিটির নির্বাচন পরিচালক কামরুল আহসান হাসানের সভাপতিত্বে রাজধানীর স্বামীবাগের ঢাকা পার্টি সেন্টারে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি, ঢাকা-৬ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ড. আব্দুল মান্নান, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক।
এছাড়াও সভায় বিভিন্ন মন্দির কমিটির সভাপতি-সেক্রেটারিসহ ভিন্নধর্মাবলম্বী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

