বোরহানউদ্দিন কামিল মাদ্রাসার শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিক আজ
বোরহানউদ্দিন (ভোলা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দুবার নদীভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়ার পরও ঐতিহ্য, সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত বোরহানউদ্দিন কামিল মাদ্রাসা শতবর্ষের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। এখন শতবর্ষ উদ্যাপনের জন্য প্রস্তুত এ মাদ্রাসাটি। যদিও করোনা এবং ইউপি নির্বাচনের জন্য দুবার তারিখ পরিবর্তন করতে হয়েছে। শতবর্ষের আহ্বানে, ‘এসো মিলি শিকড় পানে’ এ স্লোগানে আজ শনিবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে বোরহানউদ্দিন কামিল মাদ্রাসার শতবর্ষ পূর্তি উদ্যাপন অনুষ্ঠান। ইতোমধ্যেই মঞ্চ, সাজসজ্জার কাজ শেষ। চারদিকে উৎসবের আমেজ। দীর্ঘ সময় পর মাদ্রাসা জীবনের বন্ধুদের সঙ্গে আবার দেখা হওয়ার প্রহর গুনছেন ডেলিগেটরা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকছেন সাবেক বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমপি। বিশেষ অতিথি হিসাবে থাকছেন ভোলা-২ আসনের সংসদ-সদস্য আলী আজম মুকুল। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬-৭ জন অধ্যাপক, জেলা প্রশাসকসহ স্বনামধন্য ব্যক্তিরাও অনুষ্ঠানে আসছেন।
বর্তমান বোরহানউদ্দিন কামিল মাদ্রাসা একসময় ভোলা সদরের বাপ্তা ইউনিয়নে ছিল। ভোলা সদর উপজেলার বাপ্তা ইউনিয়নের টবগী গ্রামের বিদ্যোৎসায়ী দানবীর মরহুম মৌলভী কেরামত আলী ও মরহুম দলিল উদ্দিন নামের আপন দুই ভাইয়ের ওয়াক্ফকৃত ৯.৬০ একর জমিতে ১৯২১ সালের জানুয়ারি মাসে টবগী মাদ্রাসা নামে সর্বপ্রথম এর জন্ম। পর্যায়ক্রমে ১৯২৯ সালে দাখিল, ১৯৩২ সালে আলিম ও ১৯৩৮ সালে ফাজিল স্তরে স্বীকৃতি পায়। তখন প্রতিষ্ঠানের নামকরণ হয় টবগী সিনিয়র মাদ্রাসা। ১৯৫৭ সালে প্রমত্তা মেঘনার করাল গ্রাসে মাদ্রাসাটি প্রথম নদীভাঙনের শিকার হয়। নদীভাঙনের পর ১৯৫৭ সালে ভোলা সদরের নাছির মাঝি এলাকায় মাদ্রাসাটি স্থানান্তরিত হয়। মরহুম মৌলভী গোলাম রহমানে ওয়াক্ফকৃত জমিতে মাদ্রাসা স্থানান্তরিত হলে টবগী-নাছির মাঝি সিনিয়র মাদ্রাসা নামকরণ করা হয়। ১৯৫৮ সালে কামিল হাদিস বিষয়ে পাঠদান শুরুর মাধ্যমে মাদ্রাসাটি আলিয়া মাদ্রাসায় উন্নীত হয়ে নাছির মাঝি আলীয়া মাদ্রাসা নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৬০ সালে কামিল (আলিয়া) মাদ্রাসা হিসাবে সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে।
১৯৬৬ সালে নাছির মাঝি এলাকায় মেঘনার করাল থাবায় মাদ্রাসাটি দ্বিতীয়বার একেবারে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ মাদ্রাসাটি দ্বিতীয়বারের মতো স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু মাদ্রাসা স্থানান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় জমি ও দাতা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। ওই অবস্থায় মাদ্রাসার তৎকালীন মুহাদ্দিস মরহুম মাও. নুরুল হক সাহেব (ইদারার হুজুর) বোরহানউদ্দিন উপজেলার দানবীর মরহুম মৌলভী আ. জলিলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি স্থানান্তরের বিষয়ে সম্মাতি জানান। ওই সময় তারা রানীগঞ্জ বাজার হাফেজিয়া মাদ্রাসা মসজিদে বসে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। জনগণের আগ্রহে মাদ্রাসাটি আজকের স্থানে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয়।
১৯৮৫ সালে মাদ্রাসা শিক্ষাকে জেনারেল শিক্ষার সঙ্গে সমমানে সমন্বিত করায় দাখিলকে মাধ্যমিকের মান দেওয়া হয়। তখন মাদ্রাসার নামকরণে চারটি ধাপ বা স্তর সৃষ্টি করা হয়। দাখিল সমমান মাধ্যমিক, আলিম সমমান উচ্চমাধ্যমিক, ফাজিল সমমান স্নাতক ও কামিল সমমান স্নাতকোত্তর। ফলে মাদ্রাসাটির নাম আবার বোরহানউদ্দিন কামিল মাদ্রাসা নাম চূড়ান্ত হয়। ২০২১ শিক্ষাবর্ষে ইবতেদায়ি প্রথম শ্রেণি থেকে কামিল স্নাতকোত্তর শ্রেণি পর্যন্ত মাদ্রাসার শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৬৭৭ জন।
