ভারতীয় পেঁয়াজে ৩৫ ভাগ শুল্কারোপের সুপারিশ
ইয়াসিন রহমান
প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
৫ মাস পর দেশের বাজারে এলো ভারতের পেঁয়াজ। রোববার দেশের সবক’টি স্থলবন্দর দিয়ে একযোগে পেঁয়াজভর্তি ট্রাক আসতে শুরু করেছে। ভারতীয় পেঁয়াজের এ ধাক্কায় আরও কমতে শুরু করেছে দেশি পেঁয়াজের দাম। তবে দেশের কৃষক যাতে বঞ্চিত না হন সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে পেঁয়াজ আমদানিতে টনপ্রতি ৩০-৩৫ ভাগ শুল্ক আরোপের সুপারিশ করেছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, কৃষক বাঁচাতে অবশ্যই শুল্ক আরোপ করতে হবে। তবে স্বল্প সময়ের জন্য এর পরিমাণ ৫-১০ শতাংশ হতে পারে। এতে একদিকে কৃষক বাঁচবে, অন্যদিকে ভোক্তাও অল্প টাকায় পণ্যটি কিনতে পারবেন। পেঁয়াজ আমদানিকারকরা বলছেন, দেশের বাজারে ভারতের পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে। তবে ভারত সরকার এখনও মূল্য ঠিক করেনি। দু’দেশের ব্যবাসীয়দের সমঝোতার ভিত্তিতে প্রতি টন ২৫০-৩০০ ডলারে আনা হচ্ছে। এতে দেশের বাজারে কমতে শুরু করেছে পণ্যটির দাম। ঢাকার একাধিক খুচরা বাজারে রোববার দেশি পেঁয়াজ ৩৫-৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। শনিবারও ছিল ৪০-৫০ টাকা। তবে রোববার রাজধানীর নয়াবাজার ও শান্তিনগর কাঁচাবাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি ছিল ৪০-৪৫ টাকা।
এদিকে ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রতি একরে পেঁয়াজ চাষে কৃষকের ব্যয় হয় ৫৮ হাজার ১৬৭ টাকা। প্রতি একরে উৎপাদন হয় ৪ হাজার ৮৫৮ কেজি। সে হিসাবে প্রতি কেজি পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যয় ১১ টাকা ৯৭ পয়সা। কৃষকের কাক্সিক্ষত মূল্য বিবেচনা করা হয়েছে ২০ টাকা। তাই কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে সরকার বিদ্যমান শুল্ক কাঠামো অনুযায়ী ব্যবস্থা হিসেবে- কাস্টম ডিউটি, সম্পূরক শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করতে পারে। এছাড়া সুপারিশে বলা হয়েছে, আমদানি মূল্য ১৭১ ডলারের সঙ্গে শূন্য শুল্ক ও অন্যান্য ব্যয় যোগ করলে প্রতি কেজি পেঁয়াজের আমদানি মূল্য দাঁড়ায় ১৪ টাকা ৮৯ পয়সা। যা স্থানীয় কৃষকের কাক্সিক্ষত মূল্য প্রতি কেজিতে ২০ টাকার কম। তাই সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ হারে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ ও আমদানিসংক্রান্ত অন্যান্য খরচ যোগ করা হলে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজের মূল্য হবে ২২ টাকা ২৪ পয়সা। যদি ৩০ শতাংশ হারে আরোপ করা হয়, তবে আমদানি মূল্য হবে ১৯ টাকা ৩০ পয়সা। তাই পেঁয়াজ চাষীদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে ৩০-৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা যেতে পারে। প্রতি বছর ফেব্র“য়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত এ শুল্ক বহাল রাখা যেতে পারে। এছাড়া পেঁয়াজ অত্যাবশকীয় হওয়ায় এ পণ্যের সরবরাহ যেন বিঘ্নিত না হয়, সে কারণে ভারতসহ অন্যান্য দেশের পেঁয়াজ উৎপাদন, রফতানি মূল্যসহ সরবরাহ পরিস্থিতির ওপর নিবিড়ভাবে নজরদারি করতে হবে।
জানতে চাইলে কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যয় ১২-১৮ টাকা। কৃষককে যদি ২৫ শতাংশ লাভ করতে দেয়া হয়, তাহলে কৃষকের বিক্রি মূল্য হয় কেজিতে ২৪-২৫ টাকা। তবে ৩০-৩৫ টাকা হারে যত দিন দাম থাকে সেক্ষেত্রে ততদিন পর্যন্ত শুল্ক আরোপের মতো ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন নেই। যদি দাম তার নিচে নেমে আসে তখন ৫-১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা যেতে পারে। তাও স্বল্প সময়ের জন্য। তবে ৩০-৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ বেশি মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, এ বিষয়গুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে কৃষক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তাদের যাতে লাভ থাকে, সে অনুযায়ী অল্প সময়ের জন্য শুল্ক আরোপ করা যেতে পারে। রোববার সচিবালয় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, পেঁয়াজের দামে যে কোনো মূল্যে সরকার কৃষকদের সন্তুষ্ট রাখতে চায়। আমরা আগামী ৩ বছরের মধ্যে পেঁয়াজ রফতানি করতে চাই।
আমরা সে লক্ষ্যে আমাদের কৃষকদের সন্তুষ্ট রাখব। ভারত পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে, এদিকে দেশের পেঁয়াজও উঠানো শুরু করেছেন কৃষকরা, এমন পরিস্থিতিতে পেঁয়াজ আমদানিতে কোনো নির্দেশনা দিচ্ছেন কিনা? জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের কৃষকদের আগে স্যাটিসফাই (সন্তুষ্ট) করতে হবে। না হলে আমরা কোনোদিন পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হব না। আমরা লক্ষ্য রাখব, কৃষক যেন ২০- ২৫ টাকা পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারেন। যখনই দেখবে এ দামটা তারা পাচ্ছেন না। তখনই আমরা যে কোনোভাবে সেটা রক্ষায় যা যা করা দরকার করব। রাজধানীর পাইকারি আড়ত শ্যামবাজারের পেঁয়াজ আমদানিকারক শংকর চন্দ্র ঘোষ যুগান্তরকে বলেন, সব সীমান্ত দিয়ে পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। ফলে দেশের বাজারে দামও কমতে শুরু করেছে। তবে আমাদের কৃষকদের কথাও মাথায় রাখতে হবে। দাম আরও কমবে। এতে কৃষক তার পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য পাবেন না। তাই এক থেকে দেড় মাসের জন্য ৫-১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা যেতে পারে। তা না হলে কৃষক আত্মহত্যা করবেন।
এদিকে কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, আমাদের দেশে দুই মৌসুমে পেঁয়াজ আসে। একটি ডিসেম্বর থেকে মার্চ ও আরেকটি মার্চ থেকে এপ্রিল। সেক্ষেত্রে ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাসের পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায় না। মার্চ-এপ্রিলের পেঁয়াজ করা যায়। আর এ পেঁয়াজ দেশের চাহিদার ৭০ শতাংশ পূরণ করে। কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে সরকার পরিকল্পনা করছে।
এদিকে শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে রোববার থেকে শুরু হয়েছে পেঁয়াজ আমদানি। তবে ঠিক কি পরিমাণ পেঁয়াজের এলসি খোলা হয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। ভারতের মহদিপুর স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশেনের সাধারণ সম্পাদক শ্রী ভূপতি মণ্ডল জানান, মহদিপুর স্থলবন্দরে প্রায় ২শ’ ট্রাক পেঁয়াজ এসেছে। এগুলো রোববার ও সোমবার সোনামসজিদ স্থলবন্দরে প্রবেশ করবে।
বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি জানান, রোববার বিকালে ৩ ট্রাকে ৯১ টন পেঁয়াজ আনা হয়েছে। এর মধ্যে হামিদ এন্টারপ্রাইজ ৬৩ টন এবং মাহি অ্যান্ড মাহিবি এন্টারপ্রাইজ ২৮ টন পেঁয়াজ এনেছে। প্রতি টন আমদানি হচ্ছে ৩০৫ ডলারে।
বেনাপোল কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার আকরাম হোসেন জানান, আমদানিকৃত পেঁয়াজ দ্রুত ছাড়করণের জন্য মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শূন্য ডিউটি দিয়ে এ পেঁয়াজ বেনাপোল বন্দর দিয়ে খালাস দেয়া হয়েছে। ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে ৫৩ ট্রাক পেঁয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় আছে।
