২৯ দলের বৈঠক, আসন নিয়ে বিএনপির প্রতি ক্ষুব্ধ মিত্ররা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:০০ পিএম
প্রতীকী ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আসন ভাগাভাগি নিয়ে মিত্রদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে বিএনপির। এর মধ্যেই আজ (১০ ডিসেম্বর) বৈঠক করেছেন মিত্ররা। বিকালে রাজধানীর পল্টনে নাগরিক ঐক্যের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে ২৯টি দলের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। বৈঠকে আসন নিয়ে বিএনপির প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন মিত্ররা। এছাড়া বিএনপির সঙ্গে শিগগিরই তাদের বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে অংশ নেন ৫ দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, গণঅধিকার পরিষদ, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, নেজামে ইসলামী পার্টি ও গণফোরামের শীর্ষ নেতারা। এসব দল ও জোট বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে ছিল। মিত্র রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে ছিলেন- মাহমুদুর রহমান মান্না, সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকিসহ ৫ দলের শীর্ষ নেতারা।
এছাড়া ছিলেন- ১২ দলীয় জোটের প্রধান জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, সমন্বয়ক জাতীয় দলের অ্যাডভোকেট এহসানুল হুদা, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর, সমমনা জোটের প্রধান সমন্বয়ক ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, নেজামে ইসলামী দলের আশরাফুল ইসলামসহ মোট ২৯টি দলের শীর্ষ নেতারা।
গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক যুগান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি যেভাবে তীরে এসে তরী ডুবাতে চাচ্ছে, এই জায়গাগুলো নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। বিএনপি তার এই দীর্ঘ দিনের পরীক্ষিত বন্ধুদেরকে যেভাবে বেকার ও আধা বেকার করে দুই ধাপে আসন ঘোষণা করেছে, এটা আমাদের সংক্ষুব্ধ করেছে। আলোচনা হয়েছে বিএনপি তার আগের অবস্থান থেকে সরে আসছে কিনা। আমাদের কাছে মনে হয়েছে বিএনপি একলা চলো নীতি গ্রহণ করেছে কিনা। আমরা বলেছি, বিএনপির সঙ্গে খুব দ্রুতই আমরা বসতে চাই। বসে বিষয়টা সমাধান করতে চাই। বিএনপি দুই-চারটা আসন বরাদ্দ নিয়েই কি বুঝ দেবে, নাকি সত্যিকার অর্থে যুগপতের দলগুলোকে মূল্যায়ন করবে।’
তিনি বলেন, ‘জামায়াত যেখানে বন্ধু বাড়াচ্ছে, সেখানে বিএনপি মিত্রদের ছেটে ফেলছে। এটা পুরোপুরি একটা আত্মঘাতী জায়গা। বিএনপি যে পজিশনটা গ্রহণ করেছে, মনে হচ্ছে তা তাদের বড় ব্যত্যয়। সুতরাং এতে দলগুলোকে ক্ষুব্ধ করার পাশাপাশি অনাস্থা ও অবিশ্বাসের জায়গাটা জন্ম দিয়েছে। এটি বাড়তে দিলে ঝুঁকিপূর্ণ রাাজনৈতিক দূরত্ব বাড়িয়ে তুলতে পারে। যেটা আমরা কেউ চাই না। বিএনপিও নিশ্চয়ই তা চাইবে না। সেই জায়গা থেকে আমরা বিএনপির সঙ্গে কথা বলতে চাই।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে আমাদের আলোচনাই হলো না। বিএনপি এর মধ্যে নিজেদের ২৭২ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। তাহলে আমরা দাঁড়াচ্ছি কোথায়? বিএনপি বলেছে একসঙ্গে নির্বাচন করবে, একসঙ্গে সরকার করবে। এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
মিত্র অন্তত ৭টি দলের শীর্ষ নেতা জানান, বৈঠকে তাদের নিজেদের মধ্যে একটা ঐক্যের কথা বলা হয়েছে। তারা বিএনপির কাছে মর্যাদা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন চান। আপাতত দৃষ্টিতে তাদের মনে হচ্ছে যে প্রতিশ্রুতিতে বিএনপি ছিল, তা থেকে সরে গেছে। সে কারণে নির্বাচনের আসন নিয়ে এখন পর্যন্ত কারও সঙ্গে আলোচনা করেনি। এতে করে সবাই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তবে বিএনপির সঙ্গে মিত্ররা সম্পর্ক ছিন্ন করতে চান না। আলোচনায় বসে এর দ্রুত সমাধান চান।
নির্বাচন সামনে রেখে গত ৩ নভেম্বর প্রথম পর্যায়ে ২৩৭ আসনে দলের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছিল বিএনপি। এর এক মাস পর গত ৪ ডিসেম্বর আরও ৩৬ আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। সে হিসাবে মোট ২৭২ আসনে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে দলটি। এখন ফাঁকা রয়েছে আরও ২৮টি আসন। বিএনপি থেকে বলা হয়েছে, এই ফাঁকা আসনগুলোর বেশিরভাগেই মূলত শরিকরাই নির্বাচন করবেন।
তবে ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির চাওয়া অনুযায়ী দল ও জোটের প্রার্থী তালিকা জমা দিলেও তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই ২৭২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এ ঘটনায় তারা বিস্মিত, অনেকে ক্ষুব্ধও। দুই দফায় ঘোষিত প্রার্থী তালিকায় অন্তত ছয়টি আসনে ‘অনিবন্ধিত’ মিত্ররা ধানের শীষের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, মিত্রদের সঙ্গে কোনো ধরনের টানাপোড়েন চায় না বিএনপি। মিত্রদের যথাযথ মূল্যায়ন করবে দলটি। সেজন্য ঐক্য ঠিক রেখে এর সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার কথাও বিএনপির ওই সূত্র জানিয়েছে।
