Logo
Logo
×

খেলা

আমিনুল হকের অবিশ্বাস্য যাত্রা

ফুটবলের গলি থেকে রাজনীতির রাজপথে

Icon

মোজাম্মেল হক চঞ্চল

প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫৯ এএম

ফুটবলের গলি থেকে রাজনীতির রাজপথে

গোলপোস্টের নিচে অতন্দ্র প্রহরী ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক। মাঠে লড়তেন জীবন বাজি রেখে। এখন লড়ছেন দেশের জন্য, মানুষের জন্য। ফুটবল ছেড়ে রাজনীতির মাঠে আমিনুল। খেলা ছেড়েছেন ২০১০ সালে। রাজনীতির মাঠে নামেন ২০১৪ সালে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি) যোগ দেন। ঢাকা মহানগর বিএনপির উত্তরের সদস্য সচিব ছিলেন। বর্তমানে বিএনপি ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক তিনি। তারও আগে থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক। সেই পদে এখনো আছেন। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে জেল খেটেছেন চারবার।

গোল করার চেয়ে গোল বাঁচানোই আমিনুলের দৃষ্টিতে বেশি কৃতিত্বের। ইতালির কিংবদন্তি গোলকিপার গিয়ানলুইজি বুফনের ভক্ত আমিনুল ক্লাস থ্রি কিংবা ফোরে পড়ার সময় ফুটবলের প্রতি টান অনুভব করেন। ১৯৯২ সালে প্রথম প্রতিযোগিতামূলক আসরে মাঠে নামেন বিমান কাপে। ১৯৯৩ সালে নাম লেখান পাইওনিয়ার ফুটবলে। দল এমএসপিসি। তার আগে পাড়ার বড় ভাইদের সঙ্গে গোলপোস্টের নিচে দাঁড়াতেন। জন্ম ভোলায়। ছোটবেলা থেকে আছেন ঢাকায়। সিটি ক্লাবের গোলকিপার-কোচ ইমতিয়াজের উৎসাহে আমিনুল গোলকিপার হয়েছিলেন। বাবা-মা, ভাই-বোন ও পরিবারের সবার উৎসাহ ছিল। বড় ভাই মইনুল হক মইন তখন প্রথম বিভাগে মাঠ কাঁপাচ্ছেন। মাঠে ছোট ভাইয়ের খেলা দেখতেন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে, ধরিয়ে দিতেন দোষত্রুটি-ওই গোলটা তুই এজন্য খেয়েছিস। ওভাবে পোস্ট ছেড়ে না বেরোলে দ্বিতীয় গোলটা খেতি না, ইত্যাদি’, বলেন আমিনুল।


মিরপুরের গলি থেকে যে গোলকিপার আমিনুলের উঠে আসা, পরে নিজেকে বাংলাদেশের এক নম্বর গোলকিপার হিসাবে মেলে ধরেন। তার কথায়, ‘আমি ভয় পাই না কখনো। বিপক্ষে যে-ই থাকুক। গ্যালারিতে যত দর্শকই চিৎকার করুক, আমার সব সময় মনে হতো, আমিই জিতব। সত্যি বলতে, এটাই আমার সাফল্যের সবচেয়ে বড় কারণ। একজন গোলকিপারের যত গুণ থাকুক, সাহস যদি না থাকে, তাহলে সে শেষ।’

পাইওনিয়ার লিগে খেলার আগে জাতীয় দলের সাবেক তারকা গোলকিপার মহসিন আমিনুলের মনে স্বপ্নের বীজ বুনে দেন। এমএসপিসি’র হয়ে পাইওনিয়ারে খেলার পর পাদপ্রদীপের আলোয় চলে আসেন তিনি। আমিনুলের ঘরোয়া ফুটবলের ক্যারিয়ার মানেই বড় দল। ’৯৪-৯৫ মৌসুমে মোহামেডান গোলকিপার কাননের হাত ভেঙে যায়। একজন রিজার্ভ গোলকিপারের প্রয়োজন হয় মোহামেডানের। সেই রিজার্ভ গোলকিপার কোনো ম্যাচ খেলেননি। ১৪-১৫ বছর বয়সের কিশোর গর্বের সঙ্গে দেখে মোহামেডানের খেলোয়াড় তালিকায় তার নাম-আমিনুল। মোহামেডানের সাবেক তারকা ফুটবলার ইমতিয়াজ সুলতান জনি আমিনুলকে নিয়ে আসেন ক্লাবে। নিজের প্রতিভা দিয়ে মোহিত করেন আমিনুল। পরের বছরও মোহামেডানেই থাকেন। এরপর নাম লেখান ফরাশগঞ্জে। মুক্তিযোদ্ধা তাকে এক নম্বর গোলকিপার করে এনেছিল ’৯৭ সালে। মুক্তিযোদ্ধা থেকে আবাহনী। আবাহনী হয়ে আবার মুক্তিযোদ্ধায়।

মোহামেডানে ’৯৫ সালে কাদেরিখানা নামে একজন নাইজেরিয়ান কোচ এসেছিলেন। কিছু অমূল্য টিপস তিনি আমিনুলকে দিয়ে গেছেন। কৈশোরে ইমতিয়াজ নামে একজন কোচের কাছে শিখেছিলেন গোলরক্ষণের অ-আ-ক-খ।

প্রতিপক্ষের গোল ঠেকিয়ে দিচ্ছেন আমিনুল

আমিনুলের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু

১৯৯৬ সালে। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের আগে সেসময় জাতীয় দলের কোচ ছিলেন অটো ফিস্টার। কিন্তু মাঠে নামা হয়নি আমিনুলের। জাতীয় দলে অভিষেক দুবছর পর। ১৯৯৮ সালে কাতার সফরে অলিম্পিক দলের (অনূর্ধ্ব-২৩) সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে বাংলাদেশ। পরের ম্যাচে কাতার জাতীয় দলের বিপক্ষে কোনো গোল হজম করেননি আমিনুল। গোলশূন্য ড্র করা ওই ম্যাচটিকেই নিজের ক্যারিয়ারের সেরা ম্যাচ হিসাবে এখনো দেখেন আমিনুল। ২০০২ সালে ঢাকায় সাফ ফুটবলে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়। অসামান্য অবদান রাখেন তিনি। বাংলাদেশের হয়ে তার ম্যাচের সংখ্যা ৭৫টির কম হবে না বলে জানালেন আমিনুল।


(আগামীকাল)

আমিনুল হক রাজনীতি বিএনপি

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম