এশিয়া প্যাসিফিক ডিএনএস ফোরাম ২০২৫
অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্টারনেট গঠনে নতুন দিগন্তের প্রতিশ্রুতি
সাইফ আহমাদ, হ্যানয়, ভিয়েতনাম থেকে
প্রকাশ: ১১ মে ২০২৫, ০৯:৩৭ এএম
আইক্যান এশিয়া-প্যাসিফিক ডিএনএস ফোরাম-২০২৫। ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ যেন হয় সবার জন্য-এ প্রত্যাশা নিয়েই ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল আইক্যান এশিয়া-প্যাসিফিক ডিএনএস ফোরাম-২০২৫। ভিয়েতনাম ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টার (VNNIC) ও আন্তর্জাতিক সংস্থা আইক্যান-এর যৌথ আয়োজনে ৮ মে শুরু হওয়া দুই দিনের এ ফোরামে ডিএনএস প্রযুক্তি, নীতিমালা ও বৈশ্বিক সংযোগের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের বিশেষজ্ঞরা।
‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্টারনেট: সংযোগে শক্তি, ভবিষ্যতের পথে অগ্রগতি’-এ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে আয়োজিত এ ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভিয়েতনামের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বুই হুয়াং ফুয়ং।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘ভিয়েতনাম এখন উদ্ভাবন ও ডিজিটাল রূপান্তরের এক গুরুত্বপূর্ণ যুগে প্রবেশ করছে, যেখানে ডিএনএস অবকাঠামো একটি মেরুদণ্ডস্বরূপ ভূমিকা পালন করছে।’
ফোরামে ইন্টারনেট পরিকাঠামোর উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবহার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। ডোমেইন নাম সিস্টেম (ডিএনএস)-এর নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ব্লকচেইন প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে মতবিনিময় হয়। সব ভাষাভাষীর জন্য ইন্টারনেট সহজলভ্য করতে বহুভাষিক ডোমেইনের প্রসারের ওপর জোর দেওয়া হয়।
ভিয়েতনামের ৬৫.৫ শতাংশ ইন্টারনেট প্রোটোকল সংস্করণ ৬ (আইপিভি৬) গ্রহণযোগ্যতার সফল অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়, যা অন্যান্য দেশের জন্য অনুকরণীয়। নিজস্ব কান্ট্রি কোড টপ লেভেল ডোমেইন (.bd) ব্যবহারে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কৌশল নিয়েও আলোচনা হয়।
ডিএনএস ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক উত্তম অনুশীলন অনুসরণ এবং কারিগরি দক্ষতা উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। আলোচনায় ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনায় টেকসই ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয়।
হ্যানয়ের এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন প্রায় ৩০ দেশের ৪০০ জনেরও বেশি প্রতিনিধি। এর মধ্যে ছিলেন আইক্যান (ইন্টারনেট করপোরেশন ফর অ্যাসাইন্ড নেমস অ্যান্ড নাম্বার্স), এপনিক (এশিয়া প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টার), আইএসওসি (ইন্টারনেট সোসাইটি), এপিটিএলডি (এশিয়া প্যাসিফিক টপ লেভেল ডোমেইন অ্যাসোসিয়েশন) এবং এপনিক ফাউন্ডেশনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা। দক্ষিণ এশিয়া, পূর্ব এশিয়া, ওশেনিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রতিনিধিরা তাদের নিজ নিজ দেশের বাস্তবতা ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। বাংলাদেশ, ভারত, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড এবং ইন্দোনেশিয়ার অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য।
সাইবার হামলা ও ফিশিং আক্রমণ বাড়ায় ফোরামে ডিএনএসএসইসি বাস্তবায়নের গুরুত্ব উঠে আসে। এতে ডিএনএস তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত হয়ে হাইজ্যাক রোধ সম্ভব। সম্মেলনে জানানো হয়, এখনো অনেক আইএসপি ও সরকারি সাইটে এটি কার্যকর হয়নি। দেশগুলোকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানানো হয়।
এবারের ফোরামে বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণ করেন ইওয়াই হোস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরান হোসেন এবং ড্রিমলাইন আইটি সল্যুশনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোর্তজা আহমেদ।
ডোমেইন নেম সিস্টেম (DNS) ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্যানেল আলোচনায় বক্তব্য দেন ইমরান। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘এই সেশনে আমি বাংলাদেশের হোস্টিং ও ইন্টারনেট সেবা (আইএসপি) খাতে ডিএনএস ব্যবস্থাপনার সর্বোত্তম চর্চা (বেস্ট কারেন্ট প্র্যাকটিস) নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের দেশে এখনো ডিএন৬এস ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সচেতনতা এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব রয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান শুধু ওয়েবসাইট, সফটওয়্যার কিংবা ই-মেইল সচল রাখার দিকেই বেশি মনোযোগ দেয়, কিন্তু ডিএনএস-এ সমস্যা দেখা দিলে এসবকিছুই অচল হয়ে যায়। ডিএনএস হলো একটি মৌলিক স্তর, যা ব্যর্থ হলে পুরো অনলাইন অবকাঠামো ভেঙে পড়ে। তাই ডিএনএসের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে যথাযথ প্রযুক্তিগত চর্চা ও প্রস্তুতি গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
ডিএনএস ফোরামের মাধ্যমে একটি ব্যাপক বার্তা দেওয়া হয়েছে, প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে এনে নিজস্ব ডিএনএস অবকাঠামো গড়ে তোলার মাধ্যমেই টেকসই ডিজিটাল উন্নয়ন সম্ভব। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জন্য এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ; কারণ এ অঞ্চলের অনেক দেশ এখনো আন্তর্জাতিক ডোমেইন ও হোস্টিং সেবার ওপর নির্ভরশীল। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, একদিকে যেমন ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য নিজস্ব ডিএনএস অবকাঠামো অপরিহার্য, অন্যদিকে স্থানীয় উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তাদের সুযোগ করে দেওয়ার জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ।
আইক্যান প্রেসিডেন্ট কার্টিস লিন্ডকভিস্ট বলেছেন, ‘ডোমেইন নাম ব্যবস্থা (ডিএনএস) ইন্টারনেটের ভিত্তি। এর নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরাপদ ও প্রযুক্তিনির্ভর ইন্টারনেট গঠনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি, যেখানে সবাই সমান সুযোগ পাবে। ভাষা ও লিপির বৈচিত্র্যকে গুরুত্ব দিয়ে মাতৃভাষায় ডোমেইন ব্যবহারের সুযোগ নিশ্চিত করাও আমাদের অগ্রাধিকার।’
এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ডিএনএস ব্যবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লকচেইন ও বহুভাষিক ডোমেইন ব্যবহারের মতো উদ্ভাবন যুক্ত করে আমরা আরও অংশগ্রহণমূলক ইন্টারনেট ব্যবস্থা গড়তে চাই।’
