বীর মুক্তিযোদ্ধার আক্ষেপ: ৫২ বছর পরও ভোটের জন্য রক্ত দিতে হয়!
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০৩:০৫ পিএম
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রোববার। ইতোমধ্যে প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। এবারের নির্বাচনে শুধু অংশ নিচ্ছে আওয়ামী ঘরানার দলগুলো। তবে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। ফলে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন: মূর্খরা সিংহাসনে, জ্ঞানীরা রাস্তায় মাথা নিচু করে হাঁটে
এদিকে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর কৌশল হিসেবে নিজ দলের একাধিক প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে ভোট বর্জন ও ভোটদানে বিরত রাখতে নানা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। তাদের দাবি, দলীয় সরকারের অধীনে নয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে।
বাংলাদেশ নামক দেশটিতে ৫২ বছর পর নির্বাচনের এমন পরিবেশ দেখে আক্ষেপ ও অভিমান ঝেড়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান।
ফজলুর রহমান একসময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সেক্রেটারি ও সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।
সম্প্রতি যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে নির্বাচন নিয়ে চরম অভিমান ব্যক্ত করেন এই বর্ষীয়ান নেতা।
অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেন, শত শত বছর কোনো দিন বাঙালিরা স্বাধীন ছিল না। আমাদের পূর্ব পুরুষরা এই স্বাধীনতার জন্য শত শত বছর যুদ্ধ করেছে ও রক্ত দিয়েছে। আমাদের মা-বোনেরা নীল সাহেব ও মগদস্যুদের অত্যাচারিত হয়ে জর্জরিত হয়েছেন।
এই স্বাধীনতার জন্য সর্বশেষ যুদ্ধ হয়েছিল ১৯৭১ সালে। এটি মূলত হয়েছিল মানুষের গণতান্ত্রিক রায় যখন ওই ইয়াহিয়া খান মানল না, তখন বাংলাদেশের মানুষ গণতান্ত্রিক রায় মানানোর জন্য অস্ত্র হাতে নিয়েছিল। যে রাখালের হাতে লাঠি ছিল, সেই লাঠি রাইফেল হয়েছিল। যে কৃষকের হাতে লাঙল ছিল, সেই লাঙল এলএমজি হয়েছিল।
সেই রাইফেল, এলএমজি ও কামান নিয়ে যুদ্ধ করে ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে রক্তাক্ত বাংলাদেশে রক্তের ওপর একটা স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। বাংলার পূর্ব আকাশে ঝলমলে একটি স্বাধীনতা এনেছিলাম। কিন্তু ৫২ বছর পরও ভোট দেওয়ার জন্য রক্ত দিতে হয়? ৫২ বছর পরও ভোট দেওয়ার কথা বলার জন্য জেলখানা যেতে হয়?
তিনি আরও বলেন, ৫২ বছর পরও আমার ভোট যাকে খুশি তাকে দেব, এ কথা বলার জন্য রাস্তায় গুলি খেয়ে মরতে হয়? নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু ভোটের দাবিতে কথা বলার জন্য, হাজার হাজার মানুষকে জেলখানায় পুড়তে হয় ও লাখ লাখ মানুষকে মামলা খেতে হয়? কোটি কোটি মানুষকে পালিয়ে বেড়াতে হয়। এ জন্য তো দেশে যুদ্ধ হয়নি।
তিনি বলেন, আজকে যে কাজটি বর্তমান সরকার করছে, এই কাজটিই একসময় পাক হানাদার বাহিনী করেছিল। এই দেশ থেকে বাঙালির কাছে মাফ চেয়ে চলে যেতে হয়েছিল তাদের। তবে কোনো দিন তাদের অপরাধের ক্ষমা হবে না।
এই বীর মুক্তিযোদ্ধা মনে করেন, আজকে যারা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে হত্যা করেছে এবং হত্যার বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ার জন্য যারা মানুষকে অত্যাচার করছে, যারা মানুষের ওপর নিষ্ঠুরতা চালাচ্ছে, তারা কোনো দিন এই দেশে মুখ উঁচু করে বাঁচতে পারবে না।
