Logo
Logo
×

বাংলার মুখ

‘বস্তাবন্দি’ পাবলিক লাইব্রেরি!

Icon

এম এ কাউসার, চট্টগ্রাম ব্যুরো

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) পরিচালিত পাবলিক লাইব্রেরিটি এখন বস্তাবন্দি অবস্থায় রয়েছে! সাড়ে তিন মাস ধরে লাইব্রেরির ৪০ হাজারের বেশি বই বস্তায় ভরে রাখা হয়েছে। নগরীর বিবিরহাট গরুরবাজার এলাকায় চসিকের আরবান হেলথ কমপ্লেক্সের তৃতীয় তলায় ছোট ছোট কয়েকটি কক্ষে বস্তাগুলো স্তূপ করে রাখা হয়েছে। নগরীর লালদিঘী পাড়ে অবস্থিত পাবলিক লাইব্রেরির ভবনটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য ভেঙে ফেলায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বইগুলো বিকল্প কোনো ভবনে সংরক্ষণ করা ও পাঠকদের পড়ার ব্যবস্থা করা হয়নি। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় বস্তাবন্দি করে যেনতেন অবস্থায় ফেলে রাখায় একদিকে যেমন শত বছরের প্রাচীন এবং দুর্লভ দলিল নষ্ট হওয়ার পথে তেমনি পাঠকরাও বইগুলো পড়তে পারছে না। স্তূপ করে রাখা ৯শ’ বস্তা বইয়ের মধ্যে রয়েছে- প্রায় দেড়শ’ বছরের পুরনো ইংরেজি সাহিত্য, ব্রিটিশ আমলের দলিল, পেটেন্ট, কলকাতা থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন গেজেটসহ এমন মূল্যবান পত্রিকা ও সাহিত্য সাময়িকী, যা দ্বিতীয়টি সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে প্রাচীন গ্রন্থাগার হিসেবে পরিচিতি রয়েছে চসিকের পাবলিক লাইব্রেরিটির। ১৯০৪ সালে চট্টগ্রাম পৌরসভার প্রথম ভবনে চিটাগং মিউনিসিপ্যাল লাইব্রেরি নামে গড়ে উঠে এটি। এরই ধারাবহিকতায় ১৯২১ থেকে ২২ সালে নূর আহমদ চেয়ারম্যান থাকাকালে এই লাইব্রেরির সম্প্রসারণ ঘটে। ১৯২৩ সালে লালদিঘীর পাড়ে অবস্থিত পৌরসভা ভবনে স্থানান্তরিত হয় পাবলিক লাইব্রেরিটি। স্বাধীনতার পর এর নামকরণ করা হয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পাবলিক লাইব্রেরি। সাড়ে তিন মাস আগে চসিকের পাবলিক লাইব্রেরির পুরনো ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়। জাইকার অর্থায়নে ‘রি-কনস্ট্রাকশন অব লালদীঘি সেন্ট্রাল ডিজেস্টার ম্যানেজমেন্ট কন্ট্রোল অফিস লাইব্রেরি অ্যান্ড কমিউনিটি কাম সাইক্লোন শেল্টার’ প্রকল্পের অধীনে চসিকের পাবলিক লাইব্রেরির আটতলা ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। প্রায় সাড়ে ১৫ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল ভবনটি। চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান ২০১৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি কাজটি শেষ করার কথা রয়েছে। এর আগে গত বছরের ১৯ অক্টোবর লাইব্রেরির সব বই, জার্নাল, আলমিরাসহ সব স্থানান্তর করা হয় বিবিরহাট গরুর বাজারের আরবান হেলথ কমপ্লেক্সে। স্থানান্তর হওয়া লাইব্রেরির বই ও আসবাবপত্র ওই ভবনের কয়েকটি গুদামজাত অবস্থায় রাখা হয়েছে। এর তত্ত্বাবধানে রয়েছে চসিকের কাউন্সিলর সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা যুগান্তরকে বলেন, ‘বহুতল ভবন গড়ে তোলার কারণে লালদিঘীপাড়ের পাবলিক লাইব্রেরি ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। লাইব্রেরির বইগুলো ওখান থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় আপাতত লাইব্রেরি কার্যক্রম পরিচালনা করা যাচ্ছে না। তাই বইগুলো বস্তায় ভরে রাখা হয়েছে। বইগুলো সংরক্ষণে স্থানীয় কাউন্সিলরকে বলা হয়েছে।’

সরেজমিন সোমবার নগরীর বিবিরহাট গরু বাজারের পাশে চসিকের আরবান হেলথ কমপ্লেক্স ভবনে গিয়ে দেখা যায়, ওই ভবনের নিচতলায় রয়েছে চসিকের প্রকৌশল বিভাগের পুল অফিস। দ্বিতীয় তলায় আরবান হেলথ সেন্টার। আর তৃতীয় তলার কয়েকটি কক্ষে ৯শ’ বস্তায় রাখা হয়েছে পাবলিক লাইব্রেরির বইগুলো। একটি কক্ষে লাইব্রেরির আসবাবপত্রের মধ্যে চেয়ার, টেবিল ও আলমিরাগুলো রাখা হয়েছে। অপর কক্ষে একটির ওপর একটি কক্ষে পাহাড়ের মতো স্তূপ করে রাখা হয়েছে বস্তাগুলো। অযত্নে ফেলে রাখা হয়েছে পুরনো পত্রিকার বান্ডেল। এসব বস্তার গায়ে জীবনী, মেডিকেল, বিজ্ঞান সমগ্র, সাহিত্য-সাময়িকী ইত্যাদি নাম লেখা রয়েছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম