করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হওয়ার কারণে বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা ছয় হাজারের কাছাকাছি। ইতিমধ্যে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কিছুটা হলেও বাংলাদেশে দৃশ্যমান। তবে এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে দেশে বিদ্যমান স্বাস্থ্যসেবার দুর্বল ব্যবস্থাপনায় এটা মোকাবেলায় বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘করোনাভাইরাস (কেভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব : চ্যালেঞ্জস ও কনসার্নস ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় স্বাস্থ্যসেবা অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. বেনজীর আহমেদ করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বাংলাদেশের জন্য ১৪টি চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেন। সেমিনারে বায়োটেকনোলজি রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. শরীফ আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

অধ্যাপক ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, এটি যদি একবার ছড়িয়ে পরে, তবে আমাদের পক্ষে তা নিরাময় করা প্রায় দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে। এটা সম্পর্কে মানুষের মাঝে ব্যাপক সচেতনতামূলক কর্মসূচি পরিচালনা করতে হবে। ভাইরাস মোকাবেলায় পর্যাপ্ত বাজেট প্রস্তুত করার উপদেশ দিয়ে তিনি বলেন, এ ভাইরাস মোকাবেলায় আমাদের পর্যাপ্ত বাজেটের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে আপৎকালীন কোনো সংকটের সম্মুখীন হতে না হয়। ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এ মূহূর্তে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ দেয়া উচিত। এক্ষেত্রে গ্রীষ্মের ছুটি কিংবা রোজার ছুটি এগিয়ে নিয়ে আসা যায়।

সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের আহ্বান শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের : বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাময়িক বন্ধ অথবা গ্রীষ্মকালীন ছুটি নির্ধারিত সময়ের আগে কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। এর সংক্রমণ রোধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাময়িক বন্ধের জন্য ভিসির কাছে আবেদন করেছে ঢাবি শিক্ষক সমিতি। রোববার সন্ধ্যায় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের আহ্বান জানান তারা।

ঢাবি বন্ধের আবেদন শিক্ষক সমিতির : রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাময়িক বন্ধের জন্য ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামন বরাবর আবেদন করেছে ঢাবি শিক্ষক সমিতি। এ বিষয়ে আজ সোমবার বেলা ১০টায় আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত এ আবেদনপত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস সাময়িক বন্ধ ঘোষণা অথবা গ্রীষ্মকালীন ছুটি নির্ধারিত সময়ের আগে কার্যকর করে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়।

শেকৃবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন : শেকৃবি প্রতিনিধি জানান, রোববার শেকৃবি সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন অনুষদের বিভিন্ন লেভেলের ক্লাস প্রতিনিধিরা-সিআর উপস্থিত ছিলেন। দেশের করোনা পরিস্থিতির আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চপর্যায়ের এক সভায় আপাতত ৩টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শেকৃবি ভিসি অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, আপাতত সব পরীক্ষা স্থগিত করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মসজিদে তাবলিগ জামাতের জমায়েতে নিয়ন্ত্রণ আরোপসহ ক্যাম্পাসে সব গণজমায়েত স্থগিত করা হয়েছে। বিদেশ ফেরত শিক্ষকদের ক্ষেত্রে তাদের নিজ উদ্যোগে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।