|
ফলো করুন |
|
|---|---|
এপাড়ে কবরস্থান, ওপাড়ে শ্মশানঘাট। মাঝখানে বয়ে চলেছে ছোট্ট হানু নদী। এ রাস্তা দিয়েই মানুষ জেলা শহর, থানা শহর এবং অন্যান্য গ্রাম-গঞ্জে যাতায়াত করে। এপাড়ে কবরস্থান, ওপাড়ে শ্মসানঘাট এমন জায়গা নিয়ে রয়েছে অনেক কল্প কাহিনি। অন্ধকার রাতে এ চরপাড়া এলাকা একাকী অতিক্রম করতে ভূত-প্রেতের কবলে পড়তে হয়। মানুষ ভয় পায়, বিপদে পড়ে। ভূতে মানুষকে তুলে নিয়ে যায়। এমন সব কাহিনি এলাকার মানুষের মুখে মুখে। তারপরও মানুষ বাধ্য হয়েই রাত-বিরাত এ রাস্তায় চলাচল করে।
লবি তার মুরুব্বিদের মুখে চরপাড়ার অনেক ভয়াল গল্প শুনেছে। তারপরও ছোট্ট বয়স থেকে জীবন-যুদ্ধের লড়াকু সৈনিক লবিকে এক গভীর রাতে একা আসতে হলো এ রাস্তা দিয়েই। চাঁদের আলো ঝলমল করছে। কিন্তু রাতের গভীরতায় সুনসান নীরবতা। গ্রাম বলে কথা। এত রাতে গ্রামে কেউ জেগে থাকে না। কিশোর লবির মাথায় চাল-আটা মিলে ৩০ কেজির একটা বস্তা। হাতে আবার তেল, চিনি মিলিয়ে ৬-৭ কেজির একটা ব্যাগ। লবি হাঁটছে কবরস্থানের পাশ দিয়ে মাটির রাস্তা ধরে। এ ভয়াল জায়গায় এসে তার মনে হলো কে যেন তার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটছে। থামলে আর তার সাড়া পাওয়া যায় না। ডানে বায়ে তাকিয়ে কাউকেই দেখা যায় না ।
লবির গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল, শরীরের সব লোম যেন একসঙ্গে দাঁড়িয়ে গেছে। কী করবে সে? এত রাত, মানুষের কোনো সাড়া-শব্দ নেই। অদূরেও কোনো বাড়িতে আলো দেখা যাচ্ছে না। ভয় নিয়েই এগোতে থাকে লবি। কিছুদূর গিয়ে একটা পুরোনো ঝাকড়া বটগাছ। দিনের বেলায় ক্লান্ত পথিকরা কিছুটা জিরিয়ে নেয়। রাত গভীর, তারপরও লবি মাথার বোঝা নামিয়ে বসল বটতলায়। ভয় কিন্তু কমেনি, আরও বেড়েছে।
লবির এখন প্রয়োজন মানুষের সহযোগিতা। তাই সে উচ্চস্বরে কয়েকটা চিৎকার দিল। কিন্তু কারও সাড়া পাওয়া গেল না। ভূতের কবলে পড়লাম না তো-এমনটিই তার বারবার মনে পড়ছে। কারণ তখন সে শ্মশানঘাটের খুব কাছে। মৃত মানুষ পোড়ানোর পর তাদের আত্মা নাকি ভূত-প্রেত হয়ে আশপাশেই ঘুরে বেড়ায়। ভীত-বিহ্বল মানুষের মনের ওপর ভূত-প্রেতরা নানা ভীতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে। এমন গল্প অনেক শুনেছে লবি।
এত রাতে চিৎকারেও যখন কোনো মানুষ তার সাহায্যে এগিয়ে এলো না তখন সামনে পথ বাড়ানো ছাড়া উপায় কি? আবারও মাথায় বোঝা উঠিয়ে, হাতে ব্যাগ নিল । আরও ২ কিলোমিটর দূরে তার বাড়ি। রাত যতই হোক তাকে বাড়ি পৌঁছতে হবে। রাত জেগে তার পথপানে চেয়ে থাকে মা। যত দোয়া জানে লবি-সব পড়ল। যাত্রা শুরু করতেই সেই আগের অবস্থা, মনে হচ্ছে কেউ চলছে তার সঙ্গে। এবার আশপাশে ভালো করে খেয়াল করল। কিন্তু অবাক হয়ে লবি দেখল যে তার সঙ্গে এতক্ষণ যে হাঁটছে সে আসলে কেউ নয়। লবির পায়ের স্যান্ডেলে যে শব্দ হচ্ছিল, তাতেই তার মনে হয়েছিল যে কেউ তার সঙ্গে হাঁটছে। থামলে সেও থামে। সে বুঝল ভূত বলে কিছু নেই, সবই মনের ভুল।
এবার সাহস করে পথ চলতে লাগল, জোরে জোরে হাঁটছে সে। কারণ এখন ভয় নেই, বরং সাহস বেড়ে গেছে। সে যত জোরে হাঁটছে পায়ের স্যান্ডেলের শব্দ তত জোরে হচ্ছে। যখন বাড়ি পৌঁছে গেল তখন সে দেখল, মা ঠিকই দাঁড়িয়ে আছে তার কলিজার টুকরার পথ চেয়ে। মাকে তার চরপাড়ার ভূতের গল্প শোনাল লবি।
