Logo
Logo
×

সকাল বেলার পাখি

গল্প

মিহির

Icon

ফারাহ্ আজাদ দোলন

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঝাঁকড়া চুলো মিহির স্কুল পথে হাঁটছে। নভেম্বর মাস। ভালোই ঠান্ডা ও কুয়াশা পড়েছে আজ। ওর অভ্যাস হচ্ছে মাথা নিচু করে হেঁটে চলা। মাঝেমধ্যে কেডসের ফিতেটা বেঁধে নিচ্ছে। মিহিরের বাবা বলেছে, তাকে ভেলক্রো লাগানো কেডস কিনে দেবেন। তার বন্ধুরা কি সুন্দর করে ভেলক্রো দেওয়া জুতা পরে। এক টানে ভেলক্রোটা খুলে ফেলে আবার মুহূর্তেই লাগিয়ে দেয়। ওদের সবার সুন্দর সুন্দর পানির ফ্লাক্সও আছে। মিহির অবশ্য বোতলে করেই পানি নেয়। ওরা কত রকম যে টিফিন খায়! স্যান্ডউইচ, নুডুলস আরও কত্ত কি! মিহির অবশ্য রুটি খায়। কখনো আলু ভাজি দিয়ে, কখনো গুড় দিয়ে। তবে তার চিনি দিয়ে রুটি খেতে বেশি ভালো লাগে। কারণ সেদিন আবার রুটিতে একটুখানি ঘি লাগানো থাকে। এসব তো আর বাবার কাছে চাইতে পারে না! সে বুঝতে পারে বাবা একটি ব্যাংকের কর্মচারীর কাজ করেন। মাস শেষে যে বেতন পান তাতে করে কোনোমতে দিন চলে তাদের। বন্ধুরা তাকে নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করে। তাদের একটু এড়িয়েই চলে। মিহিরের অবশ্য তাতে মন খারাপ লাগে না! একা একা থাকতে বেশ লাগে তার।

সেদিনও সে একা একা হাঁটছিল। তার গায়ে একটা বড় নীল রঙের জ্যাকেট। এটা তার মামা বিদেশ থেকে পাঠিয়েছেন। মামা আমেরিকাতে পড়তে গিয়েছেন। সে অবশ্য তাকে দেখেনি। তবে তার অনেক গল্প শুনেছে। কোটটা ওর ভারী পছন্দ হয়েছে। শীত পড়ার পর ও সারাক্ষণ সেটা পরে ঘুরে বেড়ায়।

একদিন রাস্তার বাঁ পাশের ঝোপের পাশ দিয়ে হাঁটছিল। হঠাৎ করে একটু মৃদু কণ্ঠের কুঁই কুঁই শব্দ শুনতে পায় সে। একটু থেমে ঝোপের মধ্যে ঢুকে শব্দটা লক্ষ করে, একটা চটের ব্যাগ দেখতে পায়। মুখ বন্ধ ব্যাগটার মধ্য থেকে শব্দটা আসছে। মিহির তার স্কুল ব্যাগটা নামিয়ে রেখে ব্যাগের মুখটা খোলে। সে দেখে ভেতরে একটি ছোট্ট কুকুরের ছানা। লাল সাদা ছোপওয়ালা সেই ছানাটা। দেখতে ভীষণ সুন্দর! মুহূর্তেই সে সিদ্ধান্ত নেয় বাচ্চাকে এখানে রেখে যাবে না। নিয়ে যাবে বাসাতে।

ছোট্ট ছানাটাকে সে তার নীল বড় জ্যাকেটের মধ্যে ঢুকিয়ে নেয়। এরপর স্কুলের পথে হাঁটতে থাকে। স্কুলে পৌঁছুতে পৌঁছুতে সে দেখে কি কুকুরছানাটা আর কাঁদছে না! সে তার গায়ের ওমে চুপ করে আছে। ছানাটাকে নিয়ে সে ক্লাসে ঢুকে একেবারেই পেছনের বেঞ্চে গিয়ে বসল আজ। সাধারণত সে সব সময় সামনেই বসে। আজকে আর তা করল না। কিন্তু ছানাটা মাঝে মাঝে কুঁই কুঁই শব্দ করতেই, ক্লাস বন্ধুরা টের পেয়ে যায়। ওরা বলে এ্যাই তোর ব্যাগ থেকে কিসের শব্দ আসছে রে মিহির?

ঋজু মাথা নাড়ে। ভাবখানা কই নাতো! সে ছানাটাকে তাড়াতাড়ি ব্যাগের মধ্যে এক কোণে লুকিয়ে রাখে। আজকে ওর একটুও ক্লাসে মন বসে না! বাংলা ক্লাসে স্যার পড়া বোঝাচ্ছেন আবারও কুঁই কুঁই করে ডেকে উঠল ছানাটা। স্যার বললেন, ‘ক্লাসে কুকুরের বাচ্চার ডাক শুনলাম মনে হলো?’

কেউ কেউ বলল, ‘স্যার মিহিরের কাছ থেকে শব্দটা আসছে।’ স্যার বললেন, কী ব্যাপার মিহির? মিহির স্যারের মুখের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। স্যার তাকে যদিও খুব আদর করেন। কিন্তু আজকে মিহির কিছু বলতে পারছে না! কী ব্যাপার মিহির কথা বলছ না কেন? আর তুমি আজ পেছনে বসেছ কেন?

- স্যার একটা কুকুরছানা।

- কুকুরছানা? কোথায় সে? ক্লাসে কীভাবে এলো?

বেমক্কা এতগুলো প্রশ্নে মিহির আরও থতমত খেয়ে যায়। সে তোতলাতে শুরু করে। মানে স্যার, ওই যে ঝোপের মধ্যে শীতে একটি কুকুরের বাচ্চা!

স্যার কী ভেবে যেন চুপ হয়ে গেলেন। পেছন ফিরে আবারও বোর্ডের দিকে মুখ করে ব্ল্যাকবোর্ডে লিখতে শুরু করলেন। মিহির হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। এটিই ছিল শেষ ক্লাস। সবাই ক্লাস থেকে বের হয়ে গেলে সে আস্তে আস্তে ছানাটিকে ব্যাগ থেকে বের করে আবারও জ্যাকেটের মধ্যে ঢেকে নিল। সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ছানাটাকে বাড়িতে নিয়ে যাবে। এত ছোট বাচ্চাকে কোনোভাবেই রাস্তায় রেখে যাওয়া চলবে না। একটু ভেবে নিয়ে সে বাড়ির পথ ধরে!

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম