Logo
Logo
×

খেলা

ক্রিকেটার না হলে হয়ত রেলে চাকরি করতাম: ফরহাদ রেজা

Icon

আল-মামুন

প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২০, ০৪:০২ পিএম

ক্রিকেটার না হলে হয়ত রেলে চাকরি করতাম: ফরহাদ রেজা

ফরহাদ রেজা

আমরা সবাই উৎসবমুখর পরিবেশে জন্মদিন পালন করতে অভ্যস্ত। কিন্তু অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জন্মদিন পালনে অনীহা জাতীয় দলের অনিয়মিত অলরাউন্ডার ফরহাদ রেজার।

১৯৮৬ সালের ১৬ জুন জন্মগ্রহণ করা রাজশাহীর এ তারকা ক্রিকেটারের ৩৫তম জন্মদিন মঙ্গলবার। জন্মদিনে যুগান্তরকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ক্যারিয়ারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন জাতীয় দলের হয়ে ৩৪টি ওয়ানডে আর ১৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা এ ক্রিকেটার। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছে স্পোর্টস রিপোর্টার আল -মামুন

যুগান্তর: শুভ জন্মদিন, কেমন আছেন?

ফরহাদ রেজা: আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর রহমতে এখনও ভালো আছি। পরিবারের সাবাই ভালো আছে।

যুগান্তর: করোনার এই কঠিন সময়ে জন্মদিন কিভাবে উদযাপন করলেন?

ফরহাদ রেজা: আসলে কখনও জন্মদিন সেভাবে পালন করা হয়নি। খেলায় থাকলে সেভাবে হয়েও ওঠে না। অনুষ্ঠান করে জন্মদিন পালনে আমি ব্যক্তিগতভাবে আগ্রহী না। আগেও কখন জন্মদিন উদযাপন করিনি। হয়তো খেলার মধ্যে থাকলে টিম ম্যানেজমেন্ট কেক কেটে উইশ করত। এবার সেরকম কিছুই হয়নি। তবে অনেক ক্রিকেটার জন্মদিনে উইশ করেছে।

যুগান্তর: আপনার জন্মদিনে একটা ইন্টারভিউ নিতে চাই, যদি সময় দেন?

ফরহাদ রেজা: এখনই নেবেন? ওকে সমস্যা নেই, প্রশ্ন করেন।

যুগান্তর: কিভাবে ক্রিকেটার হলেন?

ফরহাদ রেজা: আসলে আমার পরিবার কখনওই চায়নি আমি ক্রিকেটার বা খেলোয়াড় হই। বলতে পারেন আমি লুকিয়ে লুকিয়ে খেলতাম। পাড়ায় টেপ টেনিস বলে খেলতাম। রাজশাহীর শিরোয়েল কলোনিতে পাড়ার বড় ভাইদের সঙ্গে খেলতাম। ২০০০ সালে শিরোয়েল সরকারি হাইস্কুল থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি (মানবিকে) পাস করেছি। মূলত এসএসসি পাস করার পরই ক্রিকেটে সেভাবে মনযোগ দেয়া। তার আগে খেলার জন্য পরিবার থেকে অনুমতি পাইনি।

আমাদের শিরোয়েল কলনিতে আল -রশিদ নামে একটা ক্রিকেট অ্যাকাডেমি ছিল, সেই একাডেমিতে থেকেই ক্রিকেট খেলা শুরু করি। ওই ক্লাবটা সাদি ভাই নামে একজন চালাতেন। তার মাধ্যমেই আমি দ্বিতীয় বিভাগ এবং ইয়াং প্যাগাসাস ক্লাবের হয়ে ২০০৪ সালে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলার সুযোগ পাই। ক্যারিয়ার শুরুর দিকে ক্রিকেটার হওয়ার জন্য আমাকে শানু স্যার অনেক প্র্যাকটিস করিয়েছেন। ওই বছরই আমি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার হই, আমার ঠিক মনে নেই হয়ত ২৬ উইকেট শিকার করেছিলাম। ওই বছরই প্রথম শ্রেণির ম্যাচে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।

২০০৪-২০০৫ সালে এইচপির হয়ে সাকিব-তামিম-মুশফিক-সোহরাওয়ার্দি শুভ, শামসুর রহমান শুভ, রকিবুল হাসান ও মার্শাল আইয়ুবদের সঙ্গে শ্রীলংকা সফরে গিয়ে পাঁচটি ওয়ানডে আর মনে হয় দুটি চার দিনে ম্যাচ খেলেছিলাম। সেই সফরে আমার পারফরম্যান্স ভালো ছিল। একটা ম্যাচে আমরা ওদের হারিয়ে ছিলাম। শ্রীলংকা সফরে থাকা অবস্থাই খালেদ মাহমুদ সুজন ভাই আমাকে ঢাকা থেকে ফোন দিয়ে ওনার সঙ্গে প্রিমিয়ার লিগে ওল্ড ডিওএইচএসে খেলার প্রস্তাব দিয়ে রাখেন।

ওই বছর আমরা ঢাকা লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। আমাদের সেই ওল্ড ডিওএইচএস ক্লাবের হয়ে খেলেছিলান আকরাম ভাই, সুজন ভাই, এনামুল হক মনি ভাই, শাহাজাদা, নাজিমুদ্দিন। ওই সময়ের সেরা ক্রিকেটারাই ওল্ড ডিওএইচএসে ছিলেন। ওটাই ছিল আমার ক্যারিয়ারের বাঁক বদলের টুর্নামেন্ট।

যুগান্তর: কার হাত ধরে ক্রিকেটে আপনার হাতেখড়ি?

ফরহাদ রেজা: রাজশাহীর টিটু ভাই, সাদ ভাই, শানু স্যারের মাধ্যমে আমার ক্রিকেটার হয়ে ওঠা। তারাই আমাকে প্রাথমিকভাবে ক্রিকেটার হতে উৎসাহ যোগান এবং ক্রিকেটে সাফল্য পেতে বিভিন্ন পরামর্শ দেন। তবে ঢাকায় আসার পর খালেদ মাহমুদ সুজন ভাই আর বাবুল (মিজানুর রহমান বাবুল) স্যার আমাকে অনেক হেল্প করেছেন। বাবুল স্যারতো আমার কোচ ছিলেন। সুজন ভাইয়ের সঙ্গে খেলেছি, তিনি নিজেও অলরাউন্ডার ছিলেন যে কারণে আমাকে খুব ভালো বুঝতেন। ওনার কাছ থেকে উৎসাহ পেয়েছি। 

যুগান্তর: কখন মনে হল ক্রিকেটকে পেশা হিসেবে নেয়া যায়?

ফরহাদ রেজা: ২০০৪ সালের পর থেকেই মনে হয়েছে ক্রিকেটে পেশা হিসেবে নেয়া যায়। আমার বাবা (আমজাদ হোসেন), মা (ফাতেমা বেগম) দু'জনই রাজশাহী রেলওয়েতে চাকরি করেন। ওনারা চাচ্ছিলেন না আমি প্লেয়ার হই। তবে এসএসসি পাস করার পর বাবা-মা আমাকে খেলতে আর বারণ করেননি। তারা বলেছেন তুমি নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত নেও কি করবে।

যুগান্তর: কোন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করলেন?

ফরহাদ রেজা: রাজশাহীর নিউ গভর্মেন্ট ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০০২ সালে এইচএসসিতে (মানবিকে) দ্বিতীয় বিভাগে পাস করি। এরপর ২০০৩ সালে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বিবিএ করার জন্য ভর্তি হলেও খেলাধুলায় জড়িয়ে যাওয়ায় পড়া-লেখা আর শেষ করতে পারিনি।

যুগান্তর: কোন টুর্নামেন্ট আপনার জাতীয় দলে সুযোগ পেতে বেশি সাহায্য করেছে?

ফরহাদ রেজা: আমরা এইচপি টিম শ্রীলংকা সফরে খেলে আসার পরপরই ২০০৪-২০০৫ সালে শ্রীলংকা ‘এ’ টিম আমাদের দেশে খেলতে আসে। ওই সময় আতহার আলী খান, ফারুক আহমেদ ও গোলাম নওশের প্রিন্স ভাই জাতীয় দলের নির্বাচক ছিলেন, হোয়াটমোর ছিলেন কোচ। তিনটা ওয়ানডে ছিল। সেই সিরিজে আমি বগুড়ায় প্রথম ম্যাচে ৫ উইকেট দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচ হয় খুলনায়। তৃতীয় ম্যাচে চার উইকেট নিয়েছিলাম। তিন ম্যাচ খেলে খুলনা থেকে ঢাকায় ফেরার পর শুনলাম আমি, সাকিব আর মুশফিক জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছি।

যুগান্তর: আপনার সঙ্গে জাতীয় দলে অভিষেক হওয়া সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম দেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার হলেন। অথচ আপনি...? 

ফরহাদ রেজা: আমার পারফরম্যান্স আসলে তেমন খারাপ হয়নি। আমার মনে হয় লাক সেভাবে ফেভার করেনি। আমি যতবারই জাতীয় দলে ঢুকেছি পারফর্ম করেই কিন্তু ঢুকেছি। হয়তো সেভাবে সুযোগ পাইনি। অন্যদের মতো সুযোগ পেলে আমার মনে হয় সাইন করতে পারতাম।

যুগান্তর: ঘরোয়া ক্রিকেটে আপনি নিয়মিত পারফর্ম করেন অথচ জাতীয় দলে এলে আপনার কাছ থেকে সেই পারফরম্যান্স পাওয়া যায় না, এর কারণ কি?

ফরহাদ রেজা: আমাকে তো আসলে সেভাবে সুযোগ দেয়া হয়নি। আমি যদি অন্যদের মতো সুযোগ পেতাম, যদি বলা হতো তুমি তোমার মতো করেই খেল, কোনো সমস্যা নেই। বাদ পড়ার শঙ্কা নেই। তাহলে আমার মনে হয় অবশ্যই ভালো করতে পারতাম। আমাকে যদি টানা কয়েকটি ম্যাচ খেলার সুযোগ করে দেয়া হতো তখন যদি না পারতাম তাহলে আমি নিজ থেকেই বলে দিতাম আমার দ্বারা হবে না। কিন্তু আমি সেভাবে সুযোগ পাইনি। আপনি যখন আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকবেন তাহলে কখনই ভালো করতে পারবেন না। 

যুগান্তর: ক্যারিয়ারের শুরুর দিন থেকে কোন খেলোয়াড়ের মতো হতে চাইতেন?

ফরহাদ রেজা: আমার দুইজন প্লেয়ার খুব প্রিয়, দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিস আর দেশের খালেদ মাহমুদ সুজন ভাই। ওনারাই আমার আইডল ছিলেন। আরেকজন ছিলেন খালেদ মাসুদ পাইলট ভাই। তিনি অনেক ভালো মানুষ। সুজন ভাই ও পাইলট ভাই মানসিকভাবে স্ট্রং থাকেন। সুজন ভাইকে বেশি পছন্দ করি, কারণ উনি আমাকে ভালো এবং খারাপ দুটো সময়েই ভালোবাসেন।

আমার আইডল বললে বলব সুজন ভাই। উনি জানেন একটা প্লেয়ারের ইমপ্রুভ কিভাবে করতে হবে। তাছাড়া সুজন ভাইয়ের সঙ্গে আমি খেলেছিও। তিনি আমার আইডল। আর বাবুল (মিজানুর রহমান বাবুল) ভাই আমাকে ভালো করে বুঝেন। তাই প্রিমিয়ারে টিম করলে আমাকেই রাখতে চান। আমিও হয়তো ওনার চাওয়াটা বুঝতে পারি। তাছাড়া বাবুল স্যার আমার লাইফের অনেক ভালো একজন কোচ। 

যুগান্তর: ক্রিকেটার না হলে কী হতেন?

ফরহাদ রেজা: আমার বাবা-মা আর একমাত্র বোন (আনজুআরা) তিনিও রেলে চাকরি করেন। রেলেই আমার বড় হওয়া। ক্রিকেটার না হলে হয়ত আমিও রেলে চাকরি করতাম। 

যুগান্তর: বাংলাদেশ রেলে চাকরি করতে না পেরে এখন কি আপনার মধ্যে কোনো আফসোস আছে?

ফরহাদ রেজা: আমার বাবা-মা, বোন, বাবার বন্ধু সবাই রেলে চাকরি করেন। তবে আমি হয়ত ভিন্ন কিছু হলাম। রেলে চাকরি না করলেও ক্রিকেটার হয়ে আমি নিজে হ্যাপী আছি। আমার বাবা-মাও এখন আমাকে নিয়ে প্রাউড ফিল করেন। এমনকি আমি যখন আব্বা-মা'র অফিসে যাই ওনাদের অফিসের সবাই ভালো বলেন। ওনারা বলে থাকেন আমাদের কলিগের ছেলে জাতীয় দলে খেলে। 

যুগান্তর: আপনার সবচেয়ে ভালো বন্ধু কে?

ফরহাদ রেজা: বাংলাদেশ দলের প্রথম টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক শাহরিয়ার নাফীস, ক্রিকেটার শরিফুল্লাহ আর বাবুল (মিজানুর রহমান বাবুল) স্যার। 

যুগান্তর: আপনার প্রিয় ক্রিকেটারদের তালিকায় কাদের রাখবেন?

ফরহাদ রেজা: অনেকই আছে, জাতীয় দলে যারা এখন খেলে বা অতীতে খেলেছে তাদের সবার সঙ্গেই আমার ভালো সম্পর্ক আছে। 

যুগান্তর: কোন ব্যাটসম্যানকে আউট করতে অধীর আগ্রহে থাকতেন?

ফরহাদ রেজা: ভারতের বর্তমান অধিনায়ক বিরাট কোহলি, অস্ট্রেলিয়ার তারকা ব্যাটসম্যান স্টিভ স্মিথ, আর ইংল্যান্ডের জস বাটলার। 

যুগান্তর: আবার যদি জাতীয় দলে সুযোগ আসে কোন ব্যাটসম্যানের উইকেট পেতে চাইবেন?

ফরহাদ রেজা: অবশ্যই চাইব ১০টা উইকেটই নিতে। তবে যত ভালো বল করবেন তত ভালো ব্যাটসম্যানের উইকেট পাওয়া যাবে। যদি ভারতের সঙ্গে খেলা হয় তাহলে বিরাট কোহলি আর রোহিত শর্মাকে আউট করতে চাইব। কারণ তারা খুব ভালো খেলে, তাদের যে কোনো একজনই ম্যাচের ভাগ্য পাল্টে দিতে পারে। আর পাকিস্তানের বাবর আজম, নিউজল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসন ও মার্টিন গাপটিলকে আউট করতে চাইব। 

যুগান্তর: কোন ব্যাটসম্যানকে বল করতে আপনার ভেতরে একটু ভয় কাজ করত?

ফরহাদ রেজা: অস্ট্রেলিয়ার ব্রাড হজ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওর বিপক্ষে বল করার সুযোগ হয়েছে। তখন ওকে বল করতে গিয়েই একটু নার্ভাস হয়েছি। ও হয়তো আমাকে ভালো রিচ করতে পারে। ওর সঙ্গে আমি বিপিএলেও খেলেছি, বরিশাল বুলসের হয়ে খেলার সময় আমি শাহরিয়ার নাফীসকে দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন আমার বলেই বেশি বাউন্ডারি হাঁকাতে চায়। ব্রাড হজ তখন বলেছিল ও নাকি আমাকে ভালো রিচ করতে পারে, আমার ডেলিভারি দেয়ার আগেই ও বুঝতে পারে কি করতে চাচ্ছি। 

যুগান্তর: আপনার ক্যারিয়ারের সেরা সময়?

