Logo
Logo
×

রাজনীতি

জামায়াতের কাছে কোন দল কত আসন চায়

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৪৫ পিএম

জামায়াতের কাছে কোন দল কত আসন চায়

ছবি: সংগৃহীত

জামায়াতের নেতৃত্বাধীন সমমনা ইসলামি দলগুলোর মধ্যে আসন সমঝোতা দু-একদিনের মধ্যেই চূড়ান্ত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তবে শরিক দলগুলোর জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঠিক কতটি আসনে ছাড় দেবে, সে বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।

জামায়াতের সঙ্গে বর্তমানে থাকা ৮ দলের আসন সমঝোতায় আরও ২৩টি ইসলামি দলের যোগ দেওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। নতুন করে যুক্ত হতে আগ্রহী দলগুলোরও বেশকিছু আসনের দাবি রয়েছে। সব মিলিয়ে জামায়াতের শরিক দলগুলো মোট ৩৪৮টি আসনের দাবি তুলেছে বলে যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছে জামায়াতের দায়িত্বশীল একটি সূত্র। যদিও জাতীয় সংসদের মোট আসন সংখ্যা ৩০০।

জামায়াতের নেতৃত্বাধীন সমমনা ৮টি ইসলামি দলের মধ্যে এখনো চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি। দলগুলোর নেতারা বলছেন, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির শাহাদতের ঘটনায় অনেক কার্যক্রম নিয়মমাফিক এগোনো সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের লন্ডন সফর এবং লিয়াজোঁ কমিটির শীর্ষ নেতা ড. এইচএম হামিদুর রহমান আযাদের ওমরাহ পালনের কারণে বৈঠকগুলো সময়মতো করা যায়নি। সংশ্লিষ্ট একাধিক নেতা জানিয়েছেন, এসব কারণ না থাকলে গত সপ্তাহেই আসন সমঝোতা চূড়ান্ত হয়ে যেত।

প্রায় এক বছর আগে জামায়াতে ইসলামী ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে নির্বাচনী মাঠে কাজ শুরু করে। পরে পাঁচ দফার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আরও সাতটি ইসলামি দল জামায়াতের সঙ্গে এক মঞ্চে আসে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একক প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে দলগুলো একমত হয়। তবে আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে মাঠ জরিপকে গুরুত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে অনুযায়ী প্রতিটি দলকে নিজ নিজ এলাকায় জনপ্রিয়তা যাচাই করে মূল্যায়ন প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। ইতোমধ্যে এসব মাঠ জরিপের রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

মাঠ জরিপের ভিত্তিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ১২০টি আসন দাবি করেছে। অন্য ছয় শরিক দলখেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি-বিডিপিমিলে দাবি করেছে আরও ১০০টি আসনসব মিলিয়ে সাত শরিক দল ২২০টি আসনের দাবি তোলেতবেদাবির বিষয়ে জামায়াত আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এইচএম হামিদুর রহমান আযাদ যুগান্তরকে বলেন, আসন সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনের উদ্যোগের সঙ্গে একমত হয়ে আরও ২৩টি সমমনা ইসলামি দল তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে চাচ্ছে। তাদেরও কিছু আসনের দাবি রয়েছে। তিনি বলেন, আগের সাত দল ও নতুন তিন দল মিলিয়ে মোট দাবি দাঁড়িয়েছে ৩৪৮টি আসন, যা সংসদের মোট আসন সংখ্যার চেয়েও বেশি। অথচ জামায়াতেরও নিজস্ব প্রার্থী রয়েছে। তিনি জানান, এসব দাবি মূলত প্রত্যাশার জায়গা থেকে তোলা হয়েছে। আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা অব্যাহত আছে এবং উদার মন নিয়ে সবাই কাজ করছে। আশা করা হচ্ছে, দু-একদিনের মধ্যেই সমঝোতায় পৌঁছানো যাবে।

দলের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও প্রচার-মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব যোবায়ের বলেন, কে কত আসন চেয়েছে সেটি মুখ্য বিষয় নয়। লক্ষ্য হচ্ছে আট দলকে বিজয়ী করা। যেখানে যাকে দিলে জয়ের সম্ভাবনা বেশি, নীতিগতভাবে সেখানেই তাকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে দলগুলো একমত।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহকারী মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যু এবং আরও কিছু কারণে লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক সময়মতো হয়নি। এজন্য আসন সমঝোতায় দেরি হচ্ছে। তিনি জানান, দু-একদিনের মধ্যেই বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে। তবে আসন সংখ্যার বিষয়ে নির্দিষ্ট কিছু বলেননি তিনি। তার ভাষায়, আট দল একসঙ্গে কাজ করবে এবং যেখানে যাকে দিলে ভালো ফল হবে, তাকেই সেখানে দেওয়া হবেএ ব্যাপারে সবাই নীতিগতভাবে একমত।

অন্যদিকে নির্ভরযোগ্য আরেকটি সূত্র জানায়, শরিকদের ২২০ আসনের দাবিকে যেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না জামায়াত, তেমনি নতুন শরিকদের দাবিকেও একইভাবে দেখছে দলটি। তবে সবাইকে একসঙ্গে রাখতে জামায়াত সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। যদিও সেই ছাড় কতটি আসন পর্যন্ত হতে পারে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

জামায়াতের এক নেতা বলেন, শুধু চাওয়া-পাওয়া দিয়ে রাজনীতি হয় না। একত্রে থাকতে হলে উদার মন থাকতে হয়। সংখ্যার ভিত্তিতে নয়, বরং জয়ের সম্ভাবনার ভিত্তিতেই আসন সমঝোতা হওয়া উচিত। সে ক্ষেত্রে আট দলের শীর্ষ নেতাদের নির্বাচনে বিজয়ী করে আনার বিষয়টিই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে জামায়াত।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম