শাহাজাহান চৌধুরীর সেই বক্তব্যে তোলপাড়, গ্রেফতার দাবি বিএনপির
‘এটি জামায়াত নয়, শাহাজাহান চৌধুরীর ব্যক্তিগত বক্তব্য’
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৩১ পিএম
চট্টগ্রাম নগরের জিইসি কনভেনশন সেন্টারে জামায়াতের চট্টগ্রামের নির্বাচনি দায়িত্বশীলদের সমাবেশে কথা বলেন শাহজাহান চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সাবেক আমির ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য শাহাজাহান চৌধুরীর দেওয়া ‘প্রশাসন আমাদের কথায় উঠবে, আমাদের কথায় বসবে’—বক্তব্য ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি।
রোববার চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক মো. এরশাদ উল্লাহ এবং সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের এক যৌথ বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়েছে।
নেতারা বলেন, জামায়াতের নেতা শাহাজাহান চৌধুরীর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়, তারা নতুন করে আরেকটি ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চায়। যদিও জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- যে বক্তব্যটি নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনা, সেটি শাহাজাহান চৌধুরীর একান্তই ব্যক্তিগত। এটি দলের কোনো বক্তব্য নয়।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির বিজ্ঞপ্তিতে নেতারা বলেন, শাহাজাহান চৌধুরীর এ মন্তব্য শুধু দায়িত্বজ্ঞানহীনই নয়, বরং স্পষ্টতই ষড়যন্ত্রপ্রসূত, ঔদ্ধত্যপূর্ণ এবং স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবপূর্ণ। তার এমন বক্তব্য নির্বাচনি পরিবেশকে অস্থিতিশীল ও উত্তেজনামূলক করে তোলার একটি সুস্পষ্ট অপচেষ্টা, যা গণতান্ত্রিক রাজনীতির নীতি, আচার ও আদর্শের ওপর সরাসরি আঘাত হানে।
যৌথ বিবৃতিতে নেতারা উল্লেখ করেন, প্রশাসনের প্রতি প্রকাশ্য হুমকি, নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণের ইঙ্গিত এবং জনগণের ভোটাধিকারকে খর্ব করার উদ্দেশ্যে এমন বক্তব্য দেওয়া রাজনৈতিক দায়িত্ববোধ বর্জিত আচরণের জঘন্য উদাহরণ। এটি দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ধ্বংসের লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে পরিচালিত একটি অপতৎপরতারই অংশ। শাহাজাহান চৌধুরীর ভাষায় যে স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতা প্রতিফলিত হয়েছে, তা অতীতের মানবতাবিরোধী অপশক্তির বর্বরতা ও দমননীতির করুণ স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়।
নেতারা বলেন, নির্বাচনকে অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করার জন্য সব রাজনৈতিক শক্তির দায়িত্বশীল অবস্থান অপরিহার্য। কিন্তু শাহাজাহান চৌধুরীর বক্তব্য নির্বাচনি শৃঙ্খলা, প্রশাসনিক নিরাপত্তা ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে এক ধরনের উসকানিমূলক হামলা, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি জনগণকে বিভ্রান্ত করার পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন।
বিবৃতিতে নেতারা দৃঢ়ভাবে দাবি করেন, শাহাজাহান চৌধুরীকে তার রাজনৈতিক শালীনতাবিরোধী, ঘৃণ্য, ষড়যন্ত্রপ্রসূত, ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবপূর্ণ বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে এবং জনসম্মুখে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। একইসঙ্গে গণতন্ত্র, নির্বাচন ও রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে এ উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার কারণে শাহাজাহান চৌধুরীকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
তারা বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি সর্বদা অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পক্ষে অবিচল থাকবে এবং জনগণের ভোটাধিকার রক্ষায় আপসহীন ভূমিকা পালন করবে।
প্রসঙ্গত, শনিবার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে চট্টগ্রাম অঞ্চলের (চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) নির্বাচনি দায়িত্বশীল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।
সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া আসনে জামায়াত প্রার্থী ও দলটির চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রভাবশালী নেতা শাহাজাহান চৌধুরী বলেন, ‘যার যার নির্বাচনি এলাকায় প্রশাসনের যারা আছেন, তাদের সবাইকে আমাদের আন্ডারে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের কথায় উঠবে, আমাদের কথায় বসবে, আমাদের কথায় গ্রেফতার করবে, আমাদের কথায় মামলা করবে।’
তবে শাহজাহান চৌধুরীর এ বক্তব্যের সময় জামায়াতের আমির মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন না।
শাহাজাহান চৌধুরী আরও বলেন, ‘আপনাদের যার যার প্রাইমারি স্কুলের মাস্টারকে দাঁড়িপাল্লার কথা বলতে হবে। উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক, নুরুল আমিন (নগরের সেক্রেটারি) ভাইয়ের ফটিকছড়িতে দাঁড়িপাল্লার কথা বলতে হবে। পুলিশকে আপনার পেছনে পেছনে হাঁটতে হবে। ওসি সাহেব আপনার কী প্রোগ্রাম, তা সকালবেলায় জেনে নেবেন আর আপনাকে প্রটোকল দেবেন। ইউএনও সাহেব যা উন্নয়ন এসেছে, সব উন্নয়নের হিসাব যিনি নমিনি (জামায়াতের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী) তার থেকে খুঁজে বের করতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ শাহজাহান যুগান্তরকে বলেন, চট্টগ্রাম নগর জামায়াতের সাবেক আমির আমাদের দায়িত্বশীল সম্মেলনে যে কথাগুলো বলেছেন, সেটি তার ব্যক্তিগত বক্তব্য। এ ব্যাপারে তিনি ভালো বলতে পারবেন। তবে আমাদের কথা হচ্ছে, প্রশাসন পূর্ণ পেশাদারিত্ব নিয়ে দায়িত্ব পালন করবে স্বাধীনভাবে। এখানে দলীয় হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। কারণ এটি সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না।
