Logo
Logo
×

শেষ পাতা

এক মঞ্চে ৩০ রাজনৈতিক দলের নেতারা

জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলীয় জোটকে নিষিদ্ধের দাবি

ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যে অটুট থাকার অঙ্গীকার * ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার চ্যাপ্টার ক্লোজড’

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলীয় জোটকে নিষিদ্ধের দাবি

জাতীয় পার্টির কার্যক্রম নিষিদ্ধসহ তিন দফা দাবিতে রাজধানীতে সংহতি সমাবেশ করেছে গণঅধিকার পরিষদ। এতে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, জেএসডি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, এবি পার্টি, খেলাফত মজলিসসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী অন্তত ৩০টি রাজনৈতিক দল সংহতি জানায়। অবিলম্বে জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলীয় জোটকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে নেতারা বলেন, এই দেশে নতুন করে কোনো ফ্যাসিবাদের জন্ম হতে দেওয়া হবে না। বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। তাদের দোসর জাতীয় পার্র্টিসহ ১৪ দলীয় জোট শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার হতে সহযোগিতা করেছে। গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে গেলেও তাদের দোসররা এখনো সরকারের বিভিন্ন জায়গায় বহাল তবিয়তে আছে। ফ্যাসিবাদ ফেরাতে জাতীয় পার্টি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। দেশকে অস্থির করতে নানাভাবে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। অবিলম্বে আওয়ামী লীগের দোসর ও ভারতীয় এজেন্ট জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করতে হবে। ১৪ দলীয় জোটকে নিষিদ্ধ করতে হবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার চ্যাপ্টার ক্লোজড। জনগণের ধাওয়ায় পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারের আর ফিরে আসার কোনো রকম নজির নেই পৃথিবীতে।

শুক্রবার বিকালে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে গণঅধিকার পরিষদের সংহতি সমাবেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এসব কথা বলেন। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরসহ নেতাকর্মীদের ওপর হামলায় জড়িতদের শাস্তি, জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের বিচার, নিবন্ধন বাতিল ও রাজনীতি নিষিদ্ধসহ ‘ব্যর্থতার দায়ে’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। তবে তিন দফা দাবি হলেও সমাবেশে বেশির ভাগ বক্তাই জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে বক্তব্য দেন। ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যে অটুট থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন নেতারা। বিকাল ৩টায় সমাবেশ শুরু হয়। দুপুর থেকেই মিছিল নিয়ে অংশগ্রহণ করেন গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে সংহতি জানান। ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলোর নেতারা একই মঞ্চে পাশাপাশি বসে এদিন নিজেদের মধ্যে ঐক্য মজবুত করার আহ্বান জানান।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল বলেন, গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে। এখন তো স্বৈরাচার নেই। তাহলে আজ নুরকে রক্তাক্ত করেছে কারা? আমরা বারবার প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে বলেছি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্তরে স্তরে হাসিনার আন্ডা-বাচ্চারা রয়ে গেছে। তাদের বিরুদ্ধে আপনি ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। ব্যবস্থা কিছু কিছু হয়েছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হয়নি। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা হয়েছে, অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা হয়নি। হাসিনার সেই আন্ডা-বাচ্চাদের বিরুদ্ধে শুধু অ্যালোপ্যাথি নয়, অস্ত্রোপচার করতে হবে। যেনতেন করে দেশ চালালে তো চলবে না। তিনি বলেন, সেদিন যদি আপনারা (সরকার) ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন, আজকে নুরের ওপর হামলার ঘটনা ঘটত না। এখানে (মঞ্চে) আমরা যারা আছি, আমাদের মধ্যে চিন্তাভাবনা ও আদর্শগত পার্থক্য আছে। এটিই তো গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কিন্তু একটি জায়গায় সব একমত। বাংলাদেশে আমরা আর ফ্যাসিবাদের জায়গা হতে দেব না।

