Logo
Logo
×

রাজনীতি

চাঁদাবাজির কল রেকর্ড ফাঁস হওয়া সেই বিএনপি নেতাকে অব্যাহতি

Icon

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৪২ পিএম

চাঁদাবাজির কল রেকর্ড ফাঁস হওয়া সেই বিএনপি নেতাকে অব্যাহতি

মামলা থেকে বাঁচাতে আওয়ামী লীগ নেতার কাছে চাঁদা চাওয়া সেই বিএনপি নেতাকে দল থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। রোববার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল ও সাধারণ সম্পাদক হাজী সিরাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

দল থেকে অব্যাহতি পাওয়া ব্যক্তি হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক। তিনি একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম অলি আহমদের কাছে মামলা থেকে বাঁচাতে চাঁদা দাবি করেন।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, চাঁদাবাজি এবং দলের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে দল থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হক টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের একাধিক মামলা থেকে বাঁচানোর আশ্বাস দিয়েছেন। সম্প্রতি একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম অলি আহমদের সঙ্গে কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

ওই রেকর্ডে বিএনপি নেতা দাবি করেন, জেলা-উপজেলার নেতারা পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেছিল। আমি বলেছি, তার ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব যাচ্ছে, তাই আপাতত দুই লাখ দিয়ে তার নামটি কেটে দেন।

এই আওয়ামী লীগ নেতাকে দেওয়া অন্য আরেক ভয়েস রেকর্ডে বিএনপি নেতাকে বলতে শোনা যায়- ‘তোমাকে যে বলছিলাম তিনটা মামলা পেন্ডিং হয়ে রয়েছে; তারা (জেলা-উপজেলার নেতা) আমাকে ফোন দিচ্ছে যাওয়ার জন্য- উবায়দুল মোকতাদির সাহেব এক নাম্বার আর তোমাকে চাচ্ছে দুই নাম্বার আসামি দিতে। আমার কাছে ৫ লাখ চাইছিল, আমি বলছি ৫ লাখ দিতে পারবে না- এই মুহূর্তে তার ব্যবসা নাই। বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে আছে। আমি কোনোরকম দুই লাখ ব্যবস্থা করে নিয়ে দিমু আপনাদের কাছে। ওকে মামলায় ফালাইলে একটু সমস্যা হয়। সে আমার আত্মীয় হয়। আমি এসব কথাবার্তা বলে তাদের মানিয়ে রাখছি।

ঠিক আছে- এ সপ্তাহের ভেতরে যেটা করার করতে হবে। যত রকমের কষ্টই হয় তুমি এটা তাড়াতাড়ি করে জোগাড় করো। পচা শামুকে পা কাটা ঠিক না। তিনটা মামলা একসঙ্গে হবে। সাংবাদিক সম্মেলন করে বিষয়টি পুরো বিজয়নগর ও পাহাড়পুর ইউনিয়ন সহকারে জানানো হবে। তুমি এটা ত্বরিতগতিতে করবা। যত ধরনের কষ্ট হোক তুমি এটা কর। এটা তোমার ভালোর জন্য বলছি।

একবার এগুলোর মধ্যে জড়ালে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা দিয়েও বাঁচতে পারবা না। তুমি নিজে জ্ঞানী মানুষ। চিন্তাভাবনা করে কাজগুলো কর। আমি চাই না তোমার কোনো ক্ষতি হোক।’

ওই কথোপকথন নিয়ে যুগান্তর পত্রিকায় ২৯ আগস্ট অনলাইনে  ‘মামলা থেকে বাঁচাতে’ আ.লীগ নেতার কাছে বিএনপির নেতার চাঁদা দাবি শিরোনামে এবং ৩০ আগস্ট যুগান্তর পত্রিকার শেষ পৃষ্ঠায় আওয়ামী লীগ নেতার কাছে বিএনপি নেতার চাঁদা দাবি শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

ওই সংবাদটি জেলা বিএনপির নজরে এলে ৩০ আগস্টই পাহাড়পুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হককে কারণ দর্শানোর নোটিশ করেছেন জেলা বিএনপির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল এবং সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম সিরাজ।

ওই সংবাদের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে পাহাড়পুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক বাদী হয়ে গত মঙ্গলবার ২ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাংবাদিক এসএম কামরুল হাসান শান্তসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানহানি ও চাঁদাদাবির একটি মামলা দায়ের করেছেন। আদালত মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গোয়েন্দা পুলিশ ডিবির ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম