গল্প
রোহান ও ছোট মামা
জাকির হোসেন সরকার
প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বেশ কদিন ধরে রোহানের স্কুল বন্ধ। এ সময়ে আগে কখনো স্কুল বন্ধ থাকেনি। কেন বন্ধ থাকছে স্কুল? মায়ের কাছে জানতে চেয়েছে রোহান। মা জবাব দিল, সারা দেশে নাকি আন্দোলন হচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। সব স্কুল কলেজের ছাত্ররা রাস্তায় নেমেছে। মায়ের কথা শুনে রোহানের মনে অনেক প্রশ্ন জাগে। তবে মা সব প্রশ্নের জবাব দেয় না। বলে কিনা বড় হলে সব বুঝতে পারবে। একা একা ঘরে বসে থাকতে কত আর ভালো লাগে। কবে যে স্কুল খুলবে? সহপাঠীদের সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পারবে? এ কদিনে মনের ভেতর অনেক কথা জমে আছে তার। তবে এত সব কষ্টের মাঝেও একটি আনন্দের সংবাদ আছে রোহানের জন্য। সেটা হলো আগামীকাল গ্রামের বাড়ি থেকে ছোট মামা আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেবে সে। কিছুদিন নাকি থাকবে তাদের বাসায়। কত আনন্দ হবে তখন, ভাবতেই মনটা আনন্দে নেচে ওঠে। কারণ ছোট মামার সঙ্গে তার অনেক ভাব। গ্রামের বাড়িতে গেলে পুরো গ্রাম ঘোরাতে নিয়ে যাওয়া, গাছে দোলনা বেঁধে দোল খাওয়া, খালের জলে জলকেলি করা, গঞ্জে গিয়ে নাগরদোলায় চড়া, পুকুর থেকে মাছ ধরা-সব কিছুই চলে ছোট মামার সঙ্গে। আবার রাতে ঘুমানোর সময় রাক্ষস-খোক্কসের গল্প তো আছেই। তাই ছোট মামা রোহানের কাছে অনেক প্রিয়। কিন্তু সময় তো কাটে না। ইস্; আগমীকালটা যে কখন আসবে। ধৈর্য্যরে প্রহর এত লম্বা হয় কেন।
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় তার। সকালে ছোট মামার ডাকে ঘুম ভাঙে রোহানের। চোখ মেলেই এক দৌড়ে মামার কাছে। মামা ব্যাগ খুলে একেক করে রোহানের জন্য আনা উপহার দিতে থাকে। উপহার পেয়ে রোহানের আনন্দ আর দেখে কে। মামাকে পেয়ে সকালের নাশতার কথা ভুলে যায় সে। কত কথা জমে আছে মামাকে বলার জন্য। এক মুহূর্তের জন্যও মামাকে ছাড়তে নারাজ। কিন্তু ছোট মামা কেমন যেন হয়ে গেছে। আনমনে কি যেন ভাবে। আগের মতো সেই উচ্ছ্বাস নেই। বারন্দায় মোবাইলে কার সঙ্গে যেন কথা বলে। এ সব কিছুই রোহানের কাছে অদ্ভুত মনে হতে থাকে। ছোট মামা তো আগে এমন ছিল না। তবে কি হয়েছে। অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে রোহানের মনে। বাড়ির ছাদে খাঁচায় পোষা পায়রার পরিবারে নতুন অতিথি এসেছে। দুটো ফুটফুটে বাচ্চা, দেখতে অনেক সুন্দর। ছোট মামাকে তো ওই কিউট বাচ্চাদের দেখাতেই হবে। কিন্তু ছোট মামা তো বাসায় নেই। গেল কোথায়? মাকে প্রশ্ন করতেই মা জবাব দিল, ছোট মামা নাকি তার বড় খালার বাসায় চলে গেছে। ওই বাসায় সাঈদ ভাইয়া আছে। সেও ভর্তি পরীক্ষা দেবে। উফ, কখন যে ছোট মামা আসবে। ধুর, কিছু ভালো লাগে না।
আজ ৩ আগস্ট। বিক্ষোভে উত্তাল পুরো দেশ। একদফা দাবিতে স্লোগানে স্লোগানে মুখোরিত চারপাশ। বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশ মুহুর্মুহু গুলি চালাচ্ছে। রোহানের ছোট মামা রাফি ও সাঈদ ভাইয়া একটি বিক্ষোভের অগ্রভাগেই ছিল। হঠাৎ পুলিশের একটি বুলেট রাফির বুকের ডান পাশ ভেদ করে বেরিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সে। সাড়ে ৪ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে হার মানতে হয় রাফিকে। রাত ১০ টায় হাসপাতাল থেকে রাফির লাশ নিয়ে আসে সাঈদ ভাইয়া। রোহানের মায়ের আর্তচিৎকারে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে রোহান। রোহান বুঝতে পারে তার প্রিয় ছোট মামা তাদের ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেছে। সেখান থেকে আর কখনো ফিরে আসবে না। ছোট মামার দেওয়া সেই খেলনা আর উপহারগুলো পড়ে আছে এখানে-সেখানে। শুধু ছোট মামা নেই।
