আফগানদের বিদায় করে বাংলাদেশকে আনন্দে ভাসাল শ্রীলঙ্কা
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:১৭ এএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
‘ছোট বেলা থেকেই আমি শ্রীলঙ্কার সমর্থক’— সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুই দিন আগ থেকেই এমন সব রসিকতা ঘুরে বেড়াচ্ছিল। কেন? কারণ শ্রীলঙ্কা শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারিয়ে দিলেই যে শেষ চারে চলে যেত বাংলাদেশ!
শেষ দুই দিনে এভাবে গজিয়ে ওঠা নতুন ‘ভক্ত’দের হতাশ করেনি লঙ্কানরা। ১৭০ রানের বিশাল লক্ষ্য তারা তাড়া করে ফেলেছে ৮ বল হাতে রেখেই। আর তাতেই বিদায়ঘণ্টা বেজে গেল আফগানিস্তানের। শ্রীলঙ্কা তাই শেষ চারে গেল বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে।
বাংলাদেশের চোখ আছে এই ম্যাচে, সেটা চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যাচ্ছিল। সেটা আঁচ করতে পেরেছিলেন ধারাভাষ্যকার রাসেল আরনল্ডও। রান তাড়া করার খুব কাছাকাছি শ্রীলঙ্কা, তখন বলেই ফেললেন, ‘এখন প্রত্যেকটা রান উদযাপিত হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটে। আমি নিশ্চিত কলম্বোর চেয়েও বড় উল্লাসটা হবে ঢাকায়।’
কুশল মেন্ডিস যখন দ্বিতীয় চারটা মেরে জয় নিশ্চিত করলেন, তখন বললেন, ‘আতহার আলী খানের রুমে এখন সম্ভবত পার্টিটা শুরুই হয়ে গেছে। শ্রীলঙ্কা জিতে গেছে!’ দুবাইয়ের খবর পাওয়া যায়নি। ১৩০ কিলোমিটার দূরে থাকা বাংলাদেশ দলও অধীর আগ্রহে ম্যাচটা দেখেছে। তবে তাদের প্রতিক্রিয়া কী, সেটা জানতে বোধ করি দলের কাউকে ফোন বা মেসেজ দিতে হবে না!
অথচ ঘণ্টা দুয়েক আগেও পরিস্থিতিটা ছিল পুরোপুরি উল্টো। নুয়ান তুষারার তোপে পড়ে আফগানিস্তানের রানটা যেখানে ১৩০ ছোঁয় কি না তা নিয়েই সন্দেহ ছিল, সেখানে কি-না তাদের রানটা গিয়ে দাঁড়াল ১৬৯-তে! তার কারণ ছিলেন মোহাম্মদ নবী, তার ২২ বলে ৬০ রানের ইনিংসের চার ভাগের তিন ভাগই যে এসেছে শেষ দুই ওভারে!
বাংলাদেশের ভিলেন অবশ্য হয়ে গিয়েছিলেন অন্য একজন। তিনি দুনিথ ভেল্লালাগে। কারণ শেষ ওভারে পাঁচ ছক্কা হজম করাটাই একমাত্র নয়; তার চেয়েও বড় কারণ লুকিয়ে ছিল আরও একটু পেছনে। মোহাম্মদ নবী তখন ৭ বলে ৬ রানে ব্যাট করছেন, তখনই ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ভেল্লালাগের হাতে, সেটা তিনি নিতে পারেননি।
সেটা হলে আফগানরা সপ্তম উইকেট খোয়াত আরও একটু আগে। সবচেয়ে বড় বিষয়, পরের ওভারে রশিদের বিদায়ের পর স্বীকৃত ব্যাটার থাকত না একজনও। তখন নিশ্চয়ই শ্রীলঙ্কার সামনে ১৭০ রানের পাহাড় দাঁড় করাতে পারত না আফগানিস্তান।
হঠাত শ্রীলঙ্কার এমন পাঁড় ভক্ত হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশের মানুষজন, কারণ নিজেদের ভাগ্যটাও জড়িয়ে ছিল তাদের সঙ্গে। শ্রীলঙ্কা জিতলেই কেবল হাসত বাংলাদেশ। আফগানিস্তান জিতলেও হাসতে পারত, কিন্তু সেটার জন্য অনেক বড় জয় প্রয়োজন ছিল তাদের।
নিজেদের জন্য হলে ভিন্ন কথা, কিন্তু পরের জন্য কে যায় ৬৯ রান বা ৫০ বল হাতে রেখে জেতার চেষ্টা করতে? কিংবা শ্রীলঙ্কার কথাই ভাবুন? তাদের শেষ চার নিশ্চিত করতে হলে ১০১ রান করতে পারলেই হতো।
যদি এরপর লঙ্কানরা সুতোয় ঢিল দিয়ে দেয়? অতীতে তো আর তাদের সঙ্গে ঝামেলা কম হয়নি! ষড়যন্ত্র তত্ত্বে পাঁড় বিশ্বাসী জাতির মনে ভয় ধরাটা তাই অমূলক কিছু ছিল না আদৌ।
তবে কুশল মেন্ডিস একাই সেসব অবিশ্বাস আর ভয় ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দিলেন। ১৭০ রানের লক্ষ্যটা আবুধাবির পিচের কথা মাথায় রাখলে বেশ বড়ই ছিল। তবে কুশলের ৫২ বলে ৭৪ রানের ইনিংসে সেটাকে কী ছোটই না মনে হলো! ৮ বল হাতে রেখে যখন জয়টা তুলে নিল শ্রীলঙ্কা, তখন তো মনে হচ্ছিল ১৭০ কেন, ১৮০-১৯০ হলেও সনৎ জয়াসুরিয়ার দল সেটা তাড়া করে ফেলত চোখ বন্ধ করে!
আর তাই আফগানিস্তান এই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিল দারুণ খেলেও। বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচটা একটু এদিক ওদিক হলে জিততে পারত, আজও ঠিক তাই। এমন লড়াই করেও বিদায় নেওয়া দলটার সঙ্গী তাই হলো একরাশ আফসোস।
সেটা বাংলাদেশের জন্য ভালোই হলো। তাই তো আরনল্ডের ভাষায়, ‘ঢাকা, চট্টগ্রাম আর সিলেট ভেসে গেল আনন্দে’। বাংলাদেশ এই সমীকরণ হিসেব করার পরিস্থিতিতে পড়েছিল নিজেদের দোষেই।
হংকংকে হারাতে দেরি করা, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারার আগেই হার মেনে নিয়ে দ্রুত ম্যাচ শেষ করে বের হয়ে যাওয়া, আর শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর একাধিক বাউন্ডারি হজম করে রান রেট ভালো করার চেষ্টা হেলায় হারিয়ে ফেলা... এসব ভুল করেই শেষ ম্যাচে রান রেটের কোনো হিসেবে ছিল না বাংলাদেশ। এত কিছুর পরও শ্রীলঙ্কার বদান্যতায় চলে যাওয়া গেল শেষ চারে। এখন সেখানে যদি ভুল থেকে শিখে মানসিকতায় বদল আসে! এবার যে বাংলাদেশ শিরোপা জিততে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পা রেখেছে!
কাজটা যে সহজ হবে, বিষয়টা মোটেও তেমন নয়। ভারত এই টুর্নামেন্টের পরিষ্কার ফেভারিট। আজকের এই জয়ে শ্রীলঙ্কাও বার্তা দিয়ে রাখল আর সবাইকে। পাকিস্তানকে আপনি হিসেবের বাইরে রাখবেন কী করে? গ্রুপ পর্বের বৈতরণী পেরোনোর উদযাপন দ্রুত শেষ করে বাংলাদেশকে তাই ভাবতে হবে সেই পরীক্ষা নিয়ে।