ফরহাদ রেজা: লাস্ট ইয়ার। গত বছরে সবমিলে (বিপিএল, বিসিএল, প্রিমিয়ার লিগ ও প্রথম শ্রেণির) ১০০ উইকেট শিকার করেছি। এ ছাড়া আন্তর্জাতিকে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজ আর জিম্বাবুয়ে ও কেনিয়া সফরে ভালো পারফর্ম করেছি। 

যুগান্তর: আপনার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কষ্টের সময়?

ফরহাদ রেজা: ২০০৭ সালে আমার ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপ ছিল। যখন বাদ পড়েছিলাম তখন খুব কষ্ট পেয়েছি। পরে অবশ্য ডাক পেয়েছিলাম কিন্তু ম্যাচ খেলার সুযোগ পাইনি। 

যুগান্তর: আপনার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি?

ফরহাদ রেজা: আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ অনেক দিয়েছেন, আমার সুন্দর একটি পরিবার আছে, ভালো কিছু টিমমেট আছে। আর কি চাই! 

যুগান্তর: সবচেয়ে বড় আক্ষেপ?

ফরহাদ রেজা: আক্ষেপ তো অনেক আছে, বলে শেষ করতে পারব না। আমরা এখনও এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ পাইনি। আমরা যদি দেশকে এশিয়া কাপ আর বিশ্বকাপ ট্রফি উপহার দিতে পারতাম তাহলে ভালো লাগত। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার কোনো আক্ষেপ নেই।

যুগান্তর: দুঃসময়ে আপনাকে কে বেশি সাহস জোগায়?

ফরহাদ রেজা: পরিবারের সদস্যরা, বাবা-মা। আর খেলার মাঠে শাহরিয়ার নাফীস, শরিফুল্লাহ ও কোচ বাবুল স্যার। 

যুগান্তর: ক্রিকেট ক্যারিয়ারে কখনও কি কেঁদেছেন?

ফরহাদ রেজা: খেলতে গেলে আসলে এমন অনেক হয়। একটা মৌসুমে ওল্ডডিওএইচএসের হয়ে খেলছিলাম, সম্ভবত বিমানের সঙ্গে খেলা ছিল, আমাদের প্রায় সব উইকেট পড়ে গিয়েছিল। শেষ দিকে ব্যাটিংয়ে নেমে আমি খেলাটা ধরি। আমি হয়ত ৮৬ রান করে ছিলাম। এমন সময় আমি আউট হয়েছি যখন দলের জয়ের জন্য মাত্র কিছু রান প্রয়োজন ছিল। বাবুল স্যার আমাকে বলেছেন যেন বাউন্ডারি না হাঁকাই, সিঙ্গেল রান নেই। কিন্তু বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে আউট হয়ে যাই। আউট হওয়ার পর স্যার আমাকে অনেক বকেছেন। সে দিন ম্যাচ হারের পর আমি অনেক কেঁদেছি। আমার মনে হয় বাবুল স্যারও কেঁদেছেন। প্লেয়ারদের জীবনে আসলে বেশি সময়ই খারাপ দিন আসে। ভালো সময় খুব কম আসে (হাসি)। 
 

যুগান্তর: আপনার সবচেয়ে শান্তির জায়গা?

ফরহাদ রেজা: দুইটা জায়গা আছে। একটা হল মসজিদ, আমার মনে হয় ইসলাম ধর্মের সবারই জন্যই মসজিদ ভালো জায়গা। মসজিদে গেলে হয়ত আমার মতো সবারই ভালো লাগে। প্রচণ্ড হতাশ হলে মসজিদে যাই, সেখানে গিয়ে ইবাদত করি। আর দ্বিতীয়টি হল আমার বাসা। 

যুগান্তর: নিজের যে স্বভাব পাল্টাতে চান।

ফরহাদ রেজা: অনেক কিছু চেঞ্জ করতে চাই। বাবা হিসেবে বন্ধু হিসেবে যতটা সম্ভব অনেস্ট থাকতে চাই। মিথ্যা কথা বলা বন্ধ করতে চাই।

যুগান্তর: যা ছাড়া আপনার চলেই না।

ফরহাদ রেজা: আপাতত কোয়ারেন্টিনে আছি, হয়তো মোবাইল না থাকলে চলতেই পারতাম না। মোবাইলই সব সময়ের সঙ্গী।

যুগান্তর: সবচেয়ে বেশি কাকে ভয় পান?

ফরহাদ রেজা: আপাতত আমার মেয়ে আর বাবুল স্যার।

যুগান্তর: কতসালে বিয়ে করেছেন, পাত্রি কি আগে থেকেই পরিচিত ছিল?

ফরহাদ রেজা: ২০১১ সালে পারিবারিকভাবে বিয়ে করি। পাত্রি আগে থেকেই পরিচিতি ছিল, প্রেমটেম না ভাই। আমরা আসলে পাশাপাশি বাসায় থাকতাম। বাবা-মার পছন্দ ছিল। 

যুগান্তর: আপনার কয় ছেলে-মেয়ে?

ফরহাদ রেজা: আমার এক মেয়ে আছে, জুলাইয়ে হয়তো আরও একজন আল্লাহর রহমতে হতে পারে। মেয়েটার বয়স ৮ বছর ও রাজশাহী ক্যান পাবলিক স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। 

যুগান্তর: মেয়েকে নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী?

ফরহাদ রেজা: বড় হোক সেটাই চাই। আপাতত কোনো টার্গেট নেই। 

যুগান্তর: পেশাদার ক্রিকেট থেকে অবসরে কি করার চিন্তা?

ফরহাদ রেজা: আল্লাহই জানেন কি করব। এখনও সেভাবে ভাবিনি। আমার ইচ্ছা আছে ফার্ম খোলার। কারণ এখন তো আর রেলে চাকরি দিবে না! ফার্ম মানে বাগান করলাম, ব্যবসার জন্য না। নিজেদের খাওয়ার জন্যও আম বা লিচুর বাগান করব। 

প্রিয়-অপ্রিয়
 

প্রিয় ক্রিকেটার: খালেদ মাহমুদ সুজন ভাই ও শাহরিয়ার নাফীস। বিদেশি জ্যাক ক্যালিস, আর খুব ভালো লাগে এবি ডি ভিলিয়ার্সের ব্যাটিং। বিপিএলে রংপুর রাইডার্সে খেলার সময় ওকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি, ভালো বুঝতে পেরেছি। 

প্রিয় ফুটবলার: লিওনেল মেসি। 

প্রিয় টিম: বার্সেলোনা, আর্জেন্টিনা। 

প্রিয় মানুষ: অবশ্যই হযরত মোহাম্মদ (স.) আর বাবা-মা।

প্রিয় খাবার: আগে ছিল খিঁচুড়ি আর গরুর মাংস। এখন অবশ্য ফিটনেসের চিন্তা করে সেভাবে খেতে পারি না। 

প্রিয় গান: প্রচুর গান শুনি, পরিস্থিতি অনুসারে যেটা ভালো লাগে। অনেক ফেভারিট গান আছে। 

প্রিয় ফুল: গোলাপ 

প্রিয় রং: লাল

প্রিয় পোশাক: টি-শার্টা আর জিন্স প্যান্ট। 

প্রিয় খেলা: ফুটবল

যুগান্তর: সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আবারও শুভ জন্মদিন।

ফরহাদ রেজা: আপনাকেও ধন্যবাদ। যুগান্তরকেও ধন্যবাদ।

ফরহাদ রেজা সাক্ষাৎকার

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম