আসন নিয়ে বিরোধ মেটাতে মিত্রদের ডেকেছে বিএনপি
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৫৯ পিএম
ফাইল ছবি।
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আসন ভাগাভাগি নিয়ে মিত্রদের সঙ্গে চলমান দূরত্ব মেটাতে বৈঠক ডেকেছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ বৈঠক হবে।
এতে মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর ১৫ জন শীর্ষ নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা ৫ দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, গণঅধিকার পরিষদ, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও গণফোরামের শীর্ষ নেতা।
মিত্র অন্তত পাঁচটি দলের শীর্ষ নেতারা যুগান্তরকে জানান, তাদের গুলশান কার্যালয়ে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা বৈঠকে অংশ নেবেন। নির্বাচনি আসনসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এ বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন নেতা থাকার কথা রয়েছে।
মিত্র দলগুলোর নেতারা আরও জানান, আসন সমঝোতা নিয়ে বিএনপির কাছ থেকে তারা দ্রুত সুষ্ঠু সমাধান চান। যাতে বাইরে কোনো নেতিবাচক বার্তা না যায় যে, বিএনপির সঙ্গে মিত্রদের বিরোধ রয়েছে। তারা বিএনপির সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেই পথ চলতে চান।
এর আগে, আসন নিয়ে মতবিরোধের মধ্যেই বুধবার একটা বৈঠক করেন মিত্ররা। ওইদিন বিকালে রাজধানীর পল্টনে নাগরিক ঐক্যের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে ২৯টি দলের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। বৈঠকে আসন নিয়ে বিএনপির প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান মিত্ররা। সিদ্ধান্ত হয় বিএনপির সঙ্গে শিগগিরই তাদের বৈঠকে বসার।
ওই বৈঠকে অংশ নেন ৫ দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, গণঅধিকার পরিষদ, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, নেজামে ইসলামী পার্টি ও গণফোরামের শীর্ষ নেতারা। এসব দল ও জোট বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনেও ছিল। মিত্র রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে ছিলেন- মাহমুদুর রহমান মান্না, সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকিসহ ৫ দলের শীর্ষ নেতারা।
এছাড়া ছিলেন ১২ দলীয় জোটের প্রধান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, সমন্বয়ক জাতীয় দলের অ্যাডভোকেট এহসানুল হুদা, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর, সমমনা জোটের প্রধান সমন্বয়ক ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গণফোরামের অ্যাভোকেট সুব্রত চৌধুরী, নেজামে ইসলামী দলের আশরাফুল ইসলামসহ মোট ২৯টি দলের শীর্ষ নেতারা।
ওই বৈঠক শেষে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক যুগান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি যেভাবে তীরে এসে তরী ডোবাতে চাচ্ছে‘, এই জায়গাগুলো নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। বিএনপি তার এই দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত বন্ধুদের যেভাবে বেকার ও আধা বেকার করে দুই ধাপে আসন ঘোষণা করেছে, তা আমাদের সংক্ষুব্ধ করেছে। আলোচনা হয়েছে বিএনপি তার আগের অবস্থান থেকে সরে আসছে কি না। আমাদের কাছে মনে হয়েছে- বিএনপি একলা চলো নীতি গ্রহণ করেছে। আমরা বলেছি- বিএনপির সঙ্গে খুব দ্রুতই আমরা একসঙ্গে বসতে চাই। বিষয়টি সমাধান করতে চাই। বিএনপি দু-চারটি আসন বরাদ্দ দিয়েই কি বুঝ দেবে, নাকি সত্যিকার অর্থে যুগপতের দলগুলোকে মূল্যায়ন করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জামায়াত যেখানে বন্ধু বাড়াচ্ছে, সেখানে বিএনপি মিত্রদের ছেঁটে ফেলছে। এটা পুরোপুরি আত্মঘাতী জায়গা। বিএনপি যে পজিশনটা গ্রহণ করেছে, মনে হচ্ছে তা তাদের বড় ব্যত্যয়। এতে দলগুলোকে ক্ষুব্ধ করার পাশাপাশি অনাস্থা ও অবিশ্বাসের জায়গাটা জন্ম দিয়েছে। এটি বাড়তে দিলে রাজনৈতিক দূরত্ব বাড়িয়ে তুলতে পারে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে আমাদের আলোচনাই হলো না। বিএনপি এর মধ্যে ২৭২ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। তাহলে আমরা দাঁড়াচ্ছি কোথায়? বিএনপি বলেছে একসঙ্গে নির্বাচন করবে, একসঙ্গে সরকার করবে। এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
মিত্র অন্তত ৭টি দলের শীর্ষ নেতারা জানান, বৈঠকে তাদের নিজেদের মধ্যে ঐক্যের কথা বলা হয়েছে। তারা বিএনপির কাছে মর্যাদা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন চায়। আপাত দৃষ্টিতে তাদের মনে হচ্ছে, যে প্রতিশ্রুতিতে বিএনপি ছিল, তা থেকে সরে গেছে। সে কারণে নির্বাচনের আসন নিয়ে এখন পর্যন্ত কারও সঙ্গে আলোচনা করেনি। এতে সবাই ক্ষুব্ধ। তবে বিএনপির সঙ্গে মিত্ররা সম্পর্ক ছিন্ন করতে চান না। আলোচনায় বসে এর দ্রুত সমাধান চান।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গেও বৈঠক করে বিএনপি। তবে সেখানে আসন নিয়ে সমঝোতার সুরাহা না হওয়ায় বৈঠক শেষ হওয়ার আগেই বেরিয়ে যান বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকসহ দলটির নেতারা।
নির্বাচন সামনে রেখে ৩ নভেম্বর প্রথম পর্যায়ে ২৩৬ আসনে দলের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছিল বিএনপি। এর এক মাস পর ৪ ডিসেম্বর আরও ৩৬ আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। সে হিসাবে মোট ২৭২ আসনে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে বিএনপি। এখন ফাঁকা রয়েছে আরও ২৮টি আসন। বিএনপি থেকে বলা হয়েছে, এই ফাঁকা আসনগুলোর বেশির ভাগ মূলত শরিকরাই নির্বাচন করবেন।
তবে ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির চাওয়া অনুযায়ী দল ও জোটের প্রার্থী তালিকা জমা দিলেও তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই ২৭২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এ ঘটনায় তারা বিস্মিত, অনেকে ক্ষুব্ধও। ঘোষিত প্রার্থী তালিকায় অন্তত ছয়টি আসনে ‘অনিবন্ধিত’ মিত্ররা ধানের শীষের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, মিত্রদের সঙ্গে কোনো ধরনের টানাপড়েন চায় না বিএনপি। মিত্রদের যথাযথ মূল্যায়ন করবে দলটি। সেজন্য ঐক্য ঠিক রেখে এর সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

