আনন্দের মাঝেও স্বপ্নভঙ্গের ভয়
অদম্য মেধাবীদের গল্প
যুগান্তর ডেস্ক
০৯ জুন ২০২০, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
অভাবকে জয় করে পাবনার সুজানগর উপজেলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে রিকাত আনযুম নাজিমা। ময়মনসিংহের গৌরীপুরের শামছুল আলম প্রাইভেট কিংবা কোচিং না করেও সেরা সাফল্য দেখিয়েছে। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার আবু ঈশা বাবার সঙ্গে দর্জির কাজ করে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। দিনমজুরের মেয়ে মুনিয়া আক্তার মুন্নি জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এসএসসিতে ভালো ফলাফল করলেও এই শিক্ষার্থীদের ঘরে আনন্দ নেই। অর্থের অভাবে উচ্চশিক্ষার স্বপ্নভঙ্গের শঙ্কায় দিন কাটছে তাদের। যুগান্তর প্রতিনিধিরা জানান-
রিকাত আনযুম নাজিফা : অভাবকে জয় করে সুজানগর উপজেলার মধ্যে সর্বোচ্চ ১২১৯ মার্কস পেয়ে মেধা তালিকায় ২য় হওয়ার গৌরব অর্জন করেন রিকাত আনযুম নাজিফা। সুজানগর শহীদ দুলাল পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন নাজিফা। সে পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নের কোলচুরী গ্রামের দরিদ্র আবদুল কদ্দুস শেখের মেয়ে। এর আগে একই বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণির জেএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫সহ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি এবং ৪০নং ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষাতেও গোল্ডেন জিপিএ-৫সহ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করেছিল সে। এমন ফলাফলেও আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে বর্তমানে মেয়ের পড়ালেখা নিয়ে শঙ্কিত মা-বাবা।
শামছুল আলম : অভাবের তাড়নায় শামছুল আলমের ভাগ্যে জুটেনি ভালো খাবার, পড়া হয়নি ভালো পোশাক। এমনকি সুযোগ হয়নি প্রাইভেট কিংবা কোচিংয়ে পড়ার। তারপরও কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ে এসএসসি পরীক্ষায় সর্ববিষয়ে (গোল্ডেন) জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে সে। কিন্তু টাকার অভাবে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হতে পারবে কিনা সে শঙ্কায় আছে শামছুলের বাবা। শামছুল আলমের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের গজন্দর গ্রামে। সে চলতি বছর গৌরীপুর রাজেন্দ্র কিশোর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। শামছুল আলমের বাবা রফিকুল ইসলাম পেশায় ভ্যানচালক। স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন সাড়ে তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করত শামছুল। অভাবের তাড়নায় পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে প্রাইভেট কিংবা কোচিং করতে না পারলেও ভালো ফলাফলে সে দরিদ্র মা-বাবার মুখে হাসি ফুটিয়েছে।
আবু ঈশা : বাবার সঙ্গে উল্লাপাড়ার বোয়ালিয়া বাজারে দর্জির কাজ করে এ বছর আবু ঈশা এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। সে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার পাগলা উত্তরপাড়া গ্রামের হাসান আলীর ছেলে। উল্লাপাড়া মার্চেন্ট পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ঈশা এ বছর বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয়। আর্থিক অনটনে ভবিষ্যৎ লেখাপড়া অনিশ্চিত হওয়ায় ভালো ফলাফলের আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে তার পরিবারে। অর্থের অভাবে প্রাইভেট পড়তে পারেনি ঈশা। ঈশার বাবা হাসান আলী জানান, বোয়ালিয়া বাজারে দর্জির কাজ করে কোনমতে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। একমাত্র ছেলে আবু ঈশা ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তার বাবার সঙ্গে দর্জির কাজ করে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। ঈশার একটি ছোট বোন রয়েছে। সে বোয়ালিয়া উচ্চবিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। সামান্য আয়ে কোনমতে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে তাদের।
মুনিয়া আক্তার মুন্নি : দিনমজুর আলমগীর হোসেনের মেয়ে মুনিয়া আক্তার মুন্নি দুমকীর জয়গুননেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। ছোটবেলা থেকে অভাব-অনটনে কাটছে দিন। বাবার পড়ালেখার খরচ চালানোর সামর্থ্য না থাকার এক পর্যায়ে মুনিয়া পড়ালেখা বাদ দিয়ে ঢাকায় চলে যায় কর্মের খোঁজে। কিন্তু পড়ালেখার প্রতি অতি আগ্রহ থাকায় চাকরি ছেড়ে আবার গ্রামে ফিরে আসে। নতুন উদ্যমে পড়ালেখা শুরু করে মুনিয়া। তার পড়ালেখার আগ্রহ দেখে স্কুলের শিক্ষকরাও তার প্রতি যত্নবান হন। পরিচিত কিছু মানুষও সামান্য সহযোগিতা করেন। দরিদ্রতার মধ্যে বড় হয়েও এবারের অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন মুনিয়া।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
অদম্য মেধাবীদের গল্প
আনন্দের মাঝেও স্বপ্নভঙ্গের ভয়
অভাবকে জয় করে পাবনার সুজানগর উপজেলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে রিকাত আনযুম নাজিমা। ময়মনসিংহের গৌরীপুরের শামছুল আলম প্রাইভেট কিংবা কোচিং না করেও সেরা সাফল্য দেখিয়েছে। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার আবু ঈশা বাবার সঙ্গে দর্জির কাজ করে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। দিনমজুরের মেয়ে মুনিয়া আক্তার মুন্নি জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এসএসসিতে ভালো ফলাফল করলেও এই শিক্ষার্থীদের ঘরে আনন্দ নেই। অর্থের অভাবে উচ্চশিক্ষার স্বপ্নভঙ্গের শঙ্কায় দিন কাটছে তাদের। যুগান্তর প্রতিনিধিরা জানান-
রিকাত আনযুম নাজিফা : অভাবকে জয় করে সুজানগর উপজেলার মধ্যে সর্বোচ্চ ১২১৯ মার্কস পেয়ে মেধা তালিকায় ২য় হওয়ার গৌরব অর্জন করেন রিকাত আনযুম নাজিফা। সুজানগর শহীদ দুলাল পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন নাজিফা। সে পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নের কোলচুরী গ্রামের দরিদ্র আবদুল কদ্দুস শেখের মেয়ে। এর আগে একই বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণির জেএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫সহ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি এবং ৪০নং ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষাতেও গোল্ডেন জিপিএ-৫সহ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করেছিল সে। এমন ফলাফলেও আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে বর্তমানে মেয়ের পড়ালেখা নিয়ে শঙ্কিত মা-বাবা।
শামছুল আলম : অভাবের তাড়নায় শামছুল আলমের ভাগ্যে জুটেনি ভালো খাবার, পড়া হয়নি ভালো পোশাক। এমনকি সুযোগ হয়নি প্রাইভেট কিংবা কোচিংয়ে পড়ার। তারপরও কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ে এসএসসি পরীক্ষায় সর্ববিষয়ে (গোল্ডেন) জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে সে। কিন্তু টাকার অভাবে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হতে পারবে কিনা সে শঙ্কায় আছে শামছুলের বাবা। শামছুল আলমের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের গজন্দর গ্রামে। সে চলতি বছর গৌরীপুর রাজেন্দ্র কিশোর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। শামছুল আলমের বাবা রফিকুল ইসলাম পেশায় ভ্যানচালক। স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন সাড়ে তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করত শামছুল। অভাবের তাড়নায় পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে প্রাইভেট কিংবা কোচিং করতে না পারলেও ভালো ফলাফলে সে দরিদ্র মা-বাবার মুখে হাসি ফুটিয়েছে।
আবু ঈশা : বাবার সঙ্গে উল্লাপাড়ার বোয়ালিয়া বাজারে দর্জির কাজ করে এ বছর আবু ঈশা এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। সে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার পাগলা উত্তরপাড়া গ্রামের হাসান আলীর ছেলে। উল্লাপাড়া মার্চেন্ট পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ঈশা এ বছর বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয়। আর্থিক অনটনে ভবিষ্যৎ লেখাপড়া অনিশ্চিত হওয়ায় ভালো ফলাফলের আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে তার পরিবারে। অর্থের অভাবে প্রাইভেট পড়তে পারেনি ঈশা। ঈশার বাবা হাসান আলী জানান, বোয়ালিয়া বাজারে দর্জির কাজ করে কোনমতে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। একমাত্র ছেলে আবু ঈশা ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তার বাবার সঙ্গে দর্জির কাজ করে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। ঈশার একটি ছোট বোন রয়েছে। সে বোয়ালিয়া উচ্চবিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। সামান্য আয়ে কোনমতে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে তাদের।
মুনিয়া আক্তার মুন্নি : দিনমজুর আলমগীর হোসেনের মেয়ে মুনিয়া আক্তার মুন্নি দুমকীর জয়গুননেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। ছোটবেলা থেকে অভাব-অনটনে কাটছে দিন। বাবার পড়ালেখার খরচ চালানোর সামর্থ্য না থাকার এক পর্যায়ে মুনিয়া পড়ালেখা বাদ দিয়ে ঢাকায় চলে যায় কর্মের খোঁজে। কিন্তু পড়ালেখার প্রতি অতি আগ্রহ থাকায় চাকরি ছেড়ে আবার গ্রামে ফিরে আসে। নতুন উদ্যমে পড়ালেখা শুরু করে মুনিয়া। তার পড়ালেখার আগ্রহ দেখে স্কুলের শিক্ষকরাও তার প্রতি যত্নবান হন। পরিচিত কিছু মানুষও সামান্য সহযোগিতা করেন। দরিদ্রতার মধ্যে বড় হয়েও এবারের অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন মুনিয়া।