বড়াইবাড়ীতে ভারতবিরোধী বিজয়
১৮ এপ্রিলকে জাতীয় প্রতিরোধ দিবস ঘোষণার দাবি বিপ্লবী পরিষদের

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৪২ পিএম

২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল কুড়িগ্রামের বড়াইবাড়ীতে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বিজয়কে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ।
এর অংশ হিসবে ১৮ এপ্রিলকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘জাতীয় প্রতিরোধ দিবস’, শহিদ তিন বিডিআর সদস্যকে বীরশ্রেষ্ঠ ও যুদ্ধে জড়িত সামরিক-বেসামরিক নাগরিকদের মুক্তিযোদ্ধা ঘোষণা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দলটি দাবি জানিয়েছে।
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘১৮ এপ্রিল ভারতীয় আগ্রাসন বিরোধী বড়াইবাড়ী দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের দাবিতে’ আয়োজিত এক সমাবেশে এসব দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে বড়াইবাড়ী যুদ্ধকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে সরকারের কাছে বিস্তারিত প্রস্তাবনা তুলে ধরে হয়। এর মধ্যে বড়াইবাড়ীতে শহিদ তিন বিডিআর ল্যান্স নায়েক মো. ওয়াহিদুজ্জামান, সিপাহী মাহফুজুর রহমান ও সিপাহী আবদুল কাদেরকে বীরশ্রেষ্ঠ; যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বিডিআর সিও শাহরুখ জামানকে বীরপ্রতীক; প্রতিরোধের অগ্রনায়ক বড়াইবাড়ীর বাসিন্দা ডা. সাইফুল ইসলাম লাল মিয়া ও প্রথম সংবাদদাতা মো. মিনহাজ আলীকে জাতীয় বীর ঘোষণা করার প্রস্তাব করা হয়।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বড়াইবাড়ী যুদ্ধে সাধারণ জনগণকে নেতৃত্বদানকারী ডা. সাইফুল ইসলাম লাল মিয়া।
তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিএসএফ পাদুয়ায় যখন বিডিআরের সঙ্গে হেরে যায় তখন প্রতিশোধ নিতে বড়াইবাড়ীতে হামলা চালায়। সেদিন ক্যাম্পে ছিলেন মাত্র ৯ জন বিডিআর সদস্য। বিপরীতে ৫৫০ জন বিএসএফ সদস্য হামলা চালায়। সেদিন তাদের আমরা গ্রামবাসী সাহায্য করেছি। গ্রামের প্রতিটি মানুষ দেশপ্রেম থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েন। একাত্তরে আমরা যেভাবে যুদ্ধ করেছি, সেদিনও আমরা সেভাবে যুদ্ধ করেছি।
লাল মিয়া অভিযোগ করেন, এত বড় একটি ঘটনা কোনো দিন বিগত কোনো সরকার বিস্তারিতভাবে মিডিয়ার সামনে আনেনি। এখন আমাদের দাবি এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে অবশ্যই স্বীকৃতি দিতে হবে। এছাড়াও ভারতীর আগ্রাসন মোকাবিলায় বর্তমানে ভারতের সঙ্গে সীমান্তবর্তী প্রতিটি গ্রামের মানুষকে রাইফেল ট্রেনিং দিতে হবে।
সমাবেশে বড়াইবাড়ীতে বিএসএফ অনুপ্রবেশের প্রথম সংবাদদাতা মিনহাজুল ইসলাম ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, সেদিন ভোর ৫টায় দেখি ভারতের বিএসএফ আমাদের গ্রামে ঢুকে পড়েছে। তাৎক্ষণিক বিডিআরকে সেটা জানাই। এর কিছুক্ষণ পর আমাদের গ্রামে যুদ্ধ শুরু হয়। আমি তখন বিডিআরের সঙ্গে ছিলাম। এলাকার মানুষও ছিল।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ১৮ এপ্রিল একটা ঐতিহাসিক দিবস। সেদিন অনেক সাহসিকতার সঙ্গে বিডিআর আর গ্রামবাসী মোকাবিলা করেন, অথচ সেটা আমরা ভুলে গেছি। প্রতিনিয়ত বিএসএস আমাদের ভাইদের গুলি করে অথচ ভারত অন্যান্য দেশের সঙ্গে থাকা সীমান্তে গুলি চালায় না। সেখানে কোনো হত্যাকাণ্ড নেই। আমাদের নির্বিচারে গুলি করেছিল শুধু আমাদের নতজানু সরকারের কারণে।
তিনি বলেন, ভারত শুধু একটি দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায়, তারা এ দেশের জনগণ কিংবা রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায় না। আমাদের ছাত্র-জনতা বুঝিয়ে দিয়েছে, ভারত চাইলে এখানে কোনো নতজানু সরকার বসাতে পারবে না। বর্তমানে বাংলাদেশে কাউকে ক্ষমতায় আসতে ভারতের দরকার হবে না। ভারত আর বাংলাদেশকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারবে না।
জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শামসুদ্দিন বলেন, আজকের এই আয়োজনের প্রেক্ষাপট মানুষকে জানাতে চাই, ২০০১ সালে যখন ভারত বড়াইবাড়ী গ্রাম দখল করতে চায়, তখন আমাদের বিডিআর আর গ্রামবাসী যুদ্ধ করে এ গ্রাম বাঁচিয়েছেন। এ যুদ্ধে যারা শহিদ হয়েছেন তাদের জাতীয় বীর স্বীকৃতি দিতে হবে। যারা আহত আছেন তাদের বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দিয়ে ভাতা প্রদান করতে হবে।
তিনি বলেন, গত বছর সরকার বড়াইবাড়ী দিবস পালন করতে দেয়নি। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা গত বছর ভারতকে খুশি করতে বড়াইবাড়ী যে শহিদ মিনার রয়েছে সেটা বন্ধ রাখে। তিনি আরও বলেন, বড়াইবাড়ী সীমান্তের লড়াই পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে এটা জানাতে হবে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী নেতা ইঞ্জিনিয়ার থোয়াই চিং মং শাক, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব মো. আবু হানিফ, সিনিয়র সাংবাদিক শাখাওয়াত হোসেন ইবনে মঈন চৌধুরী, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সদস্য সচিব হাসান আরিফ, যুগ্ম আহ্বায়ক সাইয়েদ কুতুব ও সহকারী সদস্য সচিব গালিব ইহসান, আমজনতার দলের দপ্তর সম্পাদক আরিফ বিল্লাহ, মুভমেন্ট ফর প্যালেস্টাইনের নেতা মো. হারুন অর রশীদ খান, সার্বভৌম আন্দোলনের প্রধান সংগঠক শামীম রেজা ও বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের সদস্য সচিব ফজলুর রহমান প্রমুখ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সহকারী সদস্য সচিব আব্দুস সালাম, সৌরভ সাকিল, ডা. মাসুম বিল্লাহ ও অলিদ তালুকদার, শাহ পরাণ সায়েম, তোফায়েল আহমেদ, ওয়াসিম আহমদ ও সাকিব সামীন; বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আব্দুল ওয়াহেদ, যুগ্ম আহবায়ক শেখ মুজাহিদ, সহকারী সদস্য সচিব আশরাফুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহবায়ক গোলাম নূর শাফায়েতুল্লাহ ও সহকারী সদস্য সচিব ফারজায়ান আহসান কৃতিত্ব, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম ও যুগ্ম আহ্বায়ক জোবায়ের আহমেদ এবং কেন্দ্রীয় সদস্য তাশফিকুল ইসলাম প্রমুখ।