Logo
Logo
×

বাজেট ২০২১-২২

করোনায় বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতি

ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া দেশগুলো

ভারতে ২৭ লাখ কোটি রুপির প্রণোদনা প্যাকেজ * ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি ডলার তহবিল যুক্তরাষ্ট্রে * চীন বড় অবকাঠামো প্রকল্পে কয়েকশ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে

Icon

ইকবাল হোসেন

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

করোনা মহামারি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, এটি ১৯২৯ ও ২০০৯ সালের মহামন্দার চেয়েও ভয়ংকর। করোনার প্রভাবে ২০২০ সালে কেবল চীন ছাড়া ‘অর্থনৈতিক সংকোচন’ দেখেছে বিশ্বের বাকি সব বড় অর্থনীতির দেশ। মাঝারি ও ছোট অর্থনীতির দেশগুলোও এর বাইরে নয়। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বৈশ্বিক অর্থনীতি ৪ দশমিক ৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে।

হিমশিম খেতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের মতো বড় অর্থনীতির দেশগুলোকেও। করোনার প্রথম ঢেউ ধসিয়ে দিয়েছে ভারতের অর্থনীতি। ২০২০-২১ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে দেশটিতে রেকর্ড ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ জিডিপি সংকোচন হয়েছে। মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় ভারত এখন বিশ্বে সবচেয়ে বিপর্যস্ত।

এমন পরিস্থিতে গত দেড় বছরে অর্থনীতিতে করোনার অভিঘাত মোকাবিলায় নানা পদক্ষেপ নিয়েছে দেশগুলো। কোটি কোটি ডলার প্রণোদনা দিচ্ছে। ব্যয় করছে স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান বৃদ্ধিসহ নানা খাতে। গত বছরের মার্চের পর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত তারা ওইসব প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।

ভারত : করোনার ধাক্কা সামাল দিতে ২৭ লাখ কোটি রুপির প্যাকেজ ঘোষণা করেছে ভারত। যার একটি বড় অংশ স্বাস্থ্য পরিষেবা, সামাজিক নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান ও আর্থিক খাতে ব্যয় হচ্ছে। দেশটিতে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য স্বাস্থ্য খাতে মোট ২ লাখ ২৩ হাজার কোটি রুপি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৩৭ শতাংশ বেশি। গত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে মোট বরাদ্দ ছিল ৯৪ হাজার ৪৫২ কোটি রুপি। করোনার টিকা বা প্রতিষেধকের জন্য ৩৫ হাজার কোটি রুপি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র : করোনায় বিশ্বে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে আক্রান্ত ও মৃত্যু সবার উপরে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কোভিড-১৯ অতিমারি মোকাবিলায় ইতোমধ্যে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের রিলিফ প্যাকেজ বা ত্রাণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। অবকাঠামো খাতের জন্য আরও দুই লাখ কোটি ডলারের বড় পরিকল্পনা নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। এই দুটি কর্মসূচি ও পরিকল্পনার সুফল মিলবে অর্থনীতিতে।

চীন : এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেকে সবচেয়ে দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার পেয়েছে চীন। দেশটির অর্থনীতি আবারও চলছে আগের গতিতে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ আগের মতো প্রভাবশালীরূপেই ফিরবে চীন। অর্থনীতিকে ঠিক রাখতে চীন সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন, বড় অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলোর জন্য কয়েকশ বিলিয়ন ডলার আলাদা করে রেখেছিল দেশটি। এছাড়া জনগণকে খরচে উৎসাহিত করতে নগদ প্রণোদনাও দেওয়া হয়। এসব পদক্ষেপের স্পষ্ট অগ্রগতি এখন দৃশ্যমান।

যুক্তরাজ্য : করোনার ধাক্কা মোকাবিলায় ৫ হাজার ৪৫০ কোটি ডলারের জরুরি আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করে যুক্তরাজ্য। জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা এবং সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লোকসান মেটাতে এই টাকা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি খুচরা ব্যবসা এবং পর্যটন শিল্পের জন্য ৪০ হাজার কোটি ডলারের ঋণ তহবিলও রাখা হয়েছে।

জার্মানি : সব ধরনের কোম্পানি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ১১০ কোটি ডলারের ঋণ দিয়েছে জার্মান সরকার। দুর্যোগকালীন এই পরিস্থিতি সামাল দিতে মোট ৮০ হাজার কোটি ডলারের তহবিল রয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কোম্পানিগুলোর আর্থিক সচ্ছলতা বজায় রাখতে দেওয়া হচ্ছে করছাড়। দেরিতে ঋণ পরিশোধে গুনতে হবে না জরিমানা। প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটকে দেওয়া হয়েছে সাড়ে ১৪ কোটি ইউরো।

স্পেন : অর্থনৈতিক ধাক্কা সামাল দিতে ২১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের তহবিল ঘোষণা করেছে স্পেন। ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানি, কর্মী আর আর্থিক অসচ্ছলদের সুরক্ষায় এই অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে।

ফ্রান্স : প্রায় পাঁচ হাজার কোটি ডলার সহায়তা তহবিলের প্রকল্প হাতে নিয়েছে ফ্রান্স সরকার। এর বড় একটি অংশ দেওয়া হচ্ছে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে।

কানাডা : ৫ হাজার ৬৪০ কোটি ডলারের সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। এই অর্থ দেশটির জিডিপির তিন শতাংশ। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে করছাড়, কর্মীদের বেতন, সমাজে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ব্যয় হবে এই অর্থ।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম