ফিচার
মহান বিজয় দিবস
মেজবাহ উদ্দিন
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
১৬ ডিসেম্বর আমাদের মহান বিজয় দিবস। এটি বাঙালি জাতির জীবনে সবচেয়ে আনন্দের ও গর্বের দিন। এ দিনটি আমাদের কাছে বিশেষ হয়ে ওঠার গল্পটা আজ থেকে অনেক বছর আগের। সালটি ছিল ১৯৭১। তখন মানচিত্রে ‘বাংলাদেশ’ নামের কোনো স্বাধীন দেশ ছিল না। আমাদের এ দেশের নাম ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান’। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা আমাদের ওপর খুব অত্যাচার করত। কিন্তু বাঙালিরা তো বীরের জাতি, তারা এ অন্যায় মেনে নেয়নি।
বাংলার কামার, কুমার, জেলে, চাষি, ছাত্র, জনতা-সবাই সেদিন সাহসে বুক বেঁধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। শুরু হলো মুক্তির যুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস ধরে চলল তুমুল লড়াই। একদিকে ছিল আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনী, আর অন্যদিকে আমাদের অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তাদের কাছে হয়তো বড় অস্ত্র ছিল না, কিন্তু বুকে ছিল দেশপ্রেমের অদম্য শক্তি। সেই শক্তির কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছিল শত্রুরা।
অবশেষে এলো সেই কাঙ্ক্ষিত দিন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানি বাহিনী মাথা নিচু করে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে হার মানল। দলিলে সই করে তারা আত্মসমর্পণ করল। বিশ্বের মানচিত্রে জন্ম নিল নতুন এক দেশ আমাদের প্রিয় ‘বাংলাদেশ’। লাল-সবুজের পতাকা পতপত করে উড়ল বাংলার আকাশে। সেই থেকে ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস।
প্রতি বছর এ দিনটি আমরা খুব ধুমধাম করে পালন করি। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে লাখো মানুষ ভিড় জমায়। সবার হাতে থাকে নানা রঙের ফুল। বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ছোট-বড় সবাই সেখানে ছুটে যায়। শহরের রাস্তায়, বাড়ির ছাদে, অলিতে-গলিতে সব জায়গায় ওড়ে লাল-সবুজের পতাকা। শিশুরা লাল-সবুজ জামা পরে ঘুরে বেড়ায়। স্কুলগুলোতে হয় নানা অনুষ্ঠান। কেউ কবিতা আবৃত্তি করে, কেউ বা ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’ গানের সঙ্গে নাচে। টিভিতে দেখানো হয় কুচকাওয়াজ এবং বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। রঙবেরঙের প্যারেড দেখতে কী যে ভালো লাগে!
বিজয় দিবস শুধু উৎসবের দিন নয়, এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের কথা। তারা আমাদের জন্য একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়ে গেছেন। তাই এ দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে-আমরা দেশকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসব, দেশের তরে নিজেকে বিলিয়ে দিব, সবার আগে দেশকে স্থান দেব এবং ভালো কাজ করে দেশের সম্মান বিশ্বের বুকে আরও উঁচুতে নিয়ে যাব।
১৬ ডিসেম্বর, বিজয় দিবসের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক প্রতিটি শিশুর মনে। সবাইকে মহান বিজয় দিবসের অনেক অনেক শুভেচ্ছা!
