গিলের ‘নাইকি ভেস্ট’ বিতর্কে ২৫০ কোটি টাকার চুক্তি প্রশ্নের মুখে
স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ০১:৫৪ পিএম
এজবাস্টন টেস্টে দুর্দান্ত ইনিংস ঘোষণার সময় শুভমান গিল, ফাইল ফটো
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এজবাস্টন টেস্টে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে রেকর্ড গড়েছেন শুভমান গিল। তবে ভারতের ইনিংস ঘোষণার সময় ক্যামেরায় ধরা পড়া একটি দৃশ্য মাঠের বাইরের বড় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ইনিংস ঘোষণা করতে আসা গিলের গায়ে দেখা গেছে নাইকি ব্র্যান্ডের কালো ভেস্ট, যা লাইভ সম্প্রচারেই স্পষ্ট দেখা যায়। আর এতেই প্রশ্ন উঠেছে, ভারতের জাতীয় দলের সঙ্গে থাকা অ্যাডিডাসের ২৫০ কোটি টাকার স্পনসরশিপ চুক্তি কি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে?
অ্যাডিডাস ২০২৩-২০২৮ মেয়াদে ভারতের জাতীয় দল, নারী দল, এবং সব বয়সভিত্তিক দলের অফিসিয়াল কিট পার্টনার। ম্যাচ, অনুশীলন ও ভ্রমণের কিট তাদের সরবরাহ করার কথা। এত বড় অঙ্কের বিনিময়ে তারা একচেটিয়া দৃশ্যমানতার অধিকার পেয়েছে। তাই ম্যাচ চলাকালে ভারতীয় অধিনায়ককে প্রতিদ্বন্দ্বী ব্র্যান্ড নাইকির পণ্য পরতে দেখা গেলে সেটি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘনের মতো দেখাচ্ছে।
তবে বিসিসিআই চুক্তি অনুযায়ী অ্যাডিডাস ম্যাচ, ট্রেনিং ও ট্রাভেল কিট সরবরাহ করলেও খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত বেস লেয়ার (যেমন ভেস্ট, অন্তর্বস্ত্র) নিয়ন্ত্রণ করে না। এ কারণে আইনি দিক থেকে অ্যাডিডাসের একচেটিয়া স্বত্ব ভঙ্গ হয়নি, কিন্তু ব্র্যান্ড ভিজিবিলিটির দিক থেকে এটি অ্যাডিডাসের জন্য অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
বিপণনের সাফল্য না কি বিপর্যয়?
বিপণন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গিলের জন্য এটি 'দূর্ঘটনাবশত ভাইরাল' হওয়া ঘটনা হলেও, নাইকি বিনা খরচে বিপুল প্রচারণা পেয়ে গেছে। উইট অ্যান্ড চাই গ্রুপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নহুষ গুলাওয়ানি বলেছেন, “অ্যাডিডাস কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে যা করতে চায়, নাইকি তা এক ভেস্টের মাধ্যমে পেয়ে গেছে।”
তবে এ ধরনের ঘটনায় খেলোয়াড়ের ব্যক্তিগত ব্র্যান্ড এবং দলীয় দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টিও উঠে এসেছে। গিল নাইকির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর এবং তার ব্যক্তিগত স্পনসরশিপ চুক্তির মূল্য প্রায় ১০-১২ কোটি টাকা বার্ষিক। তাই বিপণন ও আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গিলের এমন পোশাক পরা ভবিষ্যতে তার ব্যক্তিগত চুক্তির পাশাপাশি দলের স্পনসরশিপ সম্পর্কেও প্রশ্ন তুলতে পারে।
শাস্তির মুখে পড়তে পারেন গিল?
২০০৭ সালে সৌরভ গাঙ্গুলিকে পুমা হেডব্যান্ড পরার জন্য জরিমানা করেছিলেন বিসিসিআই, তখন নাইকি ছিল অফিসিয়াল স্পনসর। সে প্রেক্ষাপটে শুভমান গিলকেও শোকজ নোটিশ পাঠানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশ্লেষকরা। যদিও বিসিসিআই এবং অ্যাডিডাস এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি।
ক্রিকেট মাঠের বাইরেও ‘খেলা’ চলে
বিশ্লেষক হেমাল মাজিথিয়া বলেন, ‘গিলের পারফরম্যান্স যেমন আলোচনায় এসেছে, তেমনই তার ভেস্টও তাকে বিপণনের আলোচনায় তুলে এনেছে। এমন ঘটনা তার ব্র্যান্ড ইমেজ সাময়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।’
একইসাথে এটি দেখিয়ে দিয়েছে, আজকের দিনে খেলোয়াড়ের পোশাকের প্রতিটি দৃশ্যমান অংশ কোটি কোটি টাকার বিপণন পরিকল্পনায় প্রভাব ফেলতে পারে।
গিল হয়তো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শতক হাঁকিয়ে রেকর্ড গড়েছেন, কিন্তু তার ‘ভেস্ট বিতর্ক’ ভারতীয় ক্রিকেটে স্পনসরশিপ এবং ব্যক্তিগত চুক্তির জটিল সমীকরণ নিয়েও নতুন বিতর্ক উস্কে দিয়েছে।
