Logo
Logo
×

সকাল বেলার পাখি

মায়ের কোলে

Icon

হাসনাইন আহমদ

প্রকাশ: ১০ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অনেকক্ষণ ধরেই রাফিদ সামিনদের আশপাশে ঘুরঘুর করছিল কুকুর ছানাটি। চিপস, কেক, বিস্কুট খেতে খেতে কুকুর ছানাটিকেও একটি দুটি খেতে দেয়। ছানাটিও খুশি হয়ে খায়। সামিন বাবাকে জিজ্ঞেস করে, কুকুর ছানাটি একা কীভাবে এলো? ওর মা কোথায়? সামিন, রাফিদ দুই ভাই আজ আব্বু আম্মুর সঙ্গে রমনা পার্কে বেড়াতে এসেছে। সামিন পড়ে ক্লাস ফোরে। রাফিদ এইটে। স্কুল ছুটির দিন প্রায়ই ওরা এখানে ঘুরতে আসে। গাছের নির্মল ছায়াশীতল পরিবেশ। মাঝে মধ্যে দু-একটা কাঠবিড়ালেরও দেখা মেলে। খাবারের সন্ধানে গাছ থেকে হুট করে নামে। লেজ উঁচিয়ে ঢেউয়ের মতো তিরতির করে হেঁটে চলে। দেখতে রাফিদের খুব ভালো লাগে। টুকটাক খেলাধুলাও করা যায় এখানে। ব্যাগে ক্রিকেট ব্যাট বল ও ব্যাডমিন্টন এনেছে। ওরা ক্রিকেট খেলা শুরু করে। বাবা বল করছিল। রাফিদ ব্যাট আর সামিন উইকেট কিপিং। আম্মু একটু দূরে দাঁড়িয়েছিলেন। তার কাছাকাছি বল গেলেই কুড়িয়ে দিয়ে সহযোগিতা করছেন। ফিল্ডার বলা যায়। সামিন স্ট্যাম্পের পেছনে দাঁড়ায়। বল কুড়িয়ে আনার জন্য ডানে বামে যেদিকেই যায় কুকুর ছানাটিও তার সঙ্গে দৌড়ে যায়। আবার ফিরে আসে। মনে হয় সেও ক্রিকেট খেলছে। খুব মজা পাচ্ছে। রাফিদ দূরে বল ছুড়ে মারলে কুকুর ছানাটিও বলের দিকে দৌড়ে যায়। বল নিয়ে খেলা করে। আম্মু ঘাসে কুড়িয়ে পাওয়া বলের মতো একটা বুনো ফল ছুড়ে মারতেই কুকুর ছানাটি দৌড়ে সেদিকে যায়। বুনো ফলটিকে বল বানিয়ে চার হাত পায়ে খেলা করে। বাহ দারুণ তো! রাফিদরাও খুব আনন্দ পায়। কুকুর ছানাটি ওদের বন্ধু ভাবে। রাফিদ সামিনরা মনোযোগ দিয়ে ক্রিকেট খেলছিল। হঠাৎ দেখে কুকুর ছানাটি নেই। আরে এইমাত্রই তো এখানে ছিল! গেল কই? এদিক ওদিক কোথাও নেই। একটু দূরে সেডের দিকে চোখ যায়। কয়েকজন লোক কুকুর ছানাটিকে নিয়ে কী যেন করছে। সবাই দ্রুত সেদিকে যায়। দেখে লোকগুলো কুকুর ছানাটির গলায় একটা দড়ি বেঁধে টানাটানি করছে। কুকুর ছানাটি যেতে চাচ্ছে না। তাই জোরাজুরি করে হেঁচড়ে টান দিচ্ছে। রাফিদের বাবা লোকগুলোকে জিজ্ঞেস করেন, কী ব্যাপার এর সঙ্গে এমন করছেন কেন আপনারা? কোথায় নিয়ে যেতে চাচ্ছেন? লোকগুলো ত্যাঁড়া উত্তর দেয়, যেখানে ইচ্ছা নিয়ে যাচ্ছি তাতে আপনাদের কি সমস্যা? এভাবে এক কথা দুকথা অনেক কথা হয়। অনেক তর্কবিতর্ক হয়। কিন্তু লোকগুলো নাছোড়বান্দা। কোনো পাত্তাই দেয় না ওদের। তারা কুকুর ছানাটি নিয়েই যাবে। টেনে নিতে না পেরে একপর্যায়ে রাগ করে দড়ি ধরে ওপরের দিকে ঝুলিয়ে রওয়ানা দেয়। অনেকটা বাজার থেকে মুরগি ঝুলিয়ে আনার মতো। এতে কুকুর ছানাটির গলায় ফাঁস পড়ে। কিউ কিউ চিৎকার করে ওঠে। নিষ্ঠুর লোকগুলোকে শত চেষ্টা করেও থামানো যাচ্ছিল না। হঠাৎ রাফিদের আম্মু বলল, দেখ দেখ ওর মা আসছে! সবাই তাকিয়ে দেখে সত্যিই মা কুকুরটি ছুটে আসছে। হুবহু ছানাটির মতোই গায়ের রং। ক্ষিপ্র গতিতে দৌড়ে আসছে। দৌড়াতে দৌড়াতে ছানাটির কাছে এসে ঘেউ ঘেউ করে চিৎকার করতে লাগল। যে করেই হোক বাচ্চাকে বাঁচাতে হবে। মা বেঁচে থাকতে চোখের সামনে কিছুতেই সন্তানের ক্ষতি হতে দেওয়া যায় না। পৃথিবীর সব মায়েরাই এমন। ঠোঁট উঁচিয়ে দাঁত ভেঙচি কেটে আকাশ বাতাস ভারী করে আরও জোরে আওয়াজ করতে লাগল। একপর্যায়ে লোকগুলোর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার পজিশন নিল। এতেই কাজ হয়ে যায়। দুষ্ট লোকগুলো ভয়ে কুকুর ছানাটি ছেড়ে দেয়। ছানাটি দৌড়ে মায়ের কাছে ছুটে আসে। চুকচুক করে মায়ের দুধ খেতে খেতে মনের সুখে লেজ নাড়ে। মা কুকুরটিও চেটে চেটে বাচ্চাকে আদর করে। মায়ের কোলে ফিরে আসার আনন্দে কিউ কিউ করে কুকুর ছানাটি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম