‘মাস্টার কি’তে নিমিষেই গাড়ি হাওয়া
ঢাকায় ২০টি গাড়ি চোর চক্র সক্রিয়
চোরাই গাড়ি প্রথমে নেয়া হয় না’গঞ্জ ও গাজীপুরে, ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিলে দ্রুত সেবা
নুরুল আমিন
প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০১৯, ০১:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
যাত্রী সেজে, আবার কখনও ‘মাস্টার কি’ (বিশেষ চাবি) দিয়ে পার্কিং ও রাস্তার পাশে রাখা গাড়ির লক ভেঙে চোখের পলকেই গাড়ি নিয়ে সটকে পড়ছে চোর চক্রের সদস্যরা।
রাজধানী থেকে প্রতিমাসে এভাবেই চুরি হচ্ছে ২০-২৫টি গাড়ি। ঢাকায় অঞ্চলভিত্তিক অন্তত ২০টি চক্র সক্রিয়। মোটরসাইকেল, সিএনজি, প্রাইভেটকার ও পিকআপ চুরির ক্ষেত্রে আলাদা চক্র রয়েছে।
থানা পুলিশ, মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মাঝে-মধ্যে এ চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার ও গাড়ি উদ্ধার করলেও বন্ধ হচ্ছে না চুরির ঘটনা। পুলিশ বলছে, গাড়ি চুরি রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি চালকদের সর্তক থাকতে হবে। এছাড়া গাড়িতে ডিজিটাল ডিভাইস ‘ট্রেকার’ ও নম্বর-প্লেট লাগাতে হবে।
সূত্র বলছে, মিরপুর, বাড্ডা, মাটিকাটা, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, শাহবাগ, মিটফোর্ড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তরা কামরাঙ্গীচরকেন্দ্রিক অন্তত ২০টি চক্র গাড়ি চুরির সঙ্গে জড়িত।
এদের মধ্যে সাগর গ্রুপ, রুহুল গ্রুপ, টিপু গ্রুপ, রনি গ্রুপ, কানা শহিদ গ্রুপ, বাবুল গ্রুপ, অলি গ্রুপ, মুজিবর গ্রুপ, সলিম গ্রুপ, নজরুল গ্রুপ, ইলিয়াস গ্রুপ, শামীম গ্রুপ, জামাল ও ছোট জামাল গ্রুপ অন্যতম।
চোরাই গাড়িগুলো প্রথমে নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে রাখা হয়। পরে সেগুলো প্রত্যন্ত গ্রাম ও মফস্বল শহরে নিয়ে বিক্রি করে দেয়া হয়।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গাড়ি চোর প্রতিরোধ টিমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) নিশাত রহমান মিথুন যুগান্তরকে বলেছেন, ঢাকায় এলাকাভিত্তিক অনেকগুলো চক্র সক্রিয়। কয়েকটি চক্রকে গ্রেফতার ও বেশকিছু গাড়ি উদ্ধার করা হলেও বাকিগুলোকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
ডিবির গাড়ি চোর প্রতিরোধ একাধিক টিমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিএনজি চুরির টার্গেট নিয়ে এই চক্রের সদস্যরা প্রথমে যাত্রী সেজে গাড়ি ভাড়া করে। রাস্তায় কোনো এক অজুহাতে চালককে গাড়ি থেকে নামিয়ে সিএনজিটি চুরি করে পালায়।
মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার ও পিকআপ চুরির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় ‘মাস্টার কি’ বা বিশেষ চাবি। এই চাবি দিয়ে ১-৫ মিনিটে যে কোনো লক ভেঙে গাড়ি নিয়ে পালায় তারা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধির সঙ্গে চালকদের সচেতনতা বেশি দরকার। প্রতিটি গাড়ির সঙ্গে ডিজিটাল ট্রেকার বাধ্যতামূলক করা ও ডিজিটাল নম্বর-প্লেট করার তাগিদ দেন ডিবির কর্মকর্তারা।
তারা মনে করেন, গাড়িতে ডিজিটাল নম্বর প্লেট ও ট্রেকার থাকলে দ্রুত গাড়ি উদ্ধার ও চোরদের গ্রেফতার সম্ভব। এছাড়া চুরির সঙ্গে সঙ্গে জরুরি সেবা-৯৯৯-এ ফোন দেয়ার অনুরোধ জানান কর্মকর্তারা। ডিবি কর্মকর্তারা বলেছেন, বিভিন্ন সময় এই চক্রের হোতাসহ অনেককে গ্রেফতার করা হলেও পরে জামিনে বেরিয়ে তারা ফের চুরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে।
ডিবি জানায়, প্রতি গ্রুপে এক বা একাধিক ইনফরমার থাকে। সে এলাকাভিত্তিক টার্গেট ঠিক করে। তার তথ্যের ভিত্তিতে অপর গ্রুপ গাড়ি চুরি করে রাজধানীর উপকণ্ঠে নিয়ে আসে।
তৃতীয় গ্রুপটি না’গঞ্জ ও গাজীপুরে নিয়ে লুকিয়ে রাখে গাড়ি। অপর গ্রুপটি বিক্রির কাজে নিয়োজিত। দামি ব্রান্ডের চোরাই মোটরসাইকেলও ৫০-৭০ হাজারে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর মিরপুর, ডেমরা ও শ্যামপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর গাড়ি চোর চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পশ্চিম বিভাগের গাড়ি চোর প্রতিরোধ টিম।
এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেটকার, একটি সিএনজি ও ৮টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। পুলিশ বলছে, গ্রেফতার লোকমান হোসেন (২৫), নিয়ামুল শরিফ (২৫), শেখ জামাল (২২), আব্দুর রসিদ মৃধা (২০), রাব্বি সিকদার (১৯), শাহ্ আলম (৫২) ও মাহাবুব সিকদার (৪৭) সবাই এখন জামিনে মুক্ত।
এর আগে গত বছরের ২২ মে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১১টি চোরাই মোটরসাইকেল, দুটি সিএনজিসহ ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করে ডিএমপির গোয়েন্দা উত্তর বিভাগ গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম।
সম্প্রতি অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানের বাইকার শাহনাজ আক্তার পুতুলের স্কুটি ছিনতাইয়ের পর বিষয়টি আবারও সামনে আসে। তবে ছিনতাইয়ের ১২ ঘণ্টার মধ্যেই ওই স্কুটিটি উদ্ধার ও ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অনেকের অভিযোগ, বিশেষ ক্ষেত্রে পুলিশকে তৎপর দেখা গেলেও সবসময় তা দেখা যায় না।