Logo
Logo
×

বাংলার মুখ

রাবিতে সৌন্দর্য বর্ধনের নামে চলছে গাছ কাটা

Icon

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০১৯, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অবকাঠামো নির্মাণ, বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বর্ধনের নামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে গাছ কাটার মহোৎসব। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের তীব্র ক্ষোভ এবং সমালোচনা সত্ত্বেও চলছে সবুজ ক্যাম্পাসে একের পর এক ঐতিহ্যবাহী পুরনো গাছ কাটার মিশন। এতে একদিকে যেমন ক্যাম্পাসের সবুজাভ অবস্থা ক্রমেই বিলীন হতে শুরু করেছে, অন্যদিকে হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত কয়েক বছরে বিভিন্ন অজুহাতে কমপক্ষে ৪০০টি ঐতিহ্যবাহী পুরনো গাছ কেটেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২০১৫ সালের ২২ মার্চ কেন্দ্রীয় মসজিদ ও বিদ্যুতের উন্নয়নের নামে দীর্ঘদিনের পুরনো গগন শিরিষ গাছ কাটতে শুরু করে প্রশাসন। পরে ছাত্রলীগ ও শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে পিছু হটে। একই বছরের ৪ এপ্রিল কালবৈশাখী ঝড়ে কিছু গাছ ভেঙে পড়লে গণহারে প্রায় দুই শতাধিক গাছ কাটা হয়। এর মধ্যে অন্তত ৭৫-৮০টি ভালো গাছ কেটে ফেলা হয়। একই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বনায়ন প্রকল্প থেকে ছোট-বড় প্রায় দেড় শতাধিক গাছ কেটে লুট করে নিয়ে যায় স্থানীয়রা। এ ঘটনায় মামলা হলেও পরে প্রশাসনের তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি। একই বছরের মে মাসে অক্ট্রয় মোড় থেকে মাজার গেট পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা থেকে ছয়টি বড় আকৃতির গাছ কেটে নিয়ে যায় ২৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পরোক্ষ সম্মতি ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ ও সমালোচনার মুখে মাঝে ২০১৬ সাল গাছ কাটা বন্ধ থাকলেও ২০১৭ শেষ দিকে কোনো টেন্ডার ছাড়াই পরিষ্কারে নামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের বেশ কয়েকটি আম ও লিচু গাছ কাটা হয়। ২০১৮ সালে ১২ ফেব্র“য়ারি কৃষি প্রকল্প বিভাগ স্থানীয় বাসিন্দা মিলনের কাছে ১৫টি প্রাচীন গাছ বিক্রয় করলেও মিলন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গা থেকে ২৯টি গাছ কেটে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ ওঠে। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে শীতকালীন ছুটি চলাকালীন তিন দফা টেন্ডারে মাধ্যমে ব্যবসায়ীর কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী মাঠে ৭৫টি গাছ বিক্রয় করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ক্যাম্পাসকে পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হলেও ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে তাদের আবাসস্থল। এতে করে হুমকির মুখে পড়ছে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সেলিনা পারভীন বলেন, ‘ক্যাম্পাসে নিয়মিত দীর্ঘদিনের পুরনো গাছ কাটা হচ্ছে। সর্বশেষ স্কুল নির্মাণের নামে জুবেরী মাঠের যে বড় বড় গাছ কাটা হয়েছে সেগুলো সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি পরিবেশ শীতল রাখত।’ দুঃখ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, ‘খারাপ লাগার বিষয় হচ্ছে স্কুল নির্মাণের বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও অনেক খালি জায়গা রয়েছে। বড় বড় গাছ কেটে স্কুল নির্মাণ সত্যি দুঃখজনক।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী এমরান আলী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বর্ধন কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ গাছ কাটা হয়েছে। এছাড়া খালি জায়গাগুলোতে বর্ষা মৌসুমে চারাগাছ রোপণ করা হবে বলেও জানান তিনি। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রফেসর চৌধুরী মো. জাকারিয়া বলেন, স্কুল নির্মাণের জন্য ইউকিলিপ্টাস কাটা হয়েছে এগুলো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। বিভিন্ন সময়ে পুরনো গাছ কাটার বিষয় তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে যে গাছগুলো কাটা হয়েছে তা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে কাটা হয়েছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম