বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে যুগান্তরকে মির্জা ফখরুল
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা দেখছি না
খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান নির্বাচনে অংশ নেবেন * প্রার্থী বাছাইয়ে জরিপ চলছে, অপেক্ষাকৃত তরুণদের বেশি প্রাধান্য * জামায়াতের সঙ্গে জোটের কোনো সম্ভাবনা নেই * ৫০ বছরেও আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা দেখি না
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিবর্তন এসেছে। নতুন এ পরিস্থিতিতে দীর্ঘ ১৮ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীরা এখন অনেক উজ্জীবিত। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য তারা প্রস্তুত। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আগামী বছর ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা দেখছেন না। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন-একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। এতে ভোট দিতে জনগণ মুখিয়ে আছেন। প্রার্থী বাছাইয়ে জরিপ চলছে জানিয়ে বলেন, প্রাধান্য দেওয়া হবে অপেক্ষাকৃত তরুণদের। নির্বাচনি ইশতেহার তৈরি হচ্ছে জানিয়ে বলেন, সেখানে অগ্রাধিকার পাবে কর্মসংস্থান। জামায়াতের সঙ্গে জোটের কোনো সম্ভাবনা নেই জানিয়ে তিনি ইঙ্গিত দেন, বেশ কয়েকটি ইসলামি দল সঙ্গে থাকবে। আওয়ামী লীগের ফেরা নিয়ে বলেন, আপাতত ৫০ বছরেও তাদের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা দেখি না। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে যুগান্তরকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। দেশের চলমান পরিস্থিতি, জাতীয় সংসদ নির্বাচন, জুলাই সনদ, বিচার, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা, ক্ষমতায় গেলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, মৌলবাদ ও উগ্রবাদসহ নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন বিএনপির মহাসচিব। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার তারিকুল ইসলাম
যুগান্তর : ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রায় ১৬ বছর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা, নানা নির্যাতন, গুম-খুন, মামলা-হামলা চলেছে। এবার মুক্ত পরিবেশে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন হবে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন সামনে রেখে কী চ্যালেঞ্জ দেখছেন।
মির্জা ফখরুল : দল যেন ইউনাইটেড থাকে, তার চেষ্টা করা। আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারে সেই বিষয়গুলো নিয়ে আসা, যেগুলো আধুনিক প্রজন্মকে আকৃষ্ট করবে। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করবে। এ ধরনের পলিসি যেন আমরা নিতে পারি। আর বড় বিষয় হচ্ছে-সিচুয়েশনকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
যুগান্তর : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে। নির্বাচন হওয়া নিয়ে কোনো শঙ্কা দেখছেন কি না?
মির্জা ফখরুল : কোনো শঙ্কা দেখি না। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। দেশের মানুষ ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে।
যুগান্তর : নির্বাচনে যেতে পিআরসহ কিছু শর্ত দিয়েছে জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দল। এসব শর্ত কতটুকু যৌক্তিক মনে করছেন।
মির্জা ফখরুল : এর মধ্যে কোনো যুক্তি খুঁজে পাই না। এমন দাবি তুলছে, যার সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ পরিচিত নয়। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি (পিআর) সম্পর্কে মানুষ জানে না, বুঝতে সময় লাগবে।
যুগান্তর : সংস্কার ও বিচার নিয়ে বিএনপির অবস্থান কী?
মির্জা ফখরুল : আমরা তো সবার আগে সংস্কারের কথা বলেছি। আমরা বিচার চেয়েছি। আর সবচেয়ে বড় ভিকটিম যেহেতু আমরা, সুতরাং আমরা তো তাদের বিচার চাইবই।
যুগান্তর : জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান কী?
মির্জা ফখরুল : সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে বিএনপির অবস্থান আমরা পরিষ্কার করেছি। প্রতিটি সংস্কারের বিষয়ে আমরা বলে দিয়েছি যে কীভাবে সেটা করা যাবে। সংবিধান বাদ দিয়ে নয়, সংবিধান সংশোধন করা যায়-এ বিষয়গুলো নিয়ে আসা হয়েছে। যেগুলো এখনই অধ্যাদেশে করা যাবে, সেটা করা। আর যেগুলো যাবে না, সেগুলো নির্বাচিত পার্লামেন্ট করবে।
যুগান্তর : বড় দল হিসাবে এবার প্রতিটি আসনে বিএনপির একাধিক নেতা মনোনয়ন চাইবেন। প্রার্থী ঠিক করতে কোনো জরিপ হচ্ছে কি না?
মির্জা ফখরুল: হ্যাঁ, জরিপ তো হচ্ছেই।
যুগান্তর : দেশের মোট ভোটারের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই তরুণ। এবার মনোনয়নের ক্ষেত্রে তরুণ নেতাদের কতটা প্রাধান্য দেওয়া হবে?
মির্জা ফখরুল : সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হবে।
যুগান্তর : প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে কী কী বৈশিষ্ট্য প্রাধান্য পাবে?
মির্জা ফখরুল : প্রার্থীর জনপ্রিয়তা। তার নির্বাচন করার ক্ষমতা ও সাংগঠনিক দক্ষতা। জনগণের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা। বিগত আন্দোলনে তার অংশগ্রহণ কেমন ছিল।
যুগান্তর : এবার বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিরোধে বিএনপি কতটুকু সক্ষম হবে?
