Logo
Logo
×

সকাল বেলার পাখি

বিদেশি রূপকথা

পরির কেরামতি

Icon

সুব্রত চৌধুরী

প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কোনো এক দেশে পাহাড়ের পাদদেশে একটি গ্রাম ছিল। সেই গ্রামে এক এতিম মেয়ে তার দাদির সঙ্গে বসবাস করত। পাহাড়ের ফলমূল কুড়িয়ে তার দাদি স্থানীয় বাজারে বিক্রি করত আর মেয়েটি গ্রামের বনেদি পরিবারের ভেড়ার পাল পাহাড়ে চরিয়ে যা পেত তা দিয়ে জীবন ধারণ করত।

একদিন তার দাদি হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লে মেয়েটি দিশেহারা হয়ে পড়ল, কী করবে ভেবে উঠতে পারল না। হঠাৎ তার মনে পড়ে গেল দাদির কাছে শোনা পাহাড়ের গভীরে থাকা এক বিশাল পাথরের কথা। সেই পাথরে পাথর ঘষে কেউ যদি কিছু মানত করে তাহলে সে নাকি তা পেয়ে যায়। তাই সে আর দেরি না করে সে বিশাল পাথরের খোঁজে বেরিয়ে পড়ল। বেশ কিছুদূর পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে মেয়েটি বিশাল পাথরটির খোঁজ পেল। তার আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আরেকটি ছোট পাথর কুড়িয়ে নিয়ে সে বিশাল পাথরটির গায়ে ঘষতে লাগল। সে ক্রমাগত পাথর ঘষে যেতে লাগল আর দাদির সুস্থতার জন্য মনে মনে মানত করতে লাগল। হঠাৎ তাকে অবাক করে দিয়ে আগুনের ফুলকির সঙ্গে বের হয়ে এলো একটি লালপরি। লালপরি মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করল, কী চাও তুমি আমার কাছে? আমি তেমন কিছুই চাই না, শুধু চাই আমার অসুস্থ দাদিকে যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ করে তুলতে পারি। কী অসুখ তোমার দাদির? মেয়েটি তার দাদির অসুস্থতার কথা সবিস্তারে খুলে বলল। দেখি আমি কী করতে পারি বলেই লালপরিটি শূন্যে অদৃশ্য হয়ে গেল। মেয়েটি মুখ ভার করে আবারও পাথরে পাথর ঘষে যেতে লাগল। বেশ কিছুক্ষণ পর হঠাৎ ফুটফুটে এক নীলপরি একটি বড় ডালা হাতে তার সামনে এসে দাঁড়াল। মেয়েটি তাকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কে? তোমার দাদির জন্য লালপরি এসব লতাপাতা, গুল্ম আমাকে দিয়ে পাঠিয়েছে। তুমি এগুলো রোজ সিদ্ধ করে খাওয়ালে তোমার দাদি সুস্থ হয়ে উঠবে। নীলপরি মেয়েটিকে ধন্যবাদ জানানোর সুযোগ না দিয়েই অদৃশ্য হয়ে গেল আর মেয়েটি ডালাটা নিয়ে বাড়ির পথে পা বাড়াল। বাড়িতে পৌঁছে মেয়েটি নীলপরির কথামতো তার দাদিকে লতাপাতা, গুল্ম সিদ্ধ করে খাওয়াতে লাগল। কিছুদিন পর তার দাদি সুস্থ হয়ে উঠলে তাকে সে সব খুলে বলল। দাদি সব শুনে মেয়েটিকে বলল, চল একদিন গিয়ে পরিদের ধন্যবাদ জানিয়ে আসি। কিছুদিন পর মেয়েটি তার দাদিকে সঙ্গে নিয়ে বিশাল পাথরটির কাছে গেল পরিদের ধন্যবাদ জানাতে। দীর্ঘ পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে বিশাল পাথরটির কাছে পৌঁছে মেয়েটি ও তার দাদি পাথরে পাথর ঘষে যেতে লাগল, কিন্তু কারও টিকিটিও দেখতে পেল না। শেষে ক্লান্ত হয়ে তারা পাশের একটি হ্রদে পানি পান করতে গেল। তারা হ্রদে নেমে পানি পান করতে যাবে এমন সময় এক জলপরি পানির তল থেকে ভেসে উঠে এলো। জলপরি তাদের জিজ্ঞেস করল, এতদূর পাহাড়ি পথ মাড়িয়ে তোমরা কেন এখানে এসেছ? মেয়েটি জলপরিকে সব খুলে বলল। তার কথা শুনে জলপরি হো হো করে হেসে বলল, আমরা পরিরা নিঃস্বার্থভাবে অন্যের উপকার করে যাই, প্রতিদানে কিছুই চাই না বলেই জলপরিটি পানির তলে ডুব মারল।

মেয়েটি আর তার দাদি পরিদের ব্যাপার-স্যাপার কিছুই বুঝে উঠতে পারল না, একে অন্যের মুখ পানে হাঁ করে তাকিয়ে রইল। শেষে ধাতস্থ হয়ে দুজনে বাড়ির পথে পা বাড়াল।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম