Logo
Logo
×

রাজনীতি

মৃত্যুর আগে শেষ সাক্ষাতকারে যুগান্তরকে যা বলেছিলেন আব্দুর রাজ্জাক

যোবায়ের আহসান জাবের

যোবায়ের আহসান জাবের

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৫, ১১:১৪ পিএম

জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রোববার বিকাল ৪টা ১০ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। আব্দুর রাজ্জাক ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির জানান, আব্দুর রাজ্জাক ধানমন্ডিতে ইবনে সিনা হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। সেখানে আজ বিকাল ৪টা ১০ মিনিটে মারা যান তিনি। দুই মাস আগে যুগান্তরের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতকার দিয়েছিলেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। সেই সাক্ষাতকারে উঠে এসেছে তার শৈশব ও কৈশোরের গল্প।  

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাবার চলে যাওয়াতে যে শূন্যস্থান ছিল মা সেই স্থানটা পূর্ণ করেছেন। কোনো সংগ্রাম টের পাইনি- বিকজ অব মাই মাদার। উনি আমাদের পড়াশোনা করিয়েছেন; আগলে রেখেছেন ও সহযোগিতা করেছেন। আমার এক কাজিন ছিলেন, উনি পরে লন্ডনে চলে যান। উনিও খুবই আমার প্রতি নজর রাখতেন ও খেয়াল রাখতেন। কেন জানি সবাই মনে করতেন জীবনে হয়তো আমি অনেক বড় হতে পারি- আর সেই সবার ভালোবাসা, স্কুলের শিক্ষকদের ভালোবাসা সবকিছু নিয়েই বেড়ে ওঠা। আমাকে তিন মাইল হেঁটে স্কুলে যেতে হতো। শীতকালে ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টার মতো সময় লাগত। গ্রীষ্মকালে তিন ঘণ্টা লাগত, কারণ রাস্তাঘাট ছিল না- এখন তো খুব ভালো অবস্থা হয়েছে। সেটা একটা সংগ্রাম ছিল স্ট্রাগল ছিল।

এই আইনজীবী বলেন, ক্লাশে আমি ফার্স্ট বয় ছিলাম। হেডমাস্টার সাহেব খুব শিক্ষিত লোক ছিলেন। তিনি খুবই স্নেহ করতেন আমাকে। অন্যান্য শিক্ষকরাও খুবই ভালোবাসতেন। আরএমসি কলেজে আসার পরে ভলিবল খেলতাম, ক্রিকেটও খেলতাম। ব্যাডমিন্টন আমার সবচেয়ে প্রিয় খেলা ছিল। আর এমসি কলেজ কিন্তু খুবই মনোরম পরিবেশে- একদিকে টিলা আরেকদিকে সমতল ভূমি। ওখানে গরম লাগত না কারণ শিলংয়ের হাওয়া আমাদের গায়ে লাগত। 

তিনি বলেন, আজও আমার মনে পড়ে এমসি কলেজের কথাগুলো। তো এভাবেই জীবন শুরু। তারপর লন্ডনে চলে গেলাম। লন্ডনে গিয়ে ব্যারিস্টারি পাশ করলাম। ডিবেট আমি খুব পছন্দ করতাম। এক ডিবেটে আমি ছিলাম রাজনীতিবিদের পক্ষে। আর আমাদের এক কলিগ ছিল বিজ্ঞানীদের পক্ষে। হলভর্তি সভায় উনি বলেছিলেন মীর জাফরের কথা। রাজনীতিবিদরা যদি ভুল না করত তাহলে ১৭৫৭ সালে আমাদের পরাজয় হতো না। আমি টপ করে দাঁড়িয়ে বললাম- এটা বিজ্ঞানীদের পক্ষেই এত বড় ভুল করা সম্ভব। মীর জাফর আলী খান একজন সেনাপতি ছিলেন, সৈনিক ছিলেন। একজন সৈনিককে তিনি তুলনা করছেন রাজনীতিবিদের সঙ্গে। সত্যিকারের একজন রাজনীতিবিদ যদি সেখানে থাকত তাহলে এ অবস্থা হতো না।

জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, আমি মোটামুটি ভালো বক্তৃতা করতে পারতাম। আমাদের ছয়টা ব্লক ছিল। ফার্স্ট ব্লক, সেকেন্ড ব্লক, থার্ড ব্লক, ফোর্থ ব্লক, ফিফথ ব্লক আর হিন্দু ব্লক। তো হিন্দু ব্লকের সুপার (টিচার) আমাকে খুব পছন্দ করতেন। উনি আমাকে বিদায় দিলেন। বিদায়ের দিন এসে বললেন- আমি তো আশা করি রাজ্জাকের মতো যারা খুব ভালো বক্তৃতা করতে পারে তাদের কাছ থেকে বিদায় নেব; কিন্তু আমাকেই তাকে বিদায় দিতে হলো। আমাদের একজন শিক্ষক ছিলেন নাম হচ্ছে সুধীর চন্দ্র পাল। কথিত আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন- আমার সুধীর বাংলা যাবে। তিনি আমাদের টিচার ছিলেন। তো কলেজে ডিবেট হচ্ছে- আমি তখন এমসি কলেজে ইসলামী ছাত্র সংঘ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি ভিপি পদে। তো উনি খুবই প্রশংসা করে বললেন- তুমি খুব ভালো বক্তৃতা করেছ। তো এই ৫০-৬০ আগের কথাগুলো মনে পড়ছে। যখনই সিলেটে যাই অবশ্যই অবশ্যই এমসি কলেজে আমার রুমগুলো দেখি কোথায় আমি ছিলাম, কী করেছি, সব এখনো আমার মানসপটে ভেসে উঠে।

জামায়াতে ইসলামী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম