Logo
Logo
×

রাজনীতি

‘নোট অব ডিসেন্ট’ নিয়ে যত জটিলতা, পুনর্বিবেচনা করবে বিএনপি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৫, ০৮:১০ পিএম

‘নোট অব ডিসেন্ট’ নিয়ে যত জটিলতা, পুনর্বিবেচনা করবে বিএনপি

 বহুল কাঙ্ক্ষিত ও প্রত্যাশিত জুলাই সনদের খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে। এতে নানা অসংগতিসহ অপূর্ণতা খুঁজে পেয়েছে বেশ কয়েকটি দল। শব্দ ও বাক্যচয়নেও আপত্তি রয়েছে। নেতারা বলছেন, বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ‘নোট অব ডিসেন্ট’ রয়েছে, তা কীভাবে সংবিধানে কার্যকর হবে উল্লেখ করা হয়নি খসড়ায়।এটি বড় জটিলতা তৈরি করেছে। 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের একাধিক সুপারিশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একমত না হওয়ায় ভিন্নমত  বা 'নোট অব ডিসেন্ট 'দেওয়া হয়েছে। এতে করে এর বাস্তবায়ন ও সাংবিধানিক ভিত্তি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে দলগুলো। তাদের মতে, 'নোট অব ডিসেন্ট' থাকলে জুলাই সনদ কার্যকর করা যাবে না। ভবিষ্যতে যে দল ক্ষমতায় আসবে, তারা সংসদে এসব বাস্তবায়ন করবে না। 

খসড়ার ১০টি প্রস্তাবে 'নোট অব ডিসেন্ট' দিয়েছে বিএনপি। দলটির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, চূড়ান্ত খসড়ার আলোচনায় বিএনপি কিছু ছাড় দিতে পারে। বিশেষ করে সংসদের উচ্চকক্ষের পিআর পদ্ধতি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পদ্ধতিসহ দুই-তিনটি বিষয়ে সমঝোতার সুযোগ রয়েছে।

বিএনপি বলছে, সনদের সবকিছু উপস্থাপিত যেমন হয়নি, তেমনই রয়েছে অসামঞ্জস্যও। আর আইনি ভিত্তির মাধ্যমে এই সরকারকেই সনদ বাস্তবায়নের পরামর্শ জামায়াতের। এছাড়া সনদ নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না-এমন অঙ্গীকারনামায় আপত্তি জানিয়েছে সিপিবি। 

নেতারা জানান, জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়ায় শব্দচয়ন, বাক্যগঠন এবং সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবে অনেক বিষয়ে অসামঞ্জস্য রয়েছে। জুলাই সনদের সাংবিধানিক ও আইনি ভিত্তি নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না বলা হয়েছে। তবে বাস্তবায়ন কোন পদ্ধতিতে হবে, তা দলগুলোকে জানানো হয়নি। জাতীয় স্বার্থে সব দলকে ছাড় দেওয়া উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, অন্যথায় জুলাই সনদের অসামঞ্জস্যের সুযোগ নিয়ে ফ্যাসিবাদী শক্তি ফিরে আসতে পারে।

এদিকে জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়া পর্যালোচনা করে ২০ আগস্ট জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে মতামত দেবে বিএনপি। আজ দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা করবেন নেতারা। বৈঠকে কয়েকটি বিষয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ পুনর্বিবেচনার জন্য আলোচনা হবে। জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়া প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়ায় কিছু বিষয়ে অসামঞ্জস্য রয়েছে। পাশাপাশি কিছু বিষয় সঠিকভাবে উপস্থাপিত হয়নি। এগুলো আমাদের মতামতে তুলে ধরা হবে। সনদের চূড়ান্ত খসড়া পর্যালোচনা করে ২০ আগস্টের মধ্যে মতামত জানাবে বিএনপি।’

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ যুগান্তরকে বলেন, এটা তো এখন যেভাবে আলোচনার ভিত্তিতে নির্ধারিত হইছে, সেই জিনিসগুলো কোনো ধরনের গ্যাপ আছে কি না দেখতে হবে। অনেক সময় প্রিন্টিংয়েরও মিসটেক (ছাপায়ও ভুল) হয়। ঐকমত্য কমিশনসহ সবাই মিলে কষ্ট-পরিশ্রম করছে। অনেক সময় গেছে। এটির জন্য রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে একটা খসড়া তৈরি হয়েছে। এটি চূড়ান্ত হবে, চূড়ান্ত করার পর আইনি বাধ্যবাধকতার মধ্যে আনা হবে। তারপর বাস্তবায়ন করা হবে। এ ধাপগুলো এখনো অবশিষ্ট। সেগুলো না হলে তো এটা লিখিত সনদ, এতে লাভ নেই। আইনি দলিল না হলে তো লাভ নেই।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘জুলাই সনদের আইনি বা বাস্তবায়ন নিয়েও নিজেদের মধ্যে আরও কথাবার্তা বলতে হবে। নোট অব ডিসেন্ট বিষয়গুলো নিয়ে পার্লামেন্টে আলোচনা হবে। আমার ধারণা, বিএনপি দেখতে চাইছে আগামী নির্বাচনে তারা কেমন ভোট পায়, এর ভিত্তিতে তারা সুযোগ দেবে। জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করার কথা বলেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। কিন্তু নোট অব ডিসেন্ট থাকলে তো আর বাস্তবায়ন করতে পারবে না। এখনো সময় আছে।

জুলাই সনদের সমন্বিত খসড়া প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শামছুল আলম যুগান্তরকে বলেন, জুলাই সনদের ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দলগুলো একমত। কিন্তু এটা বাস্তবায়ন পরীক্ষা নিয়ে তাদের দুই-চারটা দলের মধ্যে মতবিরোধ থাকতে পারে। কিন্তু তারপরও আমি মনে করি, এটা সামনে রেখে সব রাজনৈতিক দলই যেন একমত পোষণ করে। তা না হলে ফ্যাসিবাদী শক্তি ফিরে আসার সুযোগ পাবে। যদি ছাড় দিয়ে সমন্বিতভাবে আমরা এগিয়ে যাই, তাহলে এটা একটা মাইলফলক হিসাবে কাজ করবে। আগামী দিনে কোনো শক্তি জনগণের বিরুদ্ধে আর কাজ করতে পারবে না।

  

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম