Logo
Logo
×

খেলা

যেভাবে পাক ক্রিকেটের মানচিত্র বদলে দিয়েছিলেন ইমরান খান

Icon

স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৫, ১০:৩৪ এএম

যেভাবে পাক ক্রিকেটের মানচিত্র বদলে দিয়েছিলেন ইমরান খান

১৯৯২ বিশ্বকাপের শিরোপাজয়ের পর সতীর্থরা কাঁধে তুলে বসেছিলেন ইমরান খানকে/ফাইল ছবি

আশির দশকের শুরু। পাকিস্তানের ক্রিকেট তখন খাবি খাচ্ছে এখানে ওখানে। ক্রিকেটের মহাসমুদ্রে দেশটা যেন ভেসে বেড়াচ্ছে দিকভ্রান্ত ভেলার মতো। ক্রিকেটারদের মধ্যে প্রতিভার অভাব কোনোকালেই ছিল না পাকিস্তানে। তবে অভাব ছিল নেতার। যে কারণে কিছু দিন পারফর্ম করতো ঠিকই, তবে এরপরই আবার সে পারফর্ম্যান্স মিইয়ে যেত কোথায় যেন।

সে পাকিস্তান একজন নেতার অভাব বোধ করছিল সেই অনেক আগে থেকেই। সে অভাবটা পূরণ করলেন ইমরান খান। লাহোরে জন্ম, তবে বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা ও ক্রিকেটের পাঠটা তিনি পেয়েছেন ইংল্যান্ডে। প্রাচ্যের দরাজ দিল আর পাশ্চাত্যের মগজের মিলন ঘটল সেখানেই, পাক ক্রিকেটের মুক্তির দুয়ারটাও খুলে গেল বৈকি!

ইমরান মাঠের বাইরে ছিলেন ছিলেন শারীরিক সৌন্দর্য আর ব্যক্তিত্বের প্রতীক। প্লেবয় হিসেবেও ‘সুখ্যাতি’ ছিল তার। তবে পাক ক্রিকেটের বলয়ে এসে তার ব্যক্তিত্বের সে ছটা তিনি মেলে ধরলেন ভিন্নভাবে। যা পুরো পাকিস্তানকেই বদলে দিল আমূলে।

১৯৮২ সালে পাকিস্তান দলের অধিনায়ক হন ইমরান খান। তখন থেকেই শুরু হয় তার ক্রিকেট বিপ্লব। তিনি বিশ্বাস করতেন, কেবল প্রতিভা দিয়ে দল গড়া যায় না—গড়তে হয় নীতিতে, শৃঙ্খলায়। সেই চিন্তা থেকেই তিনি তৈরি করেন এক নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়। একে একে তিনি দলে আনেন ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, ইনজামাম-উল-হক, আকিব জাভেদদের মতো ভবিষ্যতের তারকাদের।

তাদের শুধু সুযোগ দেননি, নিজ হাতে গড়ে তুলেছেন। মাঠে ও মাঠের বাইরে ছিলেন পথপ্রদর্শক, মেন্টর। পাকিস্তান ক্রিকেটে গড়ে তোলেন একটা পেশাদার মানসিকতা, যেখানে হার মানে শেষ নয়, বরং শুরু।

সে পাকিস্তান একজন নেতার অভাব বোধ করছিল সেই অনেক আগে থেকেই। সে অভাবটা পূরণ করলেন ইমরান খান। লাহোরে জন্ম, তবে বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা ও ক্রিকেটের পাঠটা তিনি পেয়েছেন ইংল্যান্ডে। প্রাচ্যের দরাজ দিল আর পাশ্চাত্যের মগজের মিলন ঘটল সেখানেই, পাক ক্রিকেটের মুক্তির দুয়ারটাও খুলে গেল বৈকি!

ইমরান বুঝেছিলেন, পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তাদের মনেই। ভিনদেশের মাঠে হতোদ্যম হয়ে পড়া, দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত, শৃঙ্খলার অভাব—এসব কাটাতে তিনি গড়ে তোলেন এক মানসিক দেয়াল। তিনি বারবার মনে করিয়ে দিতেন, ‘মাঠে নামলে মনে করো—তোমরা পাকিস্তান। হারলেও যেন গর্ব নিয়ে মাথা তুলে বের হও।’ এই আত্মবিশ্বাসই একদিন বিশ্বকে এনে দিল তাদের হাতের মুঠোয়। পাকিস্তানের করতলে ধরা দিল বিশ্বকাপ নামের সে সোনার হরিণ।

সেটা যেভাবে ধরা দিল, তাও আরেক গল্পই বটে। আর সেখানে অবধারিতভাবেই ছিল ইমরানের কারিশমা। 

বিশ্বকাপ ১৯৯২। পাকিস্তান দলে চোট, ব্যর্থতা, বাজে পারফরম্যান্স—সবই ছিল। গ্রুপ পর্বে একাধিক ম্যাচে হেরে ছিটকে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। কিন্তু সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াল তারা। ইমরান তখন নিজের শরীরের শেষ শক্তিটুকু নিয়ে লড়ছিলেন। কাঁধের চোট তাকে কাবু করেছিল, কিন্তু মনোবলে নয়। ফাইনালের আগের রাতেও তিনি খেলোয়াড়দের উজ্জীবিত করেন, বলেন— ‘সিংহরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে।’

ফাইনালে শেষমেশ ইংল্যান্ডকে হারিয়ে পাকিস্তান ইতিহাস গড়ে। ট্রফি হাতে ইমরানের উক্তি আজও প্রতিটি পাকিস্তানি মনে গেঁথে আছে— ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল একটাই—বিশ্বকাপ জয়। আমরা পেরেছি।’

অবসরের পর রাজনীতিতে পা রাখলেও ক্রিকেটের প্রতি ইমরানের প্রভাব কমেনি। তিনি যে কাঠামো রেখে গেছেন, তা অনুসরণ করে পাকিস্তান গড়েছে আরও অনেক তারকা। তার নেতৃত্বগুণ আর মানসিক দৃঢ়তা হয়ে উঠেছে ভবিষ্যতের পথনির্দেশ।

ইমরান খান পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্য শুধুই একজন ক্রিকেটার নন। তিনি ছিলেন স্বপ্নদ্রষ্টা, যিনি বিশ্বাস করতেন, পাকিস্তান জিততে পারে—শুধু মাঠে নয়, মানসিকতায়ও। সে মানসিকতাটা তিনি পরবর্তী প্রজন্মে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন দারুণভাবে। 

এতটাই যে, পরের প্রজন্মের ক্রিকেটার যেমন ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস, ইনজামাম উল হকরা এখনও যখন তাকে স্মরণ করেন, শ্রদ্ধাভরে তার নামটা পর্যন্ত মুখে আনেন না। ডাকেন ‘ক্যাপ্টেন’ বলে।

তার আগেও পাক ক্রিকেট ভালো খেলত বটে, কিন্তু শিরোপার দেখা দলটা পায়নি, পরাশক্তি হিসেবেও পরিচয়টা ছিল না তাদের। সে সবকিছুই হলো ইমরানের হাত ধরে। বিশ্ব ক্রিকেটের মানচিত্রে পাকিস্তানকে নতুন একটা পরিচয়ই তিনি এনে দিয়েছিলেন বটে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম