জানা-অজানা
আলো জ্বালে মোটিক্সিয়া
মুহিব্বুল্লাহ কাফি
প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আমরা জানি, জোনাকি পোকা মিটমিট আলো জ্বেলে নিশিরাতে চলাচল করে। অরণ্যে, ঝোপঝাড়ে, লাউ কুমড়োর মাচাতে মৃদু আলো জ্বেলে মনের সুখে উড়ে বেড়ায়। কিন্তু আমরা কি জানি, পানির নিচেও আলো জ্বালাতে পারে মাছ। কিন্তু অবাক হওয়ার মতো কথা হলো, পৃথিবীতে শতকরা প্রায় ৭৬ ভাগ সামুদ্রিক প্রাণীই বায়োলুমিনিসেন্সওয়ালা। এরা শরীর থেকে প্রধানত দুই উপায়ে উজ্জ্বল আলো তৈরি করতে পারে। এগুলো হলো, দেহের অভ্যন্তরীণ রাসায়নিক পরিবর্তন এবং শরীরে বসবাসকারী বায়োলুমিনিসেন্ট ব্যাকটেরিয়ার প্রক্রিয়ার কারণে। বিজ্ঞানীদের পাওয়া তথ্যমতে, এ আলো তৈরির জন্য প্রাণীগুলো ‘বায়োলুমিনিসেন্ট ব্যাকটেরিয়া’ ব্যবহার করে থাকে। এ আলো তৈরির প্রক্রিয়াটিকে ‘বায়োলুমিনেসেন্স’ বলা হয়। কেননা, বায়োলুমিনিসেন্স প্রাণীরা দেহের লুসিফারেজ নামক এক বিশেষ এনজাইমের কারণে এক রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে আলো উৎপন্ন করে থাকে। তেমনি একটি অদ্ভুত প্রাণী হলো মোটিক্সিয়া।
মোটিক্সিয়া দেখতে কেঁচো বা কেন্নোর মতো। কেন্নোর এক বিশেষ প্রজাতি হলো মোটিক্সিয়া সিকুওয়ি (Motyxia sequoiae)। বিশেষ এ প্রজাতি মোটিক্সিয়াও বায়োলুমিনেসেন্স প্রাণী। এদের দেহ থেকে নীলাভ-সবুজ বর্ণের আলো বের হতে দেখা যায়। এ অমেরুদণ্ডী প্রাণী তার বিশেষ প্রোটিনের মাধ্যমে সারা শরীর ঢেকে রাখে। এরা শক্ত কিউটিকলের নিচ থেকে আলো উৎপন্ন করে। বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গেছে, জোনাকির বিপরীতে এদের পেটের ওপর একটি বিশেষ অঙ্গ আছে, যা থেকে উজ্জ্বলতা এসে মোটিক্সিয়াকে নীলচে রঙে রাঙিয়ে তোলে। অন্ধকারে ফুটে ওঠে মোটিক্সিয়ার উজ্জ্বল আলো। প্রাপ্তবয়স্ক মোটিক্সিয়া দৈর্ঘ্যে ৩ থেকে ৪ সেমি, প্রস্থে ৪.৫ থেকে ৮ মিমি পর্যন্ত হতে পারে। এদের মাথা ছাড়া দেহটি ২০টি খণ্ডে বিভক্ত। মোটিক্সিয়ার ডিম গোলাকার। এরা একসঙ্গে ৭০ থেকে ১৬০টি ডিম পাড়তে পারে। ডিম প্রায় ০.৭ মিমি ব্যাসযুক্ত হয়ে থাকে। সেই ডিম প্রায় ১৪ দিন পর লার্ভা থেকে সাতটি দেহখণ্ড এবং তিন জোড়া পা নিয়ে ডিম ফুটে বের হয় বাচ্চা। লম্বা হয় প্রায় ১.৭ মিমি। বাচ্চাগুলো ডিম ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই বায়োলুমিনেসেন্স প্রদর্শন করে আলো জ্বালতে পারে।
মোটিক্সিয়া জীবন্ত ওক এবং বিশালাকার সিকোইয়া বনে ও তৃণভূমিতে দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে সচরাচর দেখতে পাওয়া যায়। এরা গাছের পাতায় বিচরণ করে। আবার কিছু আছে মাটির গর্তে থাকে। এদের প্রায় সব প্রজাতি অন্ধ। নিশাচর মোটিক্সিয়ারা দিনের আলোতে বের হয় না, রাতে চলাচল করে এবং মরা গাছপালার ছালবাকল ও পাতা খেয়ে জীবন ধারণ করে। স্ত্রী মোটিক্সিয়া পুরুষ অপেক্ষায় বড় আকৃতির হয়ে থাকে।
মোটিক্সিয়া শরীর থেকে বিষাক্ত সায়ানাইড তৈরি করতে পারে। এদের শরীর থেকে নির্গত বিষ এতটা ভয়ংকর যে কোনো নিশাচর সুস্থ প্রাণীকে মেরে ফেলতে পারে।