সাম্প্র্রতিক নানা গুজব এবং প্রোপাগান্ডা তুলে ধরে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আমরা লক্ষ করছি অনেকেই অনেক স্বপ্ন দেখছেন। অনেকেই ভাবছেন জাপা (জাতীয় পার্টি) দিয়ে আবার আপা (শেখ হাসিনা) আইসা (এসে) পড়বে। কিন্তু একটা কথা মনে রাখবেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার চ্যাপ্টার ক্লোজড। জনগণের ধাওয়ায় পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারের আর ফিরে আসার কোনো রকম নজির নেই। সুতরাং বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনা একটি মৃত মানুষ।

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, আমরা খুব স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, এই হামলা কোনো একটি দলের ওপরে ছিল না। এটি ছিল বাংলাদেশের ওপর হামলা, গণতন্ত্র ও জুলাইয়ের রক্তের ওপর হামলা। এই হামলার সঙ্গে প্রশাসনের লোকজন জড়িত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জড়িত। এটা খুব স্পষ্টভাবে দেখা গেছে। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ বিদায় নিয়েছে কিন্তু এই ফ্যাসিবাদকে যারা তৈরি করেছিল, সেই জাতীয় পার্টি ও ১৪ দল এখনো আছে। তাদের বাংলাদেশে রাজনীতি করার আর কোনো সুযোগ নেই।

সভাপতির বক্তব্যে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, নুরুল হক নুরের ওপর হামলার ঘটনায় সেনাবাহিনী ও পুলিশের যেসব সদস্য জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নুর এখনো পর্যন্ত হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। অবিলম্বে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে হবে। অন্যথায় সচিবালয় ঘেরাও করা হবে। আমরা বাংলাদেশে আর জাতীয় পার্টিকে রাজনীতি করতে দেব না। আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির ওপর ভর করে ফিরে আসতে চাচ্ছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মোহাম্মদ আতাউল্লাহ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে আমরা সফল হয়েছি, কারণ আমরা ঐক্যবদ্ধ ছিলাম। কিন্তু আজকে আমরা ঐক্যবদ্ধ না থাকার কারণে নুরুল হক নুরকে মার খেতে হয়েছে।

ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন্দ বলেন, নুরের মতো একজন বিপ্লবী নেতার ওপর হামলার নিন্দা জানাই। আমরা জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ চাই। আর কোনো ফ্যাসিস্ট যেন বাংলাদেশে জন্ম না নেয়, সেজন্য আমরা অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করব।

হেফাজতে ইসলামের নেতা ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন বলেন, নুরকে আঘাত করা হয়নি, যারা ১৬ বছর আন্দোলন করেছে, তাদের আঘাত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়েছে। জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলসহ আওয়ামী লীগের সব সহযোগী দলকে নিষিদ্ধ করে আগামী নির্বাচন করতে হবে।

লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, আমরা সংস্কার, বিচার এবং ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনও চাই। সুশীলের নামে আওয়ামী লীগের কিছু ব্যক্তি টিভিতে গিয়ে বক্তব্য দেন। আমরা জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ চাই।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির শিকদার হারুন মাহমুদ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুসা বিন ইযহার, গণসংহতি আন্দোলনের বাচ্চু ভূঁইয়া, এবি পার্টির আনোয়ার সাদাত টুটুল, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব ড. গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দলের (পিএনপি) চেয়ারম্যান ফিরোজ মোহাম্মদ লিটন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) রাশেদ প্রধান, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) মোমিনুল আমিন, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) একাংশের কারি আবু তাহের, খেলাফত মজলিসের মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবু মূসা মোহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান, বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টির আবুল কাশেম মজুমদার, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মো. শামসুদ্দিন পারভেজ, ডেমোক্রেটিক লীগের খোকন চন্দ্র দাস, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) অপর অংশের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ-আল-হারুন, জনতার অধিকার পার্টির (পিআরপি) তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। গণধিকার পরিষদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম