Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

বিষের ভেতর বসবাস

বাতাস পানিতে ক্ষতিকর সিসা-ক্রোমিয়াম

শ্বাস-প্রশ্বাসে ও খাবারের মাধ্যমে এসব বিষ মানবদেহে মিশে ক্যান্সারসহ নানা মরণব্যাধি সৃষ্টি করছে

Icon

রাশেদ রাব্বি

প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাতাস পানিতে ক্ষতিকর সিসা-ক্রোমিয়াম

সিসা ও ক্রোমিয়ামের মতো মারাত্মক ক্ষতিকর বিষের ভেতর বসবাস করছে দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলের মানুষ। বিভিন্ন সময় নানা প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মাটিতে, পানিতে এমনকি বাতাসে রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত এসব বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতি।

শ্বাস-প্রশ্বাসে ও খাবারের মাধ্যমে এসব বিষ মানবদেহে প্রবেশ করে ক্যান্সারসহ নানা মরণব্যাধি সৃষ্টি করছে।

সম্প্রতি সরকারের জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের আওতাধীন ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির (এনএফএসএল) গবেষণায় গাভীর খাবার, খোলা ও প্যাকেটজাত দুধ এবং দইয়ে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক, সিসা, ক্রোমিয়ামসহ নানা ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, খাবারের মাধ্যমে শরীরে যদি মাত্রাতিরিক্ত সিসা, ক্রোমিয়াম ও কীটনাশক প্রবেশ করে তাহলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ সাময়িক বা স্থায়ীভাবে অকেজো হয়ে পড়তে পারে। কিডনি বিকল বা ক্যান্সারের মতো রোগ হয়ে মৃত্যু ঘটাতে পারে। খাদ্যে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের মাধ্যমে মানবদেহ অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধি হয়ে উঠবে। ফলে একটা পর্যায়ে রোগ প্রতিরোধে অ্যান্টিবায়োটিক আর কার্যকর হবে না।

এ ছাড়া ইতিপূর্বে কয়েকটি গবেষণায় বাংলাদেশে বিশেষ করে রাজধানীতে পরিবেশ দূষণের কারণে বাতাসে দেখা দিয়েছিল সিসাসহ ভারি ধাতব পদার্থের আধিক্য। খাবার পানি, মাছ ও পোলট্রির মুরগিতেও পাওয়া যায় বিষাক্ত ধাতুর মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি।

সিসা একটি উজ্জ্বল রূপালী ধাতু। এটি শুষ্ক বায়ুমণ্ডলে সামান্য নীল। তবে বাতাসের সংস্পর্শে ক্রমান্বয়ে ফ্যাকাসে হতে শুরু করে। সিসা প্রধানত শিল্পে ব্যবহৃত হয়। এটি খাদ্যদ্রব্য, ধূমপান, পানীয় জল এবং নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যাদির মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। তবে বর্তমানে পেট্রল ও পেইন্ট, প্লাম্বিং পাইপ, স্টোরেজ ব্যাটারি, খেলনা ইত্যাদির মাধ্যমেও ছড়াচ্ছে।

এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর যানবাহনের দাহ্য জ্বালানি থেকে প্রায় দুই লাখ টন সিসা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে। এর কিছু অংশ উদ্ভিদ গ্রহণ করে, কিছু অংশ মাটিতে পতিত হয়, কিছু পানির মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে থাকে, যা পরবর্তীতে মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণীদেহে প্রবেশ করে। সিসা উদ্ভিদের জীবন চক্রকে প্রভাবিত করে। উদ্ভিদের অক্সিজেন উৎপাদনকে বাধাগ্রস্ত করে, সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত করে।

সাধারণত ভারি ধাতুগুলো খনিজ উপাদান হিসেবে মাটিতে ক্ষেত্রবিশেষে পানিতে পাওয়া যায়। এদের মধ্যে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, টাইটেনিয়াম, ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, কোবাল্ট, নিকেল, কপার, জিংক, ভ্যানাডিয়াম অন্যতম। এর মধ্যে আয়রন থাকে সর্বোচ্চ ৪২ হাজার পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন), ক্যালসিয়াম এক হাজার ২০০ পিপিএম এবং অন্যান্য পদার্থ থাকে পাঁচ হাজার পিপিএমের কম পরিমাণে। এসব পদার্থ পানি, বিভিন্ন দূষিত বায়ু এবং খাদ্যদ্রব্যের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে।

‘বৈশ্বিক বায়ু পরিস্থিতি-২০১৭’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্বে বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ভারত ও বাংলাদেশে। এই দূষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. একেএম সামসুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, সিসা শরীরে এন্টি অক্সাইডের যে জৈবিক ক্রিয়া আছে তা ঘটতে দেয় না।

ফলে সরাসরি দেহের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সিসার কারণে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় অস্থিমজ্জা এবং লিভার ও কিডনি। অস্থিমজ্জা নষ্ট হওয়াতে রক্তের লোহিত কণিকা উৎপন্ন হওয়ায় বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি রক্তশূন্যতায় ভোগে। তা ছাড়াও শ্বেতকণিকা উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে ঘন ঘন রোগের সংক্রমণ দেখা দেয়। এমনকি সিসার কারণে ক্যান্সার হওয়া অস্বাভাবিক নয়।

ক্রোমিয়াম প্রসঙ্গে অধ্যাপক শাসুজ্জামান বলেন, ক্রোমিয়াম ট্রাইভ্যালেন্ট হিসেবে শরীরে প্রবেশ করলেও হেক্স ভ্যালেন্ট হিসেবে শরীরের কোষ ধ্বংসকারী রাসায়নিকমূলক উৎপন্ন করে। এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় গ্রুপ-১ লেভেলের হিউম্যান কারসিনোজেন। পোলট্র্রি ফিডে এগুলো ব্যবহার করলে প্রাণীর শরীরের বিভিন্ন অংশের কোষ নষ্ট হয়ে ওজন বাড়ে এবং দেখতে স্বাস্থ্যবান দেখায়। এ কারণে বেশি দামে এসব প্রাণী বিক্রি করা যায়। তিনি বলেন, এ পরিস্থিতি থেকে দ্রুত উত্তরণ না ঘটলে মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হবে। দেশের মানুষের স্বাস্থ্য বিপর্যয় শুরু হলে প্রতিরোধ, প্রতিকারে কোনো উপায় থাকবে না।

ক্যান্সার

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম