বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর বিরুদ্ধে আ.লীগের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ
মাহবুবুর রহমান রিপন, সিলেট
প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৩৪ পিএম
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি বিশিষ্ট শিল্পপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ মিঠু। তাকে নিয়ে দলের ভেতরে ভেতরেই নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। শিবিরের রাজনীতি দিয়ে তার ছাত্রজীবন শুরু এবং তাকে ‘সাইলেন্ট বা গুপ্ত জামায়াত’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রবীণ নেতারা। এদিকে বিগত দিনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে চলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বড়লেখা পৌর বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম খোকন বলেন, তফশিল ঘোষণার আগে থেকেই মিঠু ও তার পক্ষের লোকজন এমপি এমপি ভাব ধরেছেন। আমরা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে নই। কিন্তু তাকে নিয়ে এই নির্বাচনি বৈতরণী জামায়াতের সঙ্গে পার হওয়া খুবই কঠিন। আমার মনে হয় প্রার্থীর ব্যাপারে দল পুনর্বিবেচনা করুক। দল মাঠে জরিপ চালাক। যে প্রার্থী ধানের শীষকে বিজয়ী করতে পারবে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হোক। তিনি আরও বলেন, মিঠু বিগত ১৭ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত করে চলেছেন। আমাদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা। কিন্তু তার বিরুদ্ধে মামলা তো দূরের কথা, একটি জিডি নেই।
বড়লেখা পৌর বিএনপির সদস্য আব্দুল হাফিজ চৌধুরী আবু বলেন, প্রার্থী ঘোষণার পর বিএনপিতে কোনো ঐক্য নেই। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না।
জুড়ী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান আসকর বলেন, ২০১২ সালের দিকে আমরা যুবদল করতাম। আমি ও শিপলুর হাত ধরেই তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি বিএনপির কাউন্সিলে যুগ্ম আহ্বায়ক থেকে আমাকে মাইনাস করেছেন। দলের মনোনয়ন পাওয়ার পর তৃণমূলের কোনো নেতাকর্মীর তার কাছে যেতে পারছে না। ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি বিএনপির আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকলেও পরে দীর্ঘদিন পাওয়া যায়নি। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের কিছুদিন আগে সক্রিয় হন এবং মনোনয়ন নিয়ে আসেন।
বড়লেখা উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক প্রবীণ বিএনপি নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান ফারুক যুগান্তরকে বলেন, দল যাকে প্রার্থী করেছে তাকে আমরা মেনে নিতে পারছি না। সভা-সমাবেশ করে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি করে আসছি। নিশ্চয়ই দল মাঠ জরিপ করে পুনর্বিবেচনা করবে। মিঠুকে মেনে না নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে তো বিএনপিকে ধারণ করে না। শিবিরের রাজনীতি করে আসা কোনো মানুষ তার আদর্শ বদলাতে পারে না।
প্রবীণ নেতারা আরও জানান, মিঠু ১৯৮৬ সালে ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে শিবিরের প্যানেল থেকে ‘ইফতেষার-মিঠু পরিষদ’ নামে নির্বাচন করেন। ছাত্রলীগের কাছে হেরে যান। তারপর ঢাকায় চলে যান। তিনি বিএনপির আদর্শের প্রকৃত সৈনিক নন। ২০১২ সালে এলাকায় ফিরে বিএনপিতে যোগদান করেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসাবে এই আসনে নির্বাচন করেন। সে সময়ও বিএনপির বড় একটি অংশ তার সঙ্গে ছিল না। অনেকে তাকে ‘সাইলেন্ট জামায়াত’ বলে অভিযোগ করছেন।
এসব বিষয়ে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য মুজিব রাজা চৌধুরী বলেন, তিনি তো দলের নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছেন না। তিনি ও তার ছায়াসঙ্গী কয়েকজন নেতাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। যার ফলে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। হাওরের মাছকাণ্ড নিয়েও প্রভাব পড়ছে। মানুষ মনে করছে যাদের নাম মিডিয়াতে এসেছে, তারা বিবৃতি দেবেন। কিন্তু দুঃখজনক হলো, এ নিয়ে মিঠু ভাই কোনো বিবৃতি দেননি, তিনি যে হাওরে মাছকাণ্ডে জড়িত নন এটা সাধারণ মানুষ জানবে কিভাবে।
পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুতাব আলী বলেন, মিঠু সাহেব মনোনয়ন পাওয়ার পর সাবেক এবাদুর রহমান চৌধুরীর অনুসারীরা মনে করেছিলেন তিনি দলের দীর্ঘদিনের বিভেদ নিরসনে উদ্যাগী হবেন, সবাইকে ডাকবেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। মৌলভীবাজার-১ আসনে মনে হচ্ছে জামায়াতের পাল্লা ভারী হবে। কারণ মানুষ (ধানের শীষের) প্রার্থী পাচ্ছে না তার নিষ্ক্রিয়তার কারণে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নাসির উদ্দিন মিঠু যুগান্তরকে বলেন, দলে কোনো বিভেদ নেই। সবাই তার সঙ্গে আছেন। যারা নানা কথা বলছেন তারা মূলত মনোনয়ন বঞ্চিতদের হয়ে কথা বলছেন। শিবিরের রাজনীতি করার কথা অস্বীকার করেন তিনি।
