Logo
Logo
×

সকাল বেলার পাখি

গল্প

একটি রুমালের গল্প

Icon

জব্বার আল নাঈম

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রাফির কৌতূহল নানার পুরোনো ট্রাঙ্কটা খুলে দেখবে। কিন্তু এটাতে সবসময় তালা ঝুলানো থাকে। নানি বলেন, এর ভেতরে যুদ্ধের সময়কার কিছু স্মৃতি জমা আছে। সময় হলে সবকিছু জানতে পারবে। এদিকে রাফির কিছুতেই অপেক্ষা সহ্য হচ্ছিল না। ভাবে-সময়টা কবে আসবে? এক বিকালে স্কুল থেকে ফিরেই রাফি দেখে, নানা বারান্দায় বসে ট্রাঙ্কটার তালা খুলছেন। নানা! সত্যি আজ খুলবে?

নানা হেসে বললেন, হ্যাঁ। কারণ বিজয় দিবস চলে আসছে, তুমিও বড় হয়েছ। তোমাকে একটা সত্যি গল্প শোনাবো আজ। রাফির চোখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে! ট্রাঙ্কটা খুলে নানা পুরোনো সবুজ রঙের একটা রুমাল বের করলেন। এর কোণায় লাল রঙের ছোট গোল দাগ। রাফি বলে-নানা, এটা কিসের দাগ?

নানা শ্বাস নিয়ে বলেন-এক মুক্তিযোদ্ধার দেওয়া স্মৃতি। যেদিন এটা পেয়েছিলাম সেই দিনটা... ছিল আমার জীবনে স্মরণীয়। রাফি নানার পাশে গা লাগিয়ে বসে। নানা গল্প বলতে শুরু করলেন।

১৯৭১ সাল। মুক্তিযুদ্ধ চলছে। আমি তখন তোমার মতোই ছোট, মাত্র ১২ বছর বয়স। দুপুরে গ্রামের পাশের বাগানে গোপন ঘাঁটিতে মুক্তিরা প্রস্তুতি নিচ্ছিল। দূর থেকে দেখছিলাম। হঠাৎই বিস্ফোরণের শব্দ! শত্রুরা চারপাশ ঘিরে ফেলছে। বাঙালিরা পালাচ্ছে! আমি লুকাতে গিয়ে পড়ে গেলাম! দেখলাম, এক আহত মুক্তিযোদ্ধা মাটিতে পড়ে আছেন। ইশারায় আমাকে ডাকলেন-ফিসফিস বললেন, একটা উপকার করবে? কাঁপা গলায় বললাম-করব।

এ রুমালটা বাগানের ওপারের বাঙ্কারে পৌঁছে দিও। সেখানে যারা আছে, এ চিহ্ন দেখলেই বুঝবে আমরা বেঁচে আছি। না পৌঁছালে ওরা বিপদে পড়বে। আমার তখন ভয়ে দম বন্ধ হয়ে আসছে। চারদিকে গুলি আর ধূলি। কিন্তু রুমালটা হাতে নিতেই আমার ঘুমন্ত সাহস জেগে উঠল। আমি দৌড়াচ্ছি, কানে আসছে শত্রুর গাড়ির শব্দ। মনে হচ্ছিল কলিজা গলে বের হয়ে আসবে! এরপরও বাঙ্কারের কাছে গেলাম। একজন সৈন্য রুমাল দেখে চিৎকার করে বললেন-সংকেত এসেছে! সবাই প্রস্তুত হও! তারা কয়েকজন দূতকে অন্য শিবিরে দ্রুত পাঠাল! ওই সংকেত না পেলে সৈন্যরা ভুল পথে ধরা পড়ত!

একজন মুক্তি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন-তোমার কারণেই বেঁচে গেলাম। এ রুমালটা রাখ। এটা তোমার সাহসের চিহ্ন। সেদিন রুমালের গুরুত্ব বুঝতে না পারলেও এখন বুঝছি-দেশকে সামান্য হলেও সাহায্য করেছি।

রাফি শুনছিল। তারপর জিজ্ঞেস করল, সেই মুক্তিযোদ্ধা কি বেঁচেছিলেন? নানা পকেট থেকে আরেকটি কাগজ বের করলেন। পুরোনো, হলদে হয়ে যাওয়া। এটা তার লেখা চিঠি। যুদ্ধ শেষে দিয়েছিলেন। চিঠিটা হাতে নিয়ে রাফি পড়তে শুরু করল। চিঠির শেষ লাইন-‘তুমি আমার জীবন বাঁচিয়েছিলে। একদিন তুমি হবে এই দেশের গর্ব।’

রাফি অবাক! আমি? কেন?

নানা হেসে বললেন-কারণ আজ থেকে রুমালটা তোমার। দেশের জন্য সাহস যে কোনো সময়ই লাগে। সত্য বলা, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা! এটাও এক ধরনের যুদ্ধ। রুমালটা হাতে নিল রাফি। শক্ত করে ধরল। মনে হলো হাতের ভেতর লাল-সবুজ আলো জ্বলে উঠল।

নানা, সত্যিই উপলব্ধি করছি বিজয় দিবস কী।

রাফি, বিজয় হলো সাহসের, সত্যের, ভালোবাসার। বিজয় হলো মুক্তিযুদ্ধ ও যোদ্ধাদের বীরত্ব স্মরণ।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম