Logo
Logo
×

সকাল বেলার পাখি

গল্প

রাসেলের মে দিবস

Icon

হাসনাইন ইকবাল

প্রকাশ: ০৩ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রাসেল ভোরে উঠে মায়ের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে রইল, একপাশে তার বাবাও ঘুমিয়ে আছে। তার মা আছিয়া সারা দিন পোশাক কারখানায় কাজ করে প্রায় প্রতিদিন রাত করে বাসায় ফেরে। রাসেল অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে মায়ের কাছে তার সারা দিনের জমিয়ে রাখা গল্পগুলো শোনাবে বলে। কিন্তু অধিকাংশ দিনই ওভারটাইম করতে হয় বলে মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় না রাসেলের। সকালে রাসেলের ঘুম ভাঙার আগেই মা চলে যান কাজে। তারপরও মাঝে মধ্যে কোনো দিন যদি রাসেলের একটু আগে ঘুম ভাঙে, তখনই রাসেল মায়ের দেখা পায়। বাসায় সারা দিন দাদির কাছে থাকে সে। তার বাবা সকালে একটা অটোরিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। কোনো কোনো দিন দুপুরে খেতে আসেন আবার কোনো দিন আসেনই না। সারা দিন কাটে তার ঢাকার আগুনঝরা রাস্তায় রিকশার প্যাডেল মেরে। যখন বাসায় ফেরে, তখন বাবার জামাটা ভিজে গায়ের সঙ্গে লেপটে থাকে। রাসেল বাবার ভেজা জামা ছাড়ার আগেই বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এটা রাসেলের প্রতিদিনকার রুটিন।

আজ মে দিবস-শ্রমিকের অধিকার আর সম্মানের দিন। স্কুল ছুটির নোটিস পড়ে শোনানোর সময় কামাল স্যার বলেছিলেন-‘মে দিবস হলো সেসব মানুষের দিন, যারা আমাদের জীবনকে সুন্দর ও মসৃণ করার জন্য সারা দিন কঠোর পরিশ্রম করে যায়। আমাদের সভ্যতার প্রতিটি ইট-পাথরে তাদের রক্ত ও ঘামের দাগ লেগে আছে। সেজন্য এ দিনে সেসব মানুষদের সম্মান জানানো উচিত।’ এ ভারী কথার অধিকাংশই রাসেলের বোধগম্য হয়নি। তবে রাসেল বুঝতে পেরেছে-মে দিবস মানে তার বাবা ও মায়ের দিবস। তার মা-বাবাই তো সেই অক্লান্ত শ্রমিক! যারা দিন-রাত পরিশ্রম করে আমাদের জীবনকে সুন্দর করে তুলছে প্রতিদিন। কিন্তু তাদের তো কেউ সম্মান জানায় না, কেউ বলে না, ধন্যবাদ। তাই রাসেল নিজের মাটির ব্যাংকে জমানো টাকা দিয়ে আজ বাজার থেকে কয়েকটা কাঁচা ফুল কিনে আনল-গোলাপ, বেলি আর শিউলি। এরপর পুরোনো খাতার একটা পাতা ছিঁড়ে তাতে কাঁচা হাতে লিখে ফেলল, ‘মা-বাবা, তোমরা আমার গর্ব। শুভ মে দিবস।’

বাড়ি ফিরতেই রাসেল দেখল, মা ক্লান্ত হয়ে আধাপাকা টিনের ঘরের একপাশে পাতানো চাটাইয়ের ওপর বসে আছেন। বাবা তখনো রিকশা নিয়ে বাইরে। রাসেল আস্তে গিয়ে মায়ের হাতে ফুলগুলো দিল আর তার বানানো কার্ডটা পাশে রাখল। মা ঘুম ভেঙে চমকে তাকালেন। রাসেলের চোখে চিকচিক করছে আনন্দের ঝিলিক। আছিয়া হেসে ফেললেন, সে হাসিতে ছিল হাজার কষ্ট ভুলে যাওয়ার মধুর প্রশান্তি। তিনি রাসেলকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘তুই আমার পৃথিবী, রাসেল।’ বিকালে বাবা ঘরে ফিরলেন। রাসেল বাবার হাতেও দিল ছোট্ট একটা ফুল আর বলল, ‘শুভ মে দিবস, বাবা।’

বাবা অবাক হয়ে তাকালেন ছেলের দিকে। ক্লান্ত কপালে ছোট্ট একটা হাসি ফুটে উঠল। বাবা টান দিয়ে রাসেলকে কাঁধে তুলে নিয়ে হৈ হৈ করে ঘুরতে লাগলেন। রাসেল হো হো করে হাসতে লাগল। আছিয়া রান্নাঘর থেকে দৌড়ে এসে এ দৃশ্য দেখে ভয় ও আনন্দমিশ্রিত কণ্ঠে চিৎকার করতে লাগল-পোলাডা পইড়া বেথা পাইব, নিচে নামাও প্লিজ।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম