Logo
Logo
×

রাজনীতি

মধুপুরের পীরের অবস্থান নিয়ে দোটানায় হেফাজত

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২১, ০৮:২১ এএম

মধুপুরের পীরের অবস্থান নিয়ে দোটানায় হেফাজত

হেফাজতের হরতালে মধুপুরের পীর পুলিশের গুলিতে আহতও হন। ফাইল ছবি

আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বাধীন হেফাজতে ইসলামের সদ্য বিলুপ্ত কমিটি ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটিকে অবৈধ ঘোষণা দিয়ে আবারও আলোচনায় এসেছেন মধুপুরের পীর মাওলানা আবদুল হামিদ।  

বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘শাহ আহমদ শফী (রহ.)–এর হত্যা মামলায় অভিযুক্তদের ও উসকানিদাতাদের গ্রেফতারপূর্বক বিচারকার্য দ্রুত সম্পন্ন করার দাবিতে’ সংবাদ সম্মেলনেও অংশ নেন তিনি।  

যদিও এতদিন বাবুনগরী পন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন হেফাজতের সাবেক এ নায়েবে আমির। 

জানা যায়, গত মার্চে মোদিবিরোধী হরতালে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান এলাকায় মাওলানা আবদুল হামিদের নেতৃত্বে মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকরা অংশগ্রহণ করে। মধুপুরের পীর সেদিন পুলিশের গুলিতে আহতও হন। 

২৮ মার্চ হেফাজতের ডাকা হরতালে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং হেফাজত কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এসময় সিরাজদিখান থানায় হামলা করেন হেফাজত কর্মীরা। সে সময়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম জালাল উদ্দিনকে ধরে এনে প্রকাশ্যে পিটিয়ে আহতও করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। 

এই ঘটনায় করা মামলায় মধুপুরের পীরের পাঁচ ছেলেকে আসামি করা হয়। পরে পুলিশ তার চার ছেলেকে গ্রেফতার করে। এখনো তারা কারাগারে আছেন। 

সূত্রে জানা গেছে, হেফাজতের হরতালের সময় দু’পক্ষের সংঘর্ষে মেজর জেনারেল আবুল কালাম হুমায়ুন নামে এক সাবেক সেনা কর্মকর্তার মা গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয়। এতে চাপে পড়েন মধুপুরের পীর মাওলানা আবদুল হামিদ।  

এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার দুঃখ প্রকাশ করে একটি বিবৃতি দেন তিনি। তাতে মধুপুরী পীর বলেন, ‘আমি আল্লামা আহমদ শফীর নীতি ও আদর্শের ওপর অবিচল আছি এবং আজীবন থাকব। আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করছি, হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই, আহ্বায়ক কমিটির প্রতিও সমর্থন নেই। এই কমিটিকে আমি বৈধ মনে করি না।’ 

বিবৃতিতে তিনি গত মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরবিরোধী কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে মুন্সিগঞ্জের মধুপুরে অপ্রত্যাশিত ঘটনাবলির জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন।

মাওলানা আবদুল হামিদ বলেন, আমি হেফাজতে ইসলামের মোদি বিরোধী কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে মুন্সীগঞ্জের মধুপুরে অপ্রত্যাশিত ঘটনাবলীর জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। বিশেষ করে আমার অত্যন্ত স্নেহভাজন মেজর জেনারেল আবুল কালাম হুমায়ুনের আম্মার আহত হওয়ার খবর শুনে অত্যন্ত দুঃখিত ও ব্যথিত হয়েছি। বিশেষ করে মেজর জেনারেল সাহেবের বাড়িঘরসহ অন্যান্যদের বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

মধুপুরের পীর মাওলানা আবদুল হামিদ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা। ২০১৮ সালের ২২ নভেম্বর ইসলামী ঐক্যজোট ছেড়ে জমিয়তে যোগ দেন তিনি। 

জানা যায়, নির্বাচনে আসন বণ্টনকে কেন্দ্র করে ইসলামী ঐক্যজোট নেতাদের সঙ্গে বিরোধ হয় তার। তিনি মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী ছিলেন। তবে ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী আসন বণ্টনের তালিকা থেকে বাদ পড়েন তিনি। ফলে, ক্ষুব্ধ হয়ে দল ত্যাগের ঘোষণা দেন। 

বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মাওলানা আবদুল হামিদ কোনো মন্তব্য করেননি। সব প্রশ্নের জবাব দেন হেফাজতে শফী পন্থী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ। 

মধুপুরের পীর কোনো চাপের মুখে কিংবা ছেলেদের বাঁচাতে শফীপন্থীদের দলে এসেছেন কিনা- এমন প্রশ্নে মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘আমি মনে করি না, মধুপুরের পীরের মতো মানুষ চাপের মধ্যে নতী স্বীকার করে তার অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। তিনি মেরুদণ্ড সোজা করে চলতে পারেন।

তিনি বলেন, ‘উনি প্রথম থেকেই আমাদের মতের লোক ছিলেন। আল্লাম শফী যখন আজগর আলী হাসপাতালে ছিলেন, তিনি আমাদের সঙ্গেই ছিলেন। উনি প্রথম থেকে আল্লামা শফি হত্যার বিচার চাইছেন। তিনি শফী সাহেবের অন্যতম সাথীও।’

বাবুনগরীর কমিটিতে মধুপুরের পীরের পদ প্রসঙ্গে মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘আপনারা শুনে অবাক হবেন, বাবুনগরীর কমিটিতে এমন অনেককে পদ দেওয়া হয়েছিল, যারা নিজেরাও জানতেন না।’


 

মধুপুরের পীরের অবস্থান নিয়ে দোটানায় হেফাজত

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম