গল্প
সানজানার চারাগাছ
জুবায়ের হুসাইন
প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
স্কুল বাউন্ডারি পার হলে পিচের রাস্তা। রাস্তার দুপাশে সুন্দর বিল্ডিংগুলো দাঁড়িয়ে আছে। একটু এগোলে রিকশাস্ট্যান্ড। সানজানার বড় বোন সানজিদা স্কুল গেট থেকেই সানজানাকে রিসিভ করে। বিশেষ কারণে কলেজ বন্ধ থাকায় কয়েক দিন থেকে ছোট বোনকে স্কুল থেকে বাড়ি নেওয়ার দায়িত্ব তার। সানজানা প্রফুল্ল মন নিয়ে ক্লাসরুম থেকে বের হলেও গেট পেরিয়ে সানজিদার সঙ্গে কয়েক কদম চলার পর দপ্ করে মুখের হাসি মিলিয়ে গেল। ঠিক যেমনটি করে বর্ষার এ সময়টাতে তপ্ত রোদের মাঝে হঠাৎ হঠাৎ ঈশান কোণে মেঘ জমে ওঠে। রাস্তার বাম পাশের এ বাড়িটার সামনে খানিকটা খালি জায়গা। বৃষ্টির নতুন পানিতে সবুজ ঘাসে ভরে গেছে। মাঝে মাঝে মাথা তুলেছে অন্য গাছের সবুজ পল্লব। থমথমে মুখে একদৃষ্টে একটি নির্দিষ্ট স্থানের দিকে তাকিয়ে আছে সানজানা।
দাঁড়াল সানজিদাও। তবে বোনের মন খারাপের কারণটা বুঝতে পেরে বেশি ঘাবড়াল না।
বাতাবিনেবু গাছের ছায়ায় জন্ম নিয়েছিল দুই জোড়া রুয়েলিয়া, গ্রামবাংলায় যাকে বলে পটপটি ফুল। এখন চারাগুলো দুমড়ে-মুচড়ে মাটির সঙ্গে প্রায় লেপ্টে আছে। ওগুলোর জন্যই সানজানার মন খারাপ। কেননা, তিন দিন ধরে ওটাই পাহারা দিয়ে আসছিল বোনটা। হয়তো চেয়েছিল আর একটু বড় হলে চারাগুলো উঠিয়ে নিয়ে বাড়িতে টবে লাগিয়ে দেবে।
‘কী ব্যাপার! আমার বোনটির চাঁদমাখা মুখটা অমন কালো মেঘে ঢেকে গেল কেন?’ জিজ্ঞেস করল সানজিদা।
সানজানা কিছু বলে না। মুখটা আরও অন্ধকার হয়ে যায়। এই বুঝি অঝোরে কান্না শুরু করবে!
‘ওই ফুলগাছের জন্য তোমার মন খারাপ?’ আবার বলল সানজিদা। ‘তুমি কি ওগুলো নিতে চেয়েছিলে?’
সানজানা উপর-নিচ মাথা নাড়ে। সজল হয়ে উঠল চোখ জোড়া।
‘মিষ্টি বোন আমার, একদম মন খারাপ করে না। তোমাকে আমি অনেক ফুলের চারা কিনে দেব।’
‘সত্যি বুবু?’ সানজানার যেন বিশ্বাস হয় না। তাই হাসতে গিয়েও হাসতে পারে না।
সানজিদা আলত করে বোনের মুখটা টিপে দিল। বলল, ‘চলো, আজই আমরা ফুলের চারা কিনব। বর্ষার ফুলের চারা দিয়ে আমরা আমাদের বারান্দা সাজিয়ে তুলব।’
সানজানার মুখটা খুশিতে ভরে গেল। সব শরীরে সেই খুশির ঝলক ছড়িয়ে পড়ল। ডানা থাকলে উড়ালই দিত হয়তো!
স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথেই একটা নার্সারি পড়ে। সেখান থেকে বাছাই করে গাছের চারা কিনল দুবোন। খুশি মনে রিকশায় করে যখন বাড়ি ফিরছে, তখনই ঝমঝম করে বৃষ্টি নামল। ওরা রিকশা ছেড়ে দিল। ওদের হাতে পলিথিন ব্যাগে গাছের চারাগুলো। বইয়ের ব্যাগ যে ভিজে যাচ্ছে, সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই কারোর। ওরা যেসব ফুলের চারা কিনেছে তা হলো-রেইন লিলি, পটপটি ফুল, অ্যারোমেটিক জুঁই, ম্যান্ডেভিলা, বেগম বাহার বা দাঁতরাঙা, হাজারি বেলি, করবী, মর্নিং গ্লোরি ও মাধবীলতা। সবই বর্ষার ফুল।
বিভিন্ন রং ও জাতের ফুলের মতো সানজানার মনটাও রঙিন পাপড়ি মেলে যেন দুলছে। বারান্দার গ্রিল আর আশপাশটার সৌন্দর্য এখনই দেখতে পাচ্ছেও। মৌমাছি-প্রজাপতিদের সঙ্গে ও নিজেও যেন উড়ে উড়ে সেই অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করছে। সঙ্গে বৃষ্টির মন ভালো করা ঘ্রাণ ওর ছোট্ট মনটাকে চনমনে করে তুলছে।
