সুঁই-সিরিঞ্জে ভয়ঙ্কর নেশা
অর্ধশতাধিক স্পটে চলে প্যাথেডিন গ্রহণ * শেয়ারিংয়ে ছড়াচ্ছে সংক্রামক ব্যাধি * আসক্তদের মরতে হয় ধুঁকে ধুঁকে
ইকবাল হাসান ফরিদ
প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সুঁই-সিরিঞ্জে ভয়ঙ্কর নেশা। এ নেশার পরিণতিও ভয়ঙ্কর। আসক্তদের ধুঁকে ধুঁকে মরতে হয়। বাঁচার কোনো পথ নেই। এই পদ্ধতিতে মাদক গ্রহণকারীদের কেউ বহন করছে এইচআইভি জীবাণু, কেউ ভুগছে নানা জটিল রোগে। রাজধানীর পুরান ঢাকায় রাস্তার পাশে কিংবা অলিগলিতে দেখা যায় এ ধরনের আসক্তদের। সুঁইয়ের মাধ্যমে প্যাথেডিনসহ নানা ধরনের নেশাজাত ইনজেকশন গ্রহণ করায় তাদের হাতে-পায়ে দগদগে ঘা।
শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান জানান, গত বছর বিভিন্ন ফুটপাত থেকে কম হলেও ১৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে; যাদের অধিকাংশই মাদকসেবী। মৃতদেহগুলো আঞ্জুমানের মাধ্যমে দাফন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ভাসমান মাদকসেবীর সংখ্যা এতটাই বাড়ছে যে এদের তাড়ানোও যাচ্ছে না।’
থানা সূত্র জানায়, রাজধানীর চানখাঁরপুল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আশপাশ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, হাইকোর্ট এলাকায় অন্তত দুই শতাধিক ভাসমান মাদকসেবী রয়েছে। এদের অধিকাংশের শরীরে দগদগে ঘা। সুঁইয়ের মাধ্যমে একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়ায় রোগজীবাণু। এসব সুঁই একাধিকজন ব্যবহার করে। রাজধানীর অন্তত অর্ধশতাধিক স্পটে চলে সুঁই-সিরিঞ্জের ভয়ঙ্কর নেশা। প্যাথেডিন ও লুপিজেসিক ইনজেকশন নেশাখোরদের প্রধান আকর্ষণ। কারণ অন্য মাদকের চেয়ে এসবের দাম কম। এজন্য ছিন্নমূল মাদকাসক্তদের এ নেশার প্রবণতা বেশি।
শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে এক রিকশাচালক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি গেটের পাশের ফুটপাতে রিকশা থামিয়ে সিটের নিচ থেকে সুঁই-সিরিঞ্জ বের করে। এরপর একটি প্যাথেডিন অ্যাম্পুুুল ভেঙে তা থেকে ইনজেকশন নিয়ে নিজের শিরায় পুশ করে। বাকি অর্ধেক পাশে থাকা আরেকজনকে দেয়। একই সুঁই দিয়ে ওই ব্যক্তি নিজের শরীরে পুশ করে ইনজেকশনের বাকিটুকু। কথা বলে জানা গেল রিকশাচালকের নাম আবদুল জলিল। তার সঙ্গে যিনি প্যাথেডিন শেয়ার করলেন তার নাম কাছিম আলী।
প্যাথেডিনের অর্ধশতাধিক স্পট : অনুসন্ধানে জানা গেছে শিরায় পুশ করার জন্য ব্যবহৃত প্যাথেডিন পুরান ঢাকার নয়াবাজার, আনন্দবাজার, মিটফোর্ড, কসাইটুলী, ঢাকা মেডিকেল এলাকা, চানখাঁরপুল, নিউ মার্কেটের ১ নম্বর গেট, মিরপুরের তালতলা, তেজগাঁও রেললাইন, সিটি ধলপুর, ফতুল্লা, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ, হাজারীবাগ পার্ক, লালবাগ ও পোস্তাগোলা ব্রিজসহ রাজধানীর অর্ধশতাধিক স্পটে এখন সহজেই পাওয়া যায়। চানখাঁরপুল-ঢাকা মেডিকেল এলাকায় ১০-১২ জন ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা রয়েছে। পোশাক-পরিচ্ছদে টোকাই বা ছিন্নমূল মনে হলেও এসব মাদক বিক্রেতা লাখ লাখ টাকার মালিক।
দাদনে মেলে প্যাথেডিন : প্যাথেডিন আসক্ত কালাম, জহির, আলম ও সালাম। এরা ভাঙারি কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। আলম জানায়, চানখাঁরপুল এলাকায় কয়েকজন ভাঙারি ব্যবসায়ী ব্যবসার আড়ালে প্যাথেডিন বিক্রি করে। তারা আগাম প্যাথেডিন দেয়। পরে ভাঙারির বিনিময়ে টোকাইরা মাদকের দাম পরিশোধ করে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের অবস্থান জিরো টলারেন্সে। প্রতিদিনই রাজধানীর ৪৯ থানা এলাকায় মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। মাদকসহ গ্রেফতার করা হচ্ছে মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ঢাকা মেট্রো অঞ্চলের পরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমা যুগান্তরকে বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান শুরু করেছি। গ্রেফতার করা হচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীদের। ফুটপাতের যারা মাদকের সঙ্গে জড়িত তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। কেউ রেহাই পাবে না।
