কারচুপির অভিযোগে ফলাফল প্রত্যাখ্যান, পুনরায় ভোটগ্রহণের দাবি
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮:৫১ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন রাজশাহীর চারটি সংসদীয় আসনের পরাজিত চার স্বতন্ত্র প্রার্থী। তারা সবাই স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা। তাদের দাবি, জনগণ তাদের ভোট দিলেও সূ² কারচুপি করে পরাজিত করা হয়েছে। এজন্য ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি কম হলেও কাগজে ভোট পড়ার হার অনেক বেড়ে গেছে।
অভিযোগ তোলা চার প্রার্থী হলেন-রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের প্রার্থী গোলাম রাব্বানী, রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের প্রার্থী এনামুল হক, রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের ওবায়দুর রহমান এবং রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের প্রার্থী রাহেনুল হক।
রাজশাহীর এই চার আসনেই নৌকার প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। অভিযোগ তোলা চারজনের মধ্যে জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ওবায়দুর রহমানের প্রতীক ছিল ঈগল। অন্য তিনজন প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন কাঁচি প্রতীক নিয়ে। এনামুল হক ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পর পর তিনবার নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছিলেন। রাহেনুল হকও সাবেক এমপি।
আর গোলাম রাব্বানী তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। তিনি পৌরসভার মেয়রও ছিলেন। এই চারজনের মধ্যে এনামুল হক নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করে পুনঃতফশিলের দাবিতে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছেন। রাব্বানী আর রাহেনুল সংবাদ সম্মেলন করে ফল প্রত্যাখ্যান করেছেন। ওবায়দুর রহমানও সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানিয়েছেন।
বুধবার দুপুরে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে আলাদাভাবে সংবাদ সম্মেলন করেন রাহেনুল হক ও গোলাম রাব্বানী। এ সময় নির্বাচনে প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ, দায়িত্বে উদাসীনতা ও বিভিন্ন কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরেন তারা।
রাহেনুল হক বলেন, নৌকার প্রার্থী শাহরিয়ার আলম প্রচারণা, ভোটদান এবং প্রচার ক্যাম্পে তার কর্মীদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। নির্বাচনের আগে কালোটাকা ছড়িয়েছেন এবং নির্বাচন নিয়ে নীলনকশা করেছেন। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে শাহরিয়ার আলমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণ করে ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করারও অভিযোগ করেন তিনি।
রাহেনুল হক বলেন, সারা দিন ভোটকেন্দ্রে ভোটার ছিল না। তিনটার পর হঠাৎ ভোট পড়ার হার বেশি দেখিয়ে দেওয়া হয়। এমন নির্বাচনে ঘোষিত ফলাফল সঠিক নয়। তিনি এ ফল প্রত্যাখ্যান করে পুনঃতফশিল দাবি করেন। এ সময় রাহেনুলের শতাধিক কর্মী-সমর্থক উপস্থিত ছিলেন।
পরে দুপুরে একই স্থানে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলেন রাজশাহী-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানী। তিনিও দাবি করেন, সূ কারচুপি করে এ আসনের নৌকার প্রার্থীকে জিতিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভোট পড়ার হার ‘অবিশ্বাস্য’ দাবি করে তিনিও এই নির্বাচনের ফল বাতিল করে পুনঃতফশিল দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনুরোধ জানান।
এদিকে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের নির্বাচন বাতিল করে পুনঃতফশিলের আবেদন জানিয়ে সিইসির কাছে আবেদন করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হক। মঙ্গলবার এনামুল হক নিজেই নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এই আবেদন জমা দিয়েছেন।
অভিযোগে তিনি বলেন, আমি উপজেলার বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখতে পেয়েছি, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক ছিল না। ভোটগ্রহণের শুরু থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত প্রতিটি কেন্দ্রে ১৫ থেকে ২০ ভাগ ভোট পড়ে। অথচ বিকাল ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে নৌকার প্রার্থীর লোকজন জোরপূর্বক ভোটের ফলাফল তাদের অনুকূলে নেয়।
রাজশাহী-৫ আসনে নৌকার প্রার্থীর কাছে প্রায় তিন হাজার ভোটে পরাজিত হওয়া যুবলীগ নেতা ওবায়দুর রহমানও ফল প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, জনগণ ভোট দিয়েছে ঈগল প্রতীকে। কিন্তু ফল নেওয়া হয়েছে নৌকার পক্ষে। অনেক সমর্থককে ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তারপরও যে ফল হয়েছে, তাতে ঈগল বিজয়ী। বিভিন্ন মাধ্যমে আমি শুনেছিলাম প্রায় ১২ হাজার ভোটে আমি জয়ী। কিন্তু রাতে আমাকে পরাজিত ঘোষণা করা হয়েছে। ওবায়দুর রহমানও এই ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করে পুনঃতফশিল দাবি করেছেন।
এই চার প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তবে ফলাফল ঘোষণার সময় তিনি বলেছিলেন, ভোটাররা সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পেরেছেন। শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি। জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটেছে।
