দায়িত্ব শেষ হওয়ার আগে ড. ইউনূসকে পদত্যাগ করতে দেব না: রাশেদ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৫, ১১:০৯ পিএম
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন। ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন বলেছেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের গুঞ্জন সৃষ্টি করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি পদত্যাগ করছেন না। মূলত এনসিপির উপদেষ্টা ও নেতাদের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি তাদের বলেছেন, তোমরা সংযত হও, নইলে আমি দায়িত্বে থাকব না। এটা মূলত তাদের জন্য সতর্কবার্তা। কিন্তু তারা বাইরে ছড়িয়ে দেয়, প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করছে। সেই তারাই আবার মধ্য রাতে বলতে থাকে, প্রধান উপদেষ্টা থাকবেন। মূলত এনসিপির উপদেষ্টাদের পদত্যাগের দাবি থেকে জনগণের দৃষ্টি সরাতে এই নাটক তারা মঞ্চায়ন করেছে।
শুক্রবার বিকালে পুরানা পল্টন আলরাজি কমপ্লেক্সের সামনে গণঅধিকার পরিষদের অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ আয়োজিত সরকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতে এনসিপির প্রতিনিধি, দুর্নীতিগ্রস্ত উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও অনৈক্য-নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের পদত্যাগ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিজবুত তাহরির নেতা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের অপসারণ ও গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশ শেষে পল্টনে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি বলেন, আজকে একজন উপদেষ্টা বলেছে, শুধু নির্বাচনের জন্য আমরা বসি নাই। কিন্তু ১০ মাসেও তো গণহত্যার বিচার ও রাষ্ট্র সংস্কারের নমুনা দেখছি না। বরং সংস্কারের নামে নসরুল হামিদ বিপুর লুটপাটের সম্পদের পাহারাদার হয়েছেন একজন উপদেষ্টার স্বামী। সাবের মান্নানদের জামিন করিয়েছেন, রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ গঠনের চেষ্টা করেছে। সংস্কারের নামে নৈরাজ্য ও অনৈক্য সৃষ্টি করেছে উপদেষ্টা মাহফুজ, দুর্নীতিতে জড়িয়েছে উপদেষ্টা আসিফ। আসিফের এপিএস দুর্নীতি করল, আর সে কি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখল? আমি দুদককে বলব, গ্রেফতার না করে শুধু তলব করলে আপনাদের ওপর অনাস্থা তৈরি হবে। এছাড়া নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতা কি করে প্রশাসক হলো, আসিফকে তার জবাব দিতে হবে। আমাদের স্পষ্ট দাবি শপথ লঙ্ঘনের দায়ে এনসিপির উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদকে পদত্যাগ করতে হবে। এবং প্রশাসক এজাজকে অপসারণ ও গ্রেফতার করতে হবে। অন্যথায় উপদেষ্টা পরিষদের নিরপেক্ষতা নিয়ে যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, তার দূর হবে না।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস স্যারের পদত্যাগ চাই না। দায়িত্ব শেষ হওয়ার আগে আমরা ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসকে পদত্যাগ করতেও দেব না। তার ওপর আমাদের আস্থা রয়েছে। কিন্তু তার টিম ভালো খেলছে না। ভালো টিম না পেলে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হওয়া যায়, কিন্তু ম্যাচ জেতা যায় না। তাই রাষ্ট্র সংস্কার ও গণহত্যা বিচার করতে হলে অবশ্যই ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের টিম পুনর্গঠন করতে হবে। অন্যথায় এ টিম নিয়ে খেলে ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস ভালো করলেও, টিম দিয়ে ম্যাচ জেতা যাবে না। আর একারণেই আমাদের দাবি উপদেষ্টা পরিষদের পুনর্গঠন।
তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হওয়া দরকার। তার আগে গণহত্যার বিচার ও ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কার করতে হবে। যদিও জানতে পারছি, কিছু উপদেষ্টা ক্ষমতার লোভে নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে বিভ্রান্ত করছেন।
গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান বলেন, বিতর্কিত উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এবং মাহফুজ আলম শপথ ভঙ্গ করেছেন, সুতরাং তাদেরকে পদত্যাগ করতেই হবে। তারা ইতোমধ্যে তাদের রাজনৈতিক অকৌশলের মাধ্যমে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেও বিতর্কিত করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে আছি।
বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুন বলেন, জুলাইকে সমুন্নত রাখতে, জাতীয় ঐক্য ঠিক রাখতে, যারা জুলাইকে পুঁজি করে মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি আকাঁড়া বানিয়েছে, যাদের পিএস দুর্নীতি সঙ্গে জড়িতে সে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, অনৈক্য সৃষ্টিকারী মাহফুজ আলমকে পদত্যাগ করতে হবে। তারা পদত্যাগ না করলে তাদের বহিষ্কারে জন্য প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্বারকলিপি প্রদান করা হবে, তাছাড়া জঙ্গিবাদে সঙ্গে জড়িত ঢাকা মহানগর উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রকে বহিষ্কারের করতে হবে।অন্যথায় হুঁশিয়ারির উচ্চারণ করে বলেন, ঢাকা মহানগর সিটি করপোরেশন ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হবে।
যুব অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মুনতাজুল ইসলামের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ফারুক হাসান, মুখপাত্র, গণঅধিকার পরিষদ, ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি মিজানুর রহমান, দক্ষিণ গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দীন, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তর যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি রাহুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক হোসাইন নুর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি জাহাঙ্গীর হিরণ, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান শুভ, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
