গল্প
টুকটুকির জাদুর ছাতা
পল্লব শাহরিয়ার
প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
টুকটুকি এক ছোট্ট হলুদ পাখি। সে বাস করে বাঁশঝাড়ের মাথায়, তার মায়ের বানানো গোল পাকানো নীড়ে। খুব দুষ্টু আর কৌতূহলী। সেদিন সকাল থেকে আকাশ ছিল কালো মেঘে ঢেকে। হঠাৎ বৃষ্টি নেমে এলো। প্রথমে ফোঁটা ফোঁটা, তারপর একটানা টুপটাপ শব্দে ঝরতে লাগল। গাছের পাতা ধুয়ে ধুয়ে সজীব হয়ে উঠল। কিন্তু টুকটুকি গাছের এক ডালে বসে কী যেন ভাবছে। হঠাৎ তার মনে হলো, ও মা! আমি তো ভিজছি না! চারদিকে বৃষ্টি, অথচ আমার পালকে একফোঁটাও পানি ঢুকছে না! বৃষ্টি তো পড়ছে, গাছের পাতা ভিজে গেছে, বাঁশের গুঁড়ি টলটল করছে, সে ডানার নিচে তাকিয়ে দেখে, সত্যি! বৃষ্টির পানি গড়িয়ে পড়ছে, কিন্তু পালক শুকনোই আছে-টুকটুকি ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠল, মা! মা! আমার পালকে জাদু লেগেছে! আমি কী পাখি না জাদুকর হয়ে গেছি? তার মা হেসে বললেন, বোকা মেয়ে, ওটা জাদু নয়। ওটা হচ্ছে প্রকৃতির জাদু। তবে চাইলে তুমি বুড়ি হাঁড়ি মাসির কাছে গিয়ে জানতে পার! বুড়ি হাঁড়ি মাসি ছিল এক বয়স্ক টিয়া পাখি, তার পালক একটু ধূসর হয়ে গেছে। সব পাখি ওকে ‘পালকের পণ্ডিত’ বলে ডাকত। টুকটুকি ঝপ করে উড়ে গিয়ে মাসির সামনে গিয়ে বসে পড়ল। গিয়ে দেখল, মাসি বসে আছে, চোখ আধা-মেলা, যেন বৃষ্টি শুনে গান গাইছে। টুকটুকি হুড়মুড় করে বলে উঠল, মাসি! একটা দারুণ রহস্য ধরেছি! বলো তো, কেন আমাদের পালক ভিজে না? হাঁড়ি মাসি হেসে বললেন, আরে না রে টুকটুকি! এটা জাদু নয়, এটা হচ্ছে প্রাকৃতিক কৌশল। আমি তোদের সময়েও এমন এক দুষ্টু পাখি ছিলাম। তখন আমারও এমন প্রশ্ন মাথায় আসত! টুকটুকি আগ্রহে গা ছুঁইয়ে বসল। মাসি পালক ঝাঁকিয়ে বললেন, তুমি জানো, আমরা পাখিরা নিজের যত্ন নিজেই নেই? আমাদের শরীরের ঠিক পিঠের কাছাকাছি থাকে একটা ছোট্ট গ্রন্থি, নাম ‘প্রীন গ্রন্থি’। সেখান থেকে এক ধরনের তেল তৈরি হয়। আমরা সেই তেল মুখে নিয়ে আমাদের পালকে মাখি। টুকটুকি চমকে উঠল, মানে, আমরা নিজেরা তেল মেখে রাখি? নিজেদের পালক পরিষ্কার রাখি? ঠিক তাই! মাসি বললেন, এই কাজকে বলে ‘প্রীনিং’। রোজ সকালে ওঠার পর আমরা যখন পালক গুছিয়ে নিই, তখনই সেই তেল ব্যবহার করি। এটা এক ধরনের প্রাকৃতিক ছাতা, যাতে বৃষ্টি না ঢোকে, আর পালক হালকা থাকে। না হলে পালক ভারী হয়ে গেলে ওড়া বন্ধ হয়ে যেত।
টুকটুকি চোখ বড় বড় করে বলল, তাহলে আমরা নিজেরাই নিজেদের ছাতা বানিয়ে নেই? তুমি ঠিক ধরেছ, হাঁড়ি মাসি বললেন, আর এ কারণেই তো আমরা পাখিরা এত সহজে ওড়ে যাই, এমনকি ঝড়ের দিনেও। তেল পালককে শুধু ভেজা থেকে রক্ষা করে না, এও নিশ্চিত করে যে ঠান্ডা বা পানি আমাদের শরীরের গভীরে যেন না পৌঁছায়। টুকটুকি এবার একেবারে মুগ্ধ। সে বলল, মাসি, তাহলে আমরা সবাই তো জাদু পাখি! আমি ভাবছিলাম শুধু আমার পালকে জাদু আছে! সব পাখি হেসে উঠল। হাঁড়ি মাসি বললেন, তাই রোজ পালক পরিচর্যা করতে হবে, বুঝলে? এটা শুধু রূপচর্চা না, বাঁচার জন্যও দরকার।
