বিরিয়ানি-ভাত-রুটি ছেড়ে ফিটনেসে চোখ সরফরাজের, দেড় মাসেই বড় পরিবর্তন
স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৫, ০৫:১৩ পিএম
ভারতীয় ব্যাটার সরফরাজ খান
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ফিটনেসের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছেন ভারতীয় ব্যাটার সরফরাজ খান। ভুরিভোজ ছেড়ে মনোযোগ দিয়েছেন স্বাস্থ্যকর খাবার আর অনুশীলনে। তাতে ম্যাজিকের মতো বদলে গেছে তার দেহাবয়ব। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের আসন্ন সিরিজকে সামনে রেখে দলে ফিরতে কঠোর অধ্যবসায়ে দিন কাটছে তার।
টেস্টে সরফরাজের ফর্ম একেবারে মন্দ ছিল না। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ১৫০ রান করে তাক লাগিয়ে দেওয়া এই ব্যাটার ফিটনেসের কারণেই একসময় জাতীয় দলে ব্রাত্য হয়ে যান। অস্ট্রেলিয়া সফর শুধুই বেঞ্চ গরম করেছেন। তাতেই সরফরাজ বুঝে যান, জাতীয় দলে নিয়মিত খেলতে হলে ফর্মের সঙ্গে ফিটনেসেও উন্নতি করতে হবে।
তাই দিনরাত পরিশ্রম করে মাত্র দেড় মাসেই ওজন ৮৬ কেজি থেকে ৭৬-এ নামিয়ে এনেছেন ২৭ বছর বয়সি এই ব্যাটার। সরফরাজের বাবা নওশাদ ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের সঙ্গে আলাপে জানিয়েছেন, ফিটনেস ফিরে পেতে নিজের পছন্দের চিকেন ও মাটন বিরিয়ানি ছেড়েছেন সরফরাজকে। কার্বোহাইড্রেট এড়াতে খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন ভাত-রুটিও।
তার ফিটনেস ফিরে পাওয়ার যাত্রা যেন সহজ হয়, সেজন্য পুরো পরিবারই খাদ্যাভ্যাস বদলে ফেলেছে বলে জানান নওশাদ। তার ভাষায়, ‘পরিবারের সকলে মিলেই ওজন কমানোর যুদ্ধে নেমেছি। ডায়েট পুরো বদলে ফেলেছি। ভাত, রুটি, চিনি বন্ধ। দেড় মাস ধরে ও সব খাইনি। তার বদলে সবজি খাচ্ছি বেশি করে। ব্রকোলি, গাজর, শশা, সালাদ-সহ বিভিন্ন সবজির দিকে মন দিয়েছি। চিকেন, ডিম সমস্তই সেদ্ধ করে খাচ্ছি। আর খাচ্ছি গ্রিন টি এবং গ্রিন কফি।’
ফলও চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন নওশাদ। শুধু সরফরাজের ক্ষেত্রে নয়, তিনি নিজেও এই কড়া ডায়েটের সুফল পেয়েছেন। নওশাদ বললেন, ‘সরফরাজ় দেড় মাসে ১০ কেজি ওজন কমিয়েছে। আরও কমানোর চেষ্টা করছে। আমার ওজনও ১২ কেজি কমেছে। আমার হাঁটুতে সমস্যা আছে। আগে চিকিৎসক বলেছিলেন, হাঁটু বদলাতে হবে। কিন্তু ওজন কমিয়ে ফেলেছি বলে এখন আর তার প্রয়োজন নেই। আমার ছোট ছেলে মইনও ওজন কমিয়েছে।’
শুধু খাদ্যাভ্যাস নয়, দিনের গোটা রুটিনই বদলে ফেলেছেন পিতা-পুত্র। সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত নিজেদের তৈরি রুটিনও জানিয়েছেন নওশাদ। গত দেড় মাস ধরে তারা এই রুটিন মেনে চলছেন। নওশাদ বললেন, ‘ভোর সাড়ে ৫টায় বাড়ি থেকে বেরোই। ১৫ কিলোমিটার দূরে ক্রস ময়দানে যাই। সেখানে প্রথমে ওয়ার্ম আপ করি। তার পর সরফরাজ কিছু ক্ষণ দৌড়ায়। দৌড়ের পর ফিল্ডিং অনুশীলন করে। তার পরে ব্যাট করে। সাড়ে ১০টা নাগাদ বাড়ি ফিরে প্রাতরাশ সেরে বিশ্রাম নিই।’
সন্ধ্যায় মুম্বাই ক্রিকেট সংস্থার জিমে যান সরফরাজ ও নওশাদ। সপ্তাহে ছয় দিন। জিমে ঢোকার আগে সরফরাজ আধ ঘণ্টা করে দৌড়ান আর সাঁতার কাটেন। সেই সময়টা হনহন করে হাঁটেন নওশাদ। তার পরে জিম শুরু হয়। রাতে বাড়ি ফিরে নৈশভোজ সেরে ঘুম।
জিম ও শারীরিক কসরতের পাশাপাশি নিজের ব্যাটিং নিয়েও বাড়তি পরিশ্রম করছেন সরফরাজ। নওশাদ জানেন, শেষ পর্যন্ত রানই আসল। তাই সরফরাজের ব্যাটিং অনুশীলনে কোনও খামতি যাতে না হয়, সে দিকেও নজর রয়েছে তার।
দিনে তিনবার ব্যাটিং অনুশীলন করেন সরফরাজ়। নওশাদ বললেন, ‘সকালে ক্রস ময়দানে সরফরাজ লাল বলে ব্যাট করে। বাড়ি ফিরে নাশতার পর আবার ব্যাট করতে নামে। আমাদের বাড়িতেই পিচ আছে। সেখানে প্রতি দিন অন্তত ৫০০ বল খেলে। সামনে টেস্ট সিরিজ় আছে বলে দ্বিতীয় দফার ব্যাটিং অনুশীলনও হয় লাল বলে। তার পর সন্ধ্যায় জিমের পর আবার ব্যাট করে। তখন সাদা বলে।’
বিরাট কোহলি টেস্ট থেকে অবসর নেওয়ায় ভারতের মিডল অর্ডারে একটা জায়গা ফাঁকা। সেই চার নম্বর জায়গাটা নেওয়ার লড়াইয়ে রয়েছেন অনেকে। শ্রেয়স আয়ার, লোকেশ রাহুলের পাশাপাশি ঘরোয়া ক্রিকেটে রান করা করুণ নায়ারও দলে ঢোকার চেষ্টা করছেন। সরফরাজ জানেন, তাঁর জায়গা পাওয়া কঠিন। কিন্তু চেষ্টা করতে ক্ষতি কী? সেই লক্ষ্যেই নিজেকে বদলানো।
