যেভাবে চিকিৎসক থেকে রাজনীতিতে এনসিপি নেত্রী মিতু
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৫৮ পিএম
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. মাহমুদা মিতু।
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. মাহমুদা মিতু তার জীবনপথের গল্প শুনিয়েছেন। তিনি জানালেন, ছোটবেলা, কৈশোর এবং তার শিক্ষা জীবন সবই তার বরিশাল ও বেতাগীতে কাটেছে।
যুগান্তরকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে ডা. মিতু বলেন, শৈশব কৈশোর সবকিছু আমার বরিশালে। বড় হয়েছি বেতাগীতে। এটা বরগুনার একটি থানা। ক্লাস এইটে বৃত্তি পেয়েছি। ছোটবেলায় ভেবেছি আমি যদি কখনো ইলেকশন করি তাহলে নির্বাচন করব ঝালকাঠি-১ আসন থেকে। ওটা আমার দাদার বাড়ি। স্কুল হচ্ছে বেতাগী গার্লস হাই স্কুল। কলেজ বেতাগী ডিগ্রী কলেজ। কলেজ শেষ করে ঢাকায় উচ্চ শিক্ষার জন্য আসি। এর মধ্যে বিয়ে হয়ে যায়। দুটো বাচ্চা হয়। এর মাঝেই গুলশানের শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হই। দুটো বাচ্চা নিয়ে পড়াশোনা করাটা চ্যালেন্জিং ছিলো। বাচ্চা থাকায় বাকিদের মত চাকরিতে ঢুকতে না পারলেও বাসায় বসে আমি টুকটাক লেখালেখি করতাম আর ছোট একটা কাজ করতাম। এর মধ্যে ‘কেয়ার অব মিতু’ ডেভেলপ করি। সেই জার্নিটা আবার আলাদা।
চিকিৎসক হওয়ার প্রেরণা নিয়েও ডা. মিতু জানান, ‘ছোটবেলা থেকেই যে ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা ছিল বিষয়টা এমন নয়। বিয়ের পর যখন দেখলাম স্বামী, ননদ ডাক্তার তখন নিজের মধ্যেও ইচ্ছাশক্তি কাজ করছিল। আমিই বোধ হয় বাংলাদেশের একমাত্র মেয়ে যে শাশুড়ীর ইচ্ছায়, শাশুড়ির চেষ্টায় ডাক্তার হয়েছি।’
চিকিৎসা থেকে রাজনীতিতে আসা
চিকিৎসা থেকে রাজনীতিতে আসার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার লাইফে কোনো কিছু আসলে প্ল্যান করে হয়না। সময়ের প্রয়োজনে বা স্রোতের সাথেই এখানে আসা। একদিন হঠাত সামান্তা এবং নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারির কল আসে আমার ফোনে। সমাজসেবামূলক কার্যক্রম এবং কেয়ার অব মিতুতে আমার কার্যক্রম থাকলেও রাজনীতিতে পদচারনা করব সেরকম কিছু কখনো প্লানে ছিল না। বিগত দশ বছর যাবতই আমি আমার স্বামীকে বলতাম যে আমি একদিন ইলেকশন করব। কোনো কারণ ছাড়াই এমনি বলতাম। আবার আমার দাদা একসময় মৃত্যুর আগে আমাকে বলেছিলেন- ওমুক লোক আমার চেয়ারম্যান পদবি নিয়ে গিয়েছিল, তোমরা ভবিষ্যতে আমার দেখানো সেই পথে হাটবে। দাদার ঐ কথাটাই কাজ করল কিনা জানি না। আপনারা দেখবেন যে, গতবছর ৮ই আগস্ট আমি একটা লেখা লিখেছিলাম যে, এই সংসদ ভবনে একদিন আমিও যাবো। এটা আসলে কোনো প্লান করে না। আল্লাহই ভালো জানেন কিভাবে কি হলো...’
জুলাই আন্দোলনের স্মৃতি
জুলাই আন্দোলনের স্মৃতি তুলে ধরে মিতু বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের সময় আমার প্রোফাইল খেয়াল করলে দেখবেন আমি অনেক ওপেন লেখালেখি করেছি, চিকিৎসার গ্রুপগুলো থেকে মানুষকে উপদেশ-চিকিৎসা দিয়েছি এবং সে গ্রুপগুলো থেকে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করে আন্দোলনে মাঠে থাকার পরামর্শ দিতাম।
তিনি আরও বলেন, আন্দোলনের যেদিন ১৪৪ ধারা চলছিল সেদিন শাহজাদপুরে আমরা কিছু লোক আন্দোলনের প্রস্ততি নিচ্ছিলাম। রাস্তায় নামব কি নামব না তা চিন্তা করছিলাম। ঠিক তখনই দেখলাম, খালি রাস্তায় এপিসির ভেতর থেকে আর্মির এক সদস্য গুলি করল। এই গুলিতে আমার পাঁচ ফিট দূরত্বে থাকা এক ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়। এটা হচ্ছে জুলাই আন্দোলনে আমার সবচেয়ে বাজে স্মৃতি। এরকম খণ্ড খণ্ড আরো অনেক স্মৃতি আছে। এগুলো আমাকে অনেকদিন ঘুমাতে দেয়নি। আমি বেশ ট্রমার মধ্য দিয়ে গিয়েছি।’

