জানুয়ারিতেই ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যায় ফারুকের!
প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৫, ০৪:৫৪ পিএম
ফারুক আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশের বহুল প্রচারিত ঘরোয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) নিয়ে অভিযোগের অন্ত কখনোই ছিল না। এরপরও এই টুর্নামেন্টের সবশেষ সংস্করণ বিতর্কের দিক দিয়ে বিপিএলের পূর্বের সব আসরকে ছাড়িয়ে যায়। ক্রিকেটারদের অনুশীলন বর্জন, বিদেশিদের ম্যাচ বর্জন, পারিশ্রমিক জটিলতা নিরসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েও ব্যর্থতা, টিকিট নিয়ে জটিলতা, সম্প্রচারের ক্ষেত্রে উন্নতি সাধনে ব্যর্থতার কারণে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি ফারুক আহমেদকে।
স্মরণকালের সবচেয়ে বাজে বিপিএল আয়োজনের পরে দায়সারাভাবে ক্ষমা চাইলেও তখনই যেন এই বিসিবি কর্তার ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যায়। গেল জানুয়ারিতে যুগান্তরে প্রকাশিত ‘বিসিবি সভাপতি ফারুকের চেয়ার নড়বড়ে, একের পর এক অভিযোগ’ প্রতিবেদনে সে বিষয়গুলো তুলে এনে তখনই বিসিবির সভাপতি পদে ফারুকের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
শেষ পর্যন্ত সে শঙ্কা-ই সত্যি হলো। বিতর্কের পসরা সাজানো ফারুক আহমেদকে তার পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে সরকার। তাকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) মাধ্যমে বিসিবি পরিচালক হিসেবে অধিষ্ঠিত করার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তা বাতিল করা হয়েছে। পরিচালক পদ হারানোর ফলে ফারুকের বিসিবি সভাপতির পদও শূন্য হয়েছে।
দুর্নীতিপরায়ণতা, স্বজনপ্রীতির মতো বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগ এনে বিসিবির ৮ পরিচালক ফারুকের ওপর অনাস্থা জানায়। তাদের অনাস্থার বিষয়টি আমলে নিয়ে তাকে বিসিবি সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেয় এনএসসি।
ফারুক অবশ্য উলটো সে পরিচালকদের ওপরই দোষ চাপিয়েছেন। বলেছেন, তারা বিগত বছরগুলোতে নিজেরা যেসব দুর্নীতি করেছেন, সেসবের দায়-ই এখন তার কাঁধে চাপাচ্ছেন। তবে ফারুকের এই মন্তব্যের পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, যদি সেসব পরিচালকরা দুর্নীতি করেই থাকেন, তাহলে তাদের সঙ্গে নিয়ে এতদিন কাজ করলেন কেন ফারুক আহমেদ? কেন আরও আগেই তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলেন না বা তাদের সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানাননি তিনি।
ফারুকের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানানো পরিচালকদের মধ্যে সাতজন বিগত সরকারের আমল থেকেই বিসিবির বোর্ডে রয়েছেন। আর অন্যজন নাজমুল আবেদীন ফাহিম–যিনি ফারুকের মতোই এনএসএসির মাধ্যমে বোর্ডে পদার্পণ করেন। তিনিও শেষ পর্যন্ত ফারুকের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়েছেন। অবশ্য ফারুক আহমেদের সঙ্গে তার দূরত্বের খবর আরও আগেই সামনে এসেছিল।
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালের সঙ্গেও সম্প্রতি তার বচসার খবর গণমাধ্যমে এসেছে। এছাড়া ক্রীড়া উপদেষ্টার প্রেস সচিবের সঙ্গেও মনোমালিন্য হয় তার। এর বাইরে বিসিবির ফিক্সড ডিপোজিটের অর্থ অন্য ব্যাংকে স্থানান্তরের বিষয়টি নিয়েও সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়।
এতসব অভিযোগ আর অনভিপ্রেত ঘটনার মধ্যমণি হলেও কখনোই পরিষ্কারভাবে নিজের পক্ষ গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরতে পারেননি জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক। বরাবরই একটু ধোঁয়াশা রেখেছেন। কোনো ঘটনায় তার দায় যদি না-ও থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে তিনি দায়ীদের নাম প্রকাশ করতে ব্যর্থ হন। এসবের ফলে যত দিন গেছে, তার চেয়ার শুধুই নড়বড়ে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আচমকা এক বাও-বাতাসে সে চেয়ার ভেঙেই পড়ল। দেশের ক্রিকেটের এক সম্মানিত চরিত্র থেকে খলনায়কে পরিণত হলেন তিনি।
এখন নিজেকে ‘কলঙ্কমুক্ত’ করতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) দরজায় কড়া নাড়ছেন ফারুক। দেশের ক্রিকেটে আইসিসির ভারতীয় চেয়ারম্যান জয় শাহ-র হস্তক্ষেপ চাচ্ছেন তিনি। ইতোপূর্বে দেখা গেছে, কোনো দেশের ক্রিকেট বোর্ডে যখন সরকারি হস্তক্ষেপের মতো ঘটনা ঘটে, তখন সে দেশকে আইসিসির নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হয়। শ্রীলঙ্কা এবং জিম্বাবুয়েকে এমন অভিযোগে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। আইসিসির কাছে অভিযোগ জানানোর মাধ্যমে ফারুক আহমেদ কি তবে দেশের ক্রিকেটের জন্য তেমন কিছু-ই ‘আশা’ করছেন?
নিজেকে ‘নির্দোষ’ প্রমাণ করতে গিয়ে ফারুক আহমেদ আবার দেশের ক্রিকেটের কবর খুঁড়ে ফেললেন না তো–এ প্রশ্ন দেশের সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীদের।

