মিশা-জায়েদ ইস্যুতে বিভক্ত চলচ্চিত্র শিল্পীরা
আনন্দনগর প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মিশা সওদাগর ও জায়েদ খানকে বয়কটের ইস্যুতে চলচ্চিত্রাঙ্গনে আবারও বিভক্তি দেখা দিয়েছে। গত সপ্তাহে চলচ্চিত্রের স্বার্থবিরোধী কাজের অভিযোগ এনে এ দুজনকে বয়কট করেছে চলচ্চিত্রের ১৭টি সংগঠনের সমন্বয়ে তৈরি ‘চলচ্চিত্র পরিবার’।
যদিও এ পরিবারে শিল্পী সমিতিও একসময় অন্তর্ভুক্ত ছিল। অন্যদিকে শিল্পী সমিতি থেকে পূর্ণ সদস্যপদ বাতিল করার কারণে এ দু’জনের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে বঞ্চিত ১৮৪ সদস্য। ১৯ জুলাই দিনভর বাংলাদেশ ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনে (বিএফডিসি) শিল্পী সমিতির সদস্যপদ হারানো শতাধিক সাধারণ শিল্পী বিক্ষোভ করেন।
তাদের অভিযোগ, ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিশেষ কোনো কারণ ছাড়াই তাদের সদস্যপদ বাতিল করেছেন সমিতির বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এ কারণে মিশা সওদাগর ও জায়েদ খানের পদত্যাগ চেয়ে রাস্তায় নেমেছেন তারা। বিক্ষোভ প্রসঙ্গে অভিনেতা ও প্রযোজক ফিরোজ শাহী বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই আমরা সিনেমার সঙ্গে জড়িত। শিল্পী সমিতির একজন সম্মানিত সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। ভোট দিয়েছি, যোগ্য নেতৃত্ব বাছাই করেছি; কিন্তু মিশা-জায়েদ প্যানেল ক্ষমতায় এসে আমাদের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছেন। কোন সাহসে তারা এমনটি করলেন, তার জবাব চাই। আমরা শিল্পী সমিতি থেকে মিশা সওদাগর ও জায়েদ খানের পদত্যাগ চাই। আমাদের পূর্ণ সদস্যপদ ফেরত চাই।’
শিল্পী সমিতির সর্বশেষ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে ১৮৪ সাধারণ শিল্পীর ভোটাধিকার বাতিল করেন সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক মিশা সওদাগর ও জায়েদ খান। সমিতির গঠনতন্ত্র রক্ষার স্বার্থেই তারা এ কাজটি করেছেন বলে তখন জানিয়েছেন। এরপর থেকেই ভোটাধিকার ও পূর্ণ সদস্যপদ হারানো ১৮৪ শিল্পী তাদের বঞ্চিত করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছেন।
এদিকে গত সপ্তাহে চলচ্চিত্র পরিবার চলচ্চিত্রের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিরোধিতা করার কারণে জায়েদ খান ও মিশা সওদাগরকে চলচ্চিত্রসংক্রান্ত সব ধরনের কার্যক্রম থেকে বয়কট করে। পরিবারের নেতাদের দাবি, জায়েদ খান চলচ্চিত্রের স্বার্থরক্ষায় যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে সেসব সিদ্ধান্তে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন, নিয়মকানুন না মানার জন্য শিল্পীদের উসকানি দিচ্ছেন। চলচ্চিত্র পরিবারের এ বয়কটের বিরুদ্ধে ১৯ জুলাই এফডিসিতে শিল্পী সমিতির ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করেন মিশা সওদাগর ও জায়েদ খান। তবে এতে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, রুবেল ও খলনায়ক ডিপজল ছাড়া তারকা শিল্পীদের আর কাউকে দেখা যায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘চলচ্চিত্রের এখন কী অবস্থা সেটি নতুন করে বলার আর কিছু নেই। যে করেই হোক, যেভাবেই হোক চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আমরা প্রযোজক, পরিচালক ও শিল্পীরা চলচ্চিত্রের অংশ। কেউ কাউকে বাদ দিয়ে কখনও কোনো উন্নয়ন করতে পারবে না। এখন যে দুর্যোগ চলছে, সেখানে শিল্পী, প্রযোজক, কলা-কুশলী অনেকেই খারাপ দিন পার করছেন। আপনাদের সবাইকে বলব, নিজ নিজ সংগঠনের মাধ্যমে বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ান।’
ভুল বোঝাবুঝি নিরসন করে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মিশা সওদাগর বলেন, ‘আমরা কোনো দলাদলি, হিংস্রতা, বিদ্বেষ চাই না। আমরা চাই চলচ্চিত্রের উন্নয়ন। আমাদের শিল্পী সমিতির মূল কাজ শিল্পীদের স্বার্থসংরক্ষণ। আমরা সবাইকে সম্মান করে কাজ যাচ্ছি। আমরা চলচ্চিত্রের এ ক্রান্তিকালে শান্তি চাই। আমরা শিগগিরই ক্ষণিকের ভুলটাকে শুধরে নেব।’
এদিকে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে জায়েদ খান বলেন, ‘আমার সঙ্গে কারও শত্রুতা নেই। আমি যতটুকুই করেছি, আমি শুধু আমার সংগঠনের জন্য করেছি। তারপরও আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। এখানে অন্য কাউকে নয়, আমাদের দু’জনকে ছোট করা হচ্ছে। শিল্পীকে কেউ এভাবে বয়কট করতে পারেন না। দয়া করে আপনারা পেছন থেকে ষড়যন্ত্র না করে আসুন কীভাব ছবি বানানো যায়, সেই চিন্তা করি।’
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকে দেয়া লিখিত বক্তব্যে মিশা ও জায়েদ উল্লেখ করেন, ‘আগামী সাত দিনের মধ্যে যদি বয়কট প্রত্যাহার করে সুষ্ঠু সমাধান না করা হয় তাহলে শিল্পী সমিতির সদস্যরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে যাবেন।’ ঠিক এ বিষয়টি নিয়ে শিল্পীদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়েছে। বেশিরভাগ শিল্পীই কাজ করার পক্ষে। এ বিষয়ে কয়েকজন তারকাশিল্পীর কাছে প্রশ্ন করা হলে তারা বলেন, ‘এটি মিশা-জায়েদের সমস্যা। তাদের সমস্যা তারা মেটাবেন। অন্য শিল্পীদের মতামত নিয়ে কি তারা কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন? এখানেও তারা ব্যক্তিস্বার্থে সমিতিকে ব্যবহার করছেন। তাদের বয়কট প্রত্যাহার না করা হলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অনেক শিল্পীই শুটিং করবেন। এটি তারা কোনোদিনই আটকে রাখতে পারবেন না।’