মির্জা ফখরুল : সব সময়ই বিএনপির অনেক প্রার্থী ছিল। প্রার্থীদের বিএনপি ঠিকই হ্যান্ডল করতে পেরেছে।
যুগান্তর : নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়নের কাজ বিএনপি শুরু করেছে কি না?
মির্জা ফখরুল : ব্রড আউটলাইনগুলো তৈরি করছে। পুরোটা তৈরি করবে যখন নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হবে।
যুগান্তর : বড় দাগে কী পরিকল্পনার কথা ইশতেহারে থাকবে?
মির্জা ফখরুল : কর্মসংস্থানটা আমাদের খুব বড় প্রায়োরিটি থাকবে। সমস্যা যেহেতু ওটাই প্রধান, আমরা চেষ্টা করব কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রগুলো এখন থেকে আইডেন্টিফাই করে সেগুলোয় কাজ করা।
যুগান্তর : কোনো জোট বা নির্বাচনি সমঝোতা করবে কি বিএনপি?
মির্জা ফখরুল : নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
যুগান্তর : ইসলামী দলও কি জোটে থাকবে?
মির্জা ফখরুল : বিএনপির সমমনা হিসাবে অনেক ইসলামি দল তো আছে।
যুগান্তর : জোট হলে সেখানে জামায়াতে ইসলামীকে দেখা যাবে কি?
মির্জা ফখরুল : কোনো সম্ভাবনা নেই।
যুগান্তর : সমমনাদের আসন ছাড় দেওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে?
মির্জা ফখরুল : এ নিয়ে এখনো আলোচনা হয়নি। আরও সময় লাগবে।
যুগান্তর : মৌলবাদ, উগ্রবাদ নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। ডানপন্থিদের উত্থান নিয়ে কথা বলেছেন। এ ধরনের কোনো শঙ্কা দেখছেন?
মির্জা ফখরুল : এরা আগে ছিলই না। ধীরে ধীরে এরা বেরিয়ে আসছে। কর্মসূচি করছে, প্রোগ্রাম করছে। এটাই তো হচ্ছে উত্থান। এটাকে যদি এখনোই প্রতিরোধ করা না যায়, এরা যদি সংখ্যায় বাড়ে, তখন তো বড় রকমের ভায়োলেন্স, বড় রকমের রাজনৈতিক সংকট তৈরি হতে পারে।
যুগান্তর : মব সহিংসতা এখনো দেখা যাচ্ছে। এখানে সরকারের কোনো ব্যর্থতা দেখছেন?
মির্জা ফখরুল : এক বছরের মধ্যেই যে সরকার সবকিছু পারবে, এটা আমি মনে করি না। কিন্তু সরকার আরও বেশি কিছু করতে পারত। যদি আরও আন্তরিক হতো। এই জায়গায় তাদের কিছুটা পরিকল্পনার অভাব আছে, অভিজ্ঞতার অভাব আছে।
যুগান্তর : নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পতিত আওয়ামী লীগ দেশকে অস্থিতিশীল করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। আপনাদের এমন কোনো আশঙ্কা আছে?
মির্জা ফখরুল : সেই আশঙ্কা আমাদেরও আছে।
যুগান্তর : আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফেরা নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলছেন। আপনি কি মনে করেন শিগগির আওয়ামী লীগ ফিরতে পারবে?
মির্জা ফখরুল : আমি আপাতত ৫০ বছরেও তাদের ক্ষমতায় আসার কোনো সম্ভাবনা দেখি না। আর রাজনীতিতে আসার ব্যাপারটা তো দেশের জনগণের ওপর নির্ভর করবে।
যুগান্তর : জনগণের রায়ে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন?
মির্জা ফখরুল : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানই হবেন দেশের প্রধানমন্ত্রী।
যুগান্তর : তারেক রহমান কবে দেশে ফিরবেন?
মির্জা ফখরুল : আশা করি, তিনি শিগ্গিরই দেশে ফিরে আসবেন।
যুগান্তর : বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাচনে অংশ নেবেন?
মির্জা ফখরুল : অবশ্যই।
যুগান্তর : গণ-অভ্যুত্থানের এক বছরের মাথায় জুলাই ঐক্য বিনষ্ট হলো কেন?
মির্জা ফখরুল : মতের মিল হচ্ছে না। কিন্তু ঐক্য বিনষ্ট হয়নি।
যুগান্তর : যে প্রত্যাশা নিয়ে জনগণ জীবন বাজি রেখে জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিল, তা কি বিএনপি ক্ষমতায় এসে বাস্তবায়ন করতে পারবে?
মির্জা ফখরুল : বিএনপি তো ওই চেষ্টাই করবে। কমিটমেন্ট আছে।
যুগান্তর : বিএনপির কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপরাধে জড়ানোর অভিযোগ আসছে। আপনারা ব্যবস্থাও নিচ্ছেন। তারপরও এটা বিএনপির রাজনীতিকে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে মনে করেন?
মির্জা ফখরুল : নিঃসন্দেহে এটা আমাদের কনসার্নের বিষয়। সে কারণেই আমরা দল থেকে এর বিরুদ্ধে চরমভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি। কঠোর শাস্তি হচ্ছে। অনেক জায়গায় দলের পক্ষ থেকেও মামলা করা হয়েছে। অপকর্মের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বিএনপির।
যুগান্তর : সময় দেওয়ার জন্য যুগান্তরের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
মির্জা ফখরুল : আপনাকে এবং যুগান্তরের সব পাঠককে আমার পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ।

